স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে যে সেলুন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে চুল-দাঁড়ি কাটার দোকান তথা সেলুনে লেগেছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। নগরীর প্রতিটা মোড়ে এখন দেখা মেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেলুন। ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাছে এসব সেলুন যেন বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড। এই হাল আমলের ট্রেন্ডের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে পাড়া কিংবা হাটবাজারের গাছের নিচে বসা ভ্রাম্যমাণ সেলুন। এসব সেলুনের নরসুন্দরদের এখন আর আগের মতো ব্যস্ততা নেই। বর্তমানে কেবল নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোকজনই তাদের ভ্রাম্যমান সেলুনে চুল দাঁড়ি কাটতে আসেন।
গতকাল সরেজমিনে নগরীর ঝাউতলা আমবাগান এলাকায় এমন কয়েকটি সেলুনের দেখা মিলেছে। ঝাউতলা বাজারের অদূরে বিশাল একটি গাছের সাথে রশি বেঁধে বানানো হয়েছে স্ট্যান্ড। সেই স্ট্যান্ডে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চুল দাঁড়ি কাটার সরাঞ্জাম। মাথার ওপর খোলা আকাশ। রোদ-বৃষ্টি ও নানা ঝড়-ঝঞ্চা সহ্য করে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। এদেরই একজন ষাটোর্ধ্ব আসলাম শেখ। তিনি আটকে পড়া পাকিস্তানী বিহারী। সেই কৈশোর বয়সে বাবার হাত ধরে সেলুনের কাজের হাতেখড়ি শুরু।
আসলাম শেখ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি ১৯৭৮ সাল থেকে চুল-দাঁড়ি কাটার কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে পুলিশ লাইনে ছোট একটি মোড়া ও বক্স নিয়ে অস্থায়ীভাবে কাজ করতাম। পরবর্তীতে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাজ শুরু করি। একটা সময় ঝাউতলায় এসে একটি চেয়ার নিয়ে বসি পড়ি। আমার এখানে সেলুনের দোকানের তুলনায় খরচ ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কম। সেলুনে চুল কাটা ৬০ টাকা, আমি নিচ্ছি ৩৫-৪০ টাকা। দোকানে দাঁড়ি কাটা ৪০ টাকা, আমি নিচ্ছি ২০ টাকা। তবে এখন আমার কাজ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এখন যে পরিমাণ আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘরে আমার বৃদ্ধা মা প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশয়ী। স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ জনের পরিবার। মাঝখানে করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুদিন অন্য পেশায় কাজ করেছি।
আমবাগান এলাকার নরসুন্দর সুকোমল শীল বলেন, বাপ দাদার পেশা চাইলে তো ছাড়তে পারি না। এই একটা কাজই ছোটবেলা থেকে শিখেছি। বাবা সব সময় বলতো হাতের কাজ শিখ, তাহলে অন্তত কিছু করে খেতে পারবি। বাবার রেখে যাওয়া সেই সরাঞ্জাম নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছি। তবে বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। শ্রমজীবী মানুষরা আমাদের একমাত্র কাস্টমার। এক সময় সব বয়সী মানুষ লাইন ধরে চুল কাটতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই। যে আয় হয়, তা দিয়েই কোনোমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়া ও লোহাগাড়ার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে
পরবর্তী নিবন্ধসন্তান জন্মের দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা দিলেন মা