চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়দিন ধরে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন ছিল বেশ উৎসব মুখর। আর গতকাল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যবনিকা ঘটে সব উত্তাপের। তবে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা থেকে যে উৎসবের আমেজ ছিল ক্রীড়াঙ্গনে, গতকাল ভোটের দিন সকালে সেটাতে খানিকটা ভাটা পড়ে যায়। তার কারণ হিসেবে জানা গেছে একটি স্লিপ। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক যিনি গত তিনবার সহ টানা চারবারের সাধারণ সম্পাদক সেই আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেছিলেন এবারের নির্বাচন হবে একেবারেই উন্মুক্ত। তিনি কাউকে সমর্থন করবেন না। কিন্তু ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই গুজবের ডালপালা মেলছিল স্টেডিয়াম পাড়ায়। সাধারণ সম্পাদক সাহেব একটি প্যানেল প্রস্তত করে ফেলেছেন। তবে বিভিন্ন সভায় তিনি তা স্বীকার করেননি। তিনি সব সময় বলেছেন নির্বাচন উন্মুক্ত। গতকাল নির্বাচনের দিন ভোরে ঘুম ভাঙল একাধিক প্রার্থীর ফোনে। তারা বললেন ভাই গভীর রাতে কাউন্সিলরদের হাতে একটি স্লিপ চলে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছিল না। তবে মোবাইলে একে একে আসতে থাকে সেই স্লিপ। যেখানে একটি পরিস্কার প্যানেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর সে স্লিপটি নাকি পাঠানো হয়েছে আগের দিন গভীর রাতে। গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে যখন ভোট গণনা চলছিল তখন ভাঙতে শুরু করে ভুল। আগের রাতে পাঠানো সে স্লিপের সাথে ভোটের একেবারে হুবুহু মিল। স্লিপে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারাই কেবল জিতেছে। ভোটও পড়েছে সেভাবে।
তবে সে তালিকায় সে প্যানেলের বাইরে থেকে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে কূলে উঠে এসেছেন দুজন। তারা হলেন এনামুল হক এবং সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর। আর স্লিপে যাদের নাম ছিল তাদের মধ্য থেকে জিততে পারেননি সাবেক প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু এবং দিদারুল আলম মাসুম। স্লিপে এ দু’জনের নাম ছিল যথাক্রমে ৭ এবং ৯ নম্বরে। এ দুজন পাননি প্যানেলভিত্তিক ভোট। ফলে মঞ্জু ১০৭ এবং মাসুম ১০৮ ভোট পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি। আর স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে বাজিমাত করেছেন এনাম এবং তানসীর। ১২৮ ভোট পেয়ে দশম হয়েছেন তানসীর আর ১২২ ভোট পেয়ে ১২তম হয়েছেন এনাম। এনামুল হক চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে বেশ পরিচিত মুখ। দীর্ঘ দিন ধরে আছেন এই আঙ্গিনায়। আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাব গ্রীনের প্রতিনিধি হয়ে তিনি আছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। গতবার উপ নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি জিততে পারেননি। সেবারও তিনি স্রোতের প্রতিকূলে নির্বাচন করেছিলেন। তবে এবারে সফল হলেন। অপরদিকে সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন। এবারই প্রথম কাউন্সিলর হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র থেকে। তবে ক্রীড়াঙ্গনে এসে তার যে অংশগ্রহণ সেটা নজর কেড়েছিল সবার। তাই সংগত কারণে অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল বয়সে তরুণ এই সংগঠকের নাম থাকবে প্যানেলে। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে তানসীর তার যোগ্যতা আর দক্ষতা দিয়ে ঠিকই প্যানেলের বাইরে থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কাউন্সিলরদের উপর রাখা আস্থার প্রতিদান পেয়েছেন এই তরুণ। তবে হেভিওয়েট হয়েও এবং প্যানেলে থেকেও তরী পার হতে পারলেন না ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু এবং দিদারুল আলম মাসুম। দীর্ঘ দিন পর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই নির্বাচন আশা জাগিয়েছিল সবার মধ্যে। বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে তার প্রমাণ মেলে।
সবার আশা ছিল এই অংগনের যিনি অভিভাবক তিনি কারো পক্ষ নেবেন না। উন্মুক্ত করে দেবেন ময়দান। তিনি বার বার সেটা বলেছিলেনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কথা রাখতে পারলেন না। বিশেষ করে যারা সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন তাদের আশা ছিল অন্তত এই পদের নির্বাচনটা তিনি উন্মুক্ত রাখবেন। কিন্তু সেটাও হলো না। তিনি ঠিকই প্যানেল দিলেন। তাও গভীর রাতে। আর সেভাবে ভোট পেলেন প্রার্থীরা। ব্যতিক্রম কেবল এনাম আর তানসীর।আরো কয়েকজন কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। বিষয়টা দু’একদিন আগে আঁচ করতে পারলে হয়তো আরো কয়েকজন প্যানেলের বাইরে থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারতেন। তাই নিজেরা হতাশ হলেও এনামুল হক এবং তানসীরকে কুর্নিশ করছেন তাদের বীরত্বগাঁথার জন্য।