আমি খুব বেদনা নিয়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি… অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই স্রষ্টার প্রতি ‘গ্রেটিচিউড‘ প্রদর্শন করার প্রবণতা নাই বললেই চলে। অথচ স্রষ্টা আমাদেরকে তার দয়ার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছেন। প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে স্রষ্টা আসলে আমাদের আগলে রাখেন। বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন। আমাদের উচিত স্রষ্টার প্রতিটি অনুগ্রহের জন্য তার প্রতি গ্রেটিচিউট প্রদর্শন করা।
কিছু মানুষের বন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব কাটানোর জন্য আজ আমি দুটি গল্প বলবো। দুটি ঘটনাই জীবন থেকে নেয়া সত্যি ঘটনা। কোন এক রাতের কথা বলছি। গভীর রাত। আমার বাসার সবাই ঘুমে অচেতন। ওয়াশরুম থেকে বের হতে গিয়ে অসাবধানতার জন্যই হয়তো আমি হঠাৎ পা পিছলে ধপাস করে ওয়াশরুমের ফ্লোরে পড়ে যাই। ওয়াশরুমের দরজা লক। কেউ এসে আমাকে সাহায্য করবে সে উপায় নাই। হঠাৎ নজর গেলো বাম পায়ের দিকে। বাম পা তখন প্রচণ্ড ব্যথায় টনটন করছে। পায়ের দিকে তাকিয়ে আমার কেন জানি মনে হলো… বাম পা কনফার্ম ফ্রেকচারড হয়েছে। ভাবতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়লাম ভীষণ। আসন্ন দুর্ভোগের আশংকায় কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। দুই হাত দিয়ে বাম পায়ের বিভিন্ন জায়গায় চাপ দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বোঝার চেষ্টা করলাম। কেন জানি মনে হলো, স্রষ্টা হয়তো আমাকে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
সকাল বেলা আমি যখন বিছানা থেকে নেমে দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ালাম… বারবার মনে হচ্ছিলো… আমি ব্লেসড। শুধুমাত্র স্রষ্টার করুণায় আমি আজ একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছি। প্রাসঙ্গিকভাবে আরও একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। অধিকাংশ মানুষই ইন্টারনেটের কল্যাণে এই ঘটনা জানেন। একজন মটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে আমি মানুষকে ইনস্পায়ার করি, মোটিভেট করি। কিন্তু এই ঘটনাটা আমাকেই মোটিভেট করে ভীষণ। এটা হলো টেনিসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তী খেলোয়াড় ‘আর্থার অ্যাশ‘ কে নিয়ে। আমেরিকান এই টেনিস তারকা উইম্বলডন কিংবদন্তী ‘আর্থার অ্যাশ‘ ১৯৮৩ সালে তার হার্ট সার্জারির সময় ইনফেকটেড ব্লাড গ্রহণ করার কারণে এইডস এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী ‘আর্থার প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের বিভিন্ন আবেগঘন চিঠিপত্র পেতেন। সেরকম এক আবেগময় চিঠিতে এক ভক্ত লিখেছিলেন, ‘আর্থার, সৃষ্টিকর্তার উপর আমার রাগ হয়, এরকম একটা খারাপ রোগ দেবার জন্য সৃষ্টিকর্তা তোমাকেই কেন বেছে নিলেন?’ এই চিঠির জবাবে আর্থার যা লিখেছিলেন, সেটা আজ ইতিহাস।
আর্থার লিখেছিলেন: এই পৃথিবীতে আনুমানিক ৫ কোটি বাচ্চা খেলোয়াড় হবার স্বপ্ন নিয়ে টেনিস খেলা শুরু করে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ৫০ লক্ষ বাচ্চা টেনিস খেলাটা রপ্ত করতে পারে। বাকীরা ঝরে যায়। ওই ৫০ লক্ষ থেকে শুধুমাত্র ৫ লক্ষ খেলোয়াড় প্রফেশনাল টেনিস খেলতে আসে। এর মধ্য থেকে শুধুমাত্র ৫০ হাজার খেলোয়াড় প্রতিযোগিতামূলক টেনিস খেলবার সুযোগ পায়, যার মধ্য থেকে মাত্র ৫ হাজার জন ‘গ্রান্ড স্ল্যাম‘ খেলবার সুযোগ অর্জন করে। উইম্বলডনের কোর্ট পর্যন্ত পৌছাতে পারে শুধুমাত্র ৫০ জন। ৪ জন খেলে সেমিফাইনাল, এবং সর্বশেষ ২ জন খেলে ফাইনাল।
যেদিন আমি উইম্বলডনের ফাইনাল জিতে কাপটা উঁচু করে ধরি… সেদিনতো আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলিনি… ‘শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়াবার জন্য ৫ কোটি মানুষের মধ্য থেকে আপনি কেন আমাকেই বেছে নিলেন?’ আজ যখন সৃষ্টিকর্তা আমাকে কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করছেন, তখন আমি উনাকে কী করে জিজ্ঞেস করি… ‘কষ্ট দেবার জন্য আপনি কেন আমাকেই বেছে নিলেন?’ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্রষ্টার প্রতি যে গ্রেটিচিউট তিনি দেখিয়ে গেছেন, স্রষ্টার প্রতি যে অবিচল আস্থা তিনি রেখে গেছেন… সময়ের ধুলো তা কণামাত্রও মলিন করতে পারেনি। বরং আমার মতো হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন জনম জনম।
আসুন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি অর্জন, প্রতিটি সুন্দর সময়ের জন্য, সুস্থতার প্রতিটি অনুভবের জন্য আমরা স্রষ্টার প্রতি গ্রেটিচিউট প্রদর্শন করি। দুইহাত জোর করে চূড়ান্ত বিনয়ের সাথে বলি… ‘থ্যাংকস গড, ফর এভরিথিং।‘