চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আসছে পতেঙ্গার ৫ লাখ মানুষ। সরকারি–বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) মডেলের আওতায় চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–৬ (কাস্টমস মোড়) এরিয়ার কাজ পতেঙ্গা এলাকায় শুরু হতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের স্বনামখ্যাত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মারুবিনী কর্পোরেশন। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) (জিটুজি) প্রক্রিয়ায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় (সম্ভাব্য) ধরা হয়েছে ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
প্রকল্প মেয়াদ ৫ বছর। ২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর ২০২৮। এর মধ্যে ক্যাচমেন্টে–১ এর উত্তর ও পশ্চিমে ক্যাচমেট–৫ ও ক্যাচমেন্ট–৬ হওয়ায় হালিশহরে ১৬৩ একর ভূমির উপর আরও এই দুইটি ক্যাচমেন্ট পরিশোধনাগার স্থাপনের চিন্তা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থায় পানি পরিশোধনের পর আলাদা হয়ে যাওয়া বর্জ্য মিথেন গ্যাস তৈরি করে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভাবছেন তারা। এই ব্যাপারে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, স্যানিটেশন সুবিধাদি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের দক্ষিণাঞ্চল পতেঙ্গা এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–৬ (কাস্টমস মোড়) এরিয়ার কাজ পতেঙ্গা এলাকায় শুরু হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ২৮.৫ বর্গ কি.মি. পতেঙ্গা এলাকার ৫ লাখ মানুষকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। যা মহানগর এলাকার (১৫৫ বর্গ কি:মি🙂 প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ।
প্রকল্প কার্যক্রমে রয়েছে দৈনিক ৫ কোটি লিটার ক্ষমতার পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ ও ৬৮ কিলোমিটার পয়ঃপাইপ লাইন নির্মাণ, ১টি লো–লিপ্ট পাম্প স্টেশন নির্মাণ এবং প্রায় ১১ হাজার বাসাবাড়িতে সংযোগ প্রদান।
আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপ হিসাবে প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা করে পিপিপি চুক্তি প্রণয়নের জন্য ট্রান্সজেকশন এডভাইজর (Transaction Advisor) নিয়োগ করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতি অনুসরণে নির্বাচিত বাংলাদেশ–ইতালি–ভারত দেশভিত্তিক প্রতিষ্ঠান GTCBL-IQT-Innovest-BETSJV এর সাথে আজ সোমবার চট্টগ্রাম ওয়াসার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা করে পিপিপি চুক্তি প্রণয়নের পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনে কেবিনেট কমিটি ফর ইকোনোমিক এফেয়ারস (সিসিইএ) এর নিকট উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ ও সকল সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নগরের জন্য আধুনিক ও বাস্তবসম্মত স্যুয়ারেজের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো নগরকে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আনা হবে। প্রাথমিক ক্যাচমেন্টের কাজ শেষ হলে ২০ লাখ গ্রাহক এর সুবিধাভোগী হবেন। নাগরিকদের সহায়তা পেলে স্যুয়ারেজের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। তবে নগরের জন্য আধুনিক ও বাস্তবসম্মত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ছিল অবহেলিত। নগরের বর্জ্য খাল–নালা হয়ে পড়ছে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় সংস্থাটি নগরের জন্য স্যুয়ারেজ (পয়ঃনিষ্কাশন) প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করেছে। ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে চলবে পুরো প্রকল্পের কাজ।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগর স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। বাসা–বাড়ির বর্জ্য ও পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগার হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। ফলে নগরে কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি দুই ধাপে কাজ করবে। এর মধ্যে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমন্টের আওতায় (এসটিপি) রান্না ঘর, গোসল এবং অন্যটি ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশন (এফএসটিপির) আওতায় টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের সহায়তায় গৃহস্থালি ও গোসলের ব্যবহার করা পানি সরাসরি ক্যাচমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে।
সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে নগরের ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় পানি পরিশোধনাগার বসানো হবে।
তবে কারিগরি যাচাই–বাছাইয়ের সময় দেখা যায়, নগরের কিছু অলি–গলি ছোট ও সরু হওয়ায় নগরের ৩০ এলাকায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন স্থাপনের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশন (এফএসটিপির) আওতায় টয়লেটের বর্জ্যসমূহ ভ্যাকুয়াম ট্রাক ও গাড়িতে করে পরিশোধনাগারে নেয়া হবে।
এক্ষেত্রে নগরের হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমিতে ক্যাচমেন্টে–১ এর পরিশোধনাগার এরিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে এবং পুরোদমে কাজ চলছে।
মালয়েশিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান জেবিও এরিনকো ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের কার্যাদেশ পায়। এই ক্যাচমেন্ট এরিয়াকে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুটি চীনা ও একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র দেওয়া হয়েছে। তারাও কাজ করছে।
এছাড়া ক্যাচমেন্ট–২ (কালুরঘাট) এরিয়া ও ক্যাচমেন্ট–৪ (পূর্ব বাকলিয়ার) অংশের কারিগরি দিক নিয়ে কাজ করছে জাইকা। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ যৌথভাবে বাংলাদেশ ও চীন এবং আরেকটির কাজ করছে চীনের প্রতিষ্ঠান।
ক্যাচমেন্ট–১ এর কাজ হলে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ লাখ নাগরিককে স্যুয়ারেজের সুবিধা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১০ লাখ এসটিপি (সরাসরি পাইপলাইন) এবং ১০ লাখ ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের (বর্জ্য সংগ্রহ) আওতায় আসবে। এর মধ্যে এসটিপি দৈনিক ১০ কোটি লিটার এবং এফএসটিপিতে ৩০০ টন পানি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ক্যাচমেট–৩ (ফতেয়াবাদ) এরিয়ায় কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কাজ চলছে। এছাড়া ক্যাচমেট–৫ (উত্তর কাট্টলী) এফডিএর মাধ্যমে কারিগরি সহায়তার কাজ চলছে।