আজ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সাল। ২০১১ সালের এ দিনে বাংলার রুমি সৈয়দ আহমদুল হক আমাদের ছেড়ে চলে যান। আজ আমরা তাঁর স্মৃতিচারণ করছি।
১৯৮৫ সালে আমি কলিকাতা National Library A Shot History of Chittagong by Syed Ahmadul Hoq বইটির সন্ধান পাই। Slip দিয়ে অপেক্ষা করলাম। অনেকক্ষণ পর Slip ফেরৎ আসল। Slip এর Too britle seal দেয়া, যার অর্থ ভংগুর। তার মান হলো সে বইটা আমি আর দেখতে পাব না। নিজের জেলার ইতিহাস, ইংরেজি ভাষায় প্রণীত প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ দেখতে পেলাম না। স্যারের কাছে বইটা আছে কিনা জানতে চাইলাম তিনি সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। অথচ বইটির লেখক একজন শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত ব্যক্তি এবং স্যারের আপন বেয়াই। অর্থাৎ স্যারের একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে ছৈয়দ আহমদুল হকের জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ মাহমুদুল হকের সাথে। এ প্রসঙ্গে স্যার আমাকে দুটো ঘটনা বলেন : একটা হলো ১৯৫০ এর দশকে Pakistan Observer পত্রিকায় স্যার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর ছৈয়দ আহমদুল হক (তখন রংপুরের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন) তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্যারও নাছোড়বান্দা, তিনিও প্রতিবাদের উত্তর দেন। পত্রিকা প্রতিবাদ এবং উত্তর সবই প্রকাশ করেন। জীবনের সূচনালগ্নে ভবিষ্যৎ বেয়াইর সাথে বুদ্ধিভিত্তিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
আর একটি ঘটনা হলো স্যারের মেয়ে রহিমা যখন বিবাহের উপযুক্ত হন, তখন তার বিয়ের জন্য বহু প্রস্তাব আসে। স্যার আত্মীয়স্বজন ও ভাইদের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করেন। প্রতিটি পাত্রই উপযুক্ত। অতএব সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবই কঠিন হয়ে পড়ল। তখন স্যারের ভাইয়েরা সৈয়দ মাহমদুল হককে পছন্দ করার পেছনে প্রধান কারণ হলো তিনি সৈয়দ পরিবারের সন্তান। বিদ্যাশিক্ষা, ধনসম্পদ, মান-মর্যাদা সবই অর্জন করা যায়। কিন্তু বংশীয় মর্যাদা অর্জন করা যায় না। ভাইদের এসব যুক্তির উপর নির্ভর করে স্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। স্যারের বেয়াই ব্রিটিশ শাসনামলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে B.A. (Hons) ও M.A । তাছাড়া প্রথম জীবনে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে মুন্সেফ ছিলেন। বৈরুত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় গ.অ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হলে প্রশাসন ক্যাডার যোগদান করে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা হতে অবসর গ্রহণ করেন।
ছৈয়দ আহমদুল হক সাহেব তরীকতের লোক, মাইজভাণ্ডারী তরিকতপন্থী। তাঁর বাসায় প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে মাহফিল হয়। বহু লোকের সমাগম হয়। তিনি আল্লামা রুমী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। স্যার আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘‘আমার বেয়াইর মতো ফার্সি জানা লোক আজকের দিনে আর আমাদের দেশে নাই।’’ ড. আবদুল করিমকে তিনি রুমি সোসাইটির সভাপতি করেছিলেন। আমার মনে হয় আমরণ তিনি সে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রুমী সোসাইটি বুদ্ধিজীবিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। চার বছরের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে আমার প্রবল আগ্রহ হলো ছৈয়দ আহমদুল হক সাহেবকে দেখার। অবশেষে সুযোগ পেয়ে গেলাম। আমার পরম স্নেহভাজন আল্লামা গিয়াসউদ্দিন তালুকদারের সাথে ছৈয়দ সাহেবের হৃদ্যতা রয়েছে। তাঁরা একই এলাকার লোক। তালুকদার সাহেবকে আমি আমার বাসনার কথা বললাম; সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে লালখান বাজার পাহাড়ের উপরে ‘রুহ আফজা’ কুঠিতে নিয়ে গেলেন। দেখার সাথে সাথে আমার মনে হলো আমি একজন বৃদ্ধ জ্ঞান তাপসের দরবারে এসেছি। তবে তাঁকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয় তা আমার জানা ছিল না। তিনি আমাদেরকে অনেক বেশি সম্মান করলেন; আপ্যায়ন করলেন এবং তাঁর গাড়িতে করে আমাদের বাসায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। এত শরীফ, ভদ্র, জ্ঞানতাপস চট্টগ্রামে আছে তা জেনে বিস্মিত হলাম। আমার মত বহু মূর্খ প্রফেসর আছে, যারা মনে করে প্রফেসরদের বাইরে কোন জ্ঞানচর্চা হয় না। অতঃপর আরও ৪/৫ বার আমি তাঁর বাসায় গিয়েছি। তাঁর কাছ থেকে A Short History of Chittagong বইটি এক দিনের জন্য ধার নিয়ে গিয়ে ফটোকপি করে পড়ে শেষ করলাম। পরের বার গিয়ে বইটি পুনঃমুদ্রণের জন্য আবেদন করলাম। তিনি বললেন ৫৮ বছর আগের লেখা বই; তথ্যের বিবর্তন হয়েছে; দেশ স্বাধীন হয়েছে; কেউ যদি সম্পাদনা করে পুনঃমুদ্রণের ভার নেন তবে তিনি অর্থায়নে সম্মত আছেন। দেশের ও জ্ঞান চর্চার স্বার্থে আমি রাজি হলাম। অতঃপর যতদূর সম্ভব upto date করে একটি সম্পাদকীয় লিখে আল্লামা রুমী সোসাইটি হতে বইটি প্রকাশ করলাম ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রুফ দেখা থেকে ছাপানো এবং বাঁধাই শেষ করে মুদ্রিত সকল কপি তাঁর বাসায় আমি নিজ হাতে পৌঁছিয়ে দিলাম। আমি ভাল করে বুঝতে পারলাম ড. আবদুল করিম কেমন মানুষের সাথে আ্তীয়তা করেছেন। রুমির দর্শন ও মসনবীর বহু ভাষ্য লিখে তিনি বহু গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরানের হাফিজ, সাদীসহ বহু কবি ও দার্শনিকের মাজার জিয়ারত করেছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাফসানজানিও তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন।
আমাকে একবার সৈয়দ আহমদুল হক সাহেব তাদের মাসিক অথবা বিশেষ অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেছিল। সে অনুষ্ঠানে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। আমাকেও বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করা হলো। আমি তো সূফি দর্শন ভালো করে বুঝি না। তাই বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সূফিদের অবদান শীর্ষক একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলাম। উক্ত অনুষ্ঠানে অনেকে আমার কথার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আমি ওই সকল জ্ঞানীদের কাছে কৃতজ্ঞ। উক্ত অনুষ্ঠানে সৈয়দ আহমদুল হক আমার অনেক প্রশংসা করলেন এবং তার পাশে বসিয়ে রাতের খাওয়ার গ্রহণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর আচরণে আমি মুগ্ধ। তিনি শিক্ষক-অধ্যাপকদের খুবই সম্মান করতেন। এ ধরনের আচরণ আমি আর কোথাও দেখিনি।
তিনি একদিন আমার সাথে দিল্লীতে নিযামুদ্দীন আউলিয়ার গল্প করছিলেন এবং প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন যে তার দাদা মাওলানা সৈয়দ তোজাম্মেল আলী নিযামুদ্দীনের দরগাহে গিয়েছিল। জিয়ারত করার পর সেখানে সংরক্ষিত রেকর্ড বইয়ে হাদিয়া দিয়ে নিজের নাতি অর্থাৎ সৈয়দ আহমদুল হককে যেন আল্লাহ বিচারক এবং অধ্যাপক করে সেজন্য বিশেষ দোয়া করেছেন এবং খাদেমদেরকে দোয়া করার অনুরোধও করেছেন। উনার ভাষ্য মতে সৈয়দ আহমদুল হক চট্টগ্রাম কলেজে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং পরবর্তীকালে মুন্সেফও হয়েছিলেন। সবচেয়ে অবাক কান্ড হচ্ছে সৈয়দ আহমদুল হক দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিল্লী গিয়ে নিযামুদ্দীন আউলিয়ার দরগাহের যে রেকর্ড বই নিজে দেখে এসেছেন। দাদার প্রতি তার ভক্তি ছিল খুব বেশি। তিনি তার প্রণীত A Short History of Chittagong গ্রন্থটি তার দাদার নামে উৎসর্গ করেছেন এবং উৎসর্গপত্রে লিখেছেন- Dedicate to the memory of mygrand father pirane Pir Maulana Syed Tajumml Ali, Qaddsllan Sirrajul Aziz. উৎসর্গ পত্রের শব্দ চয়নে বোঝা যাচ্ছে তিনি তার দাদাকে তেমন ভক্তি করতেন।
সৈয়দ আহমদুল হক ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। এ বিষয়ে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। সারা জীবন কাজ করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। কখনও মাদ্রাসায় পড়েছেন বলে জানি না। কিন্তু কি করে তিনি ফার্সি ভাষার মতো একটি বিশাল ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলা মাতৃভাষা, ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়া। কিন্তু যখন দেখতাম তিনি রবীন্দ্র-নজরুলের সাথে শেক্সপেয়ার-মিল্টন এবং একই সাথে হাফিজ-সাদী-রুমীর সমান্তরাল আলোচনা করছেন তখন বিশ্বাস করা অসম্ভব হয়ে যেত আসলে তার লেখাপড়া কোন লাইনের। কারণ তিন ভাষা ও সাহিত্য সমদক্ষতাসম্পন্ন সৈয়দ আহমদুল হক ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। সেজন্য তিনি আমার কাছে একজন সত্যিকারের জ্ঞানী হিসেবে শ্রদ্ধেয়।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের বার্ষিক সম্মেলন ঢাকার বাইরে করার জন্য নির্বাহী পরিষদের সভায় আলোচনা চলাকালীন সময়ে লক্ষ্য করলাম কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। কার্যকরী কমিটির সামান্য সদস্য হিসেবে আমি কক্সবাজারে সম্মেলন করার জন্য প্রস্তাব করলাম। অনেক আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনার পর প্রস্তাব গৃহীত হল। দায় আমার। কিন্তু আমার মাথার উপর ছাতা ছিল আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল হক। তার সাথে এ ব্যাপারে একাধিকবার কক্সবাজার যাই। একদিন কক্সবাজার থেকে এসে সৈয়দ আহমদুল হকের কাছে এমনে বেড়াতে যাই। তিনি আমাকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জিজ্ঞেস করলেন ু আমার চেহারা মলিন কেন? আমি বললাম হয়তো কক্সবাজারে ভ্রমণজনিত কারণে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন ু কেন কক্সবাজার গেছি? আমি তখন ইতিহাস পরিষদের সম্মেলনের পুরো কাহিনি বললাম। তখন তিনি বললেন, আমি আপনার জন্য কি করতে পারি? তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে তিনি আমার মানসম্মান রক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় অনুদান দিতে চাচ্ছেন। আমার কাছে তিনি একজন জ্ঞানী, বয়োবৃদ্ধ, অবসরপ্রাপ্ত মুরুব্বী মানুষ। তার কাছে আমার দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি বললেন, কক্সবাজারে উনাদের একটা প্রতিষ্ঠান আছে যার নাম কক্সবাজার সি ফুড। উনার ছোট ছেলে এটা দেখাশোনা করেন। বর্তমানে তিনি রেঙ্গুন রয়েছেন। বিকল্প বেলায় বাপছেলে কথা হবে। তারপর তিনি আমাকে জানাবেন আমাদের জন্য কী করতে পারবেন। অতঃপর বিদায় নিয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম। হঠাৎ ফোন বাজল। দেখলাম সৈয়দ আহমদুল হকের ফোন। সালাম-কালামের পর তিনি আমাকে জানালেন সম্মেলনে আগত অতিথিদের তিনি একবেলা আপ্যায়ন করবেন। এ অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে আমি খুবই খুশী হলাম এবং সাথে সাথে ইনাম স্যারকে সুসংবাদটি দিলাম। সৈয়দ আহমদুল হক ছাড়া আমি কাউকে স্বেচ্ছায় অনুদান দিতে দেখিনি। কক্সবাজারে ইতিহাস সম্মেলন একটি বুদ্ধিভিত্তিক কর্মকাণ্ড। কেবলমাত্র প্রকৃত জ্ঞানীরাই এ কাজে স্বেচ্ছায় অবদান রাখতে পারে।
দীওয়ানই হাফিজের প্রতি তার অগাধ ভক্তি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ছিল। তিনি বহুবার ইরানে গিয়েছেন এবং মহাকবি হাফিজের কবর জিয়ারত করেছেন। আমার কাছে তিনি একটি স্মৃতিচারণ করেছেন। তা হলো তিনি তেহরান থেকে ঢাকা ফেরার কয়েক ঘণ্টা আগে হোটেল লবীতে বসা অবস্থায় একজন ফেরিওয়ালার ডাক শুনতে পেলেন। ফেরিওয়ালা বলছেন ফাল-ই-হাফিজ, ফাল-ই-হাফিজ, ফাল-ই-হাফিজ। তখন তিনি সে অদ্ভুত ফেরিওয়ালার কাছে গিয়ে দেখলেন কিছু খাম যার মধ্যে হাফিজের ফাল রয়েছে। ইরানীদের কাছে এর বাজার রয়েছে। সৈয়দ আহমদুল হকও এক ডলার দিয়ে একটি খাম কিনে কিনলেন। হোটেল কক্ষে গিয়ে তিনি তার কাছে থাকা দীওয়ান-ই-হাফিজের সাথে সদ্য ক্রয়কৃত ফাল-ই-হাফিজ মিলিয়ে দেখলেন। সবই ঠিকঠাক আছে। ফাল-ই হাফিজের বক্তব্য হলো-‘‘তোমার জন্য তিনটি সুখবর অপেক্ষা করছে অতঃপর তোমার কষ্ট হবে। দুঃখ করনা সে কষ্ট বেশিদিন স্থায়ী হবে না।’’ এটা আবৃত্তি করতে করতে তিনি তেহরান থেকে ঢাকা আসলেন। ঢাকা বিমান বন্দরে তাঁকে বরণ করার তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে সৈয়দ মাহমুদুল হক উপস্থিত ছিলেন। পিতা-পুত্র সাধারণ রীতি মতো বিমান বন্দর হতে বাসায় আসার জন্য নিজের গাড়িতে উঠলেন। গাড়িতে পিতা-পুত্রের আলাপের মাঝে পুত্র তার পিতাকে মামলার সাফল্য, বাণিজ্যিক সফলতাসহ তিনটি সুসংবাদ দিলেন। সৈয়দ আহমদুল হক বুঝতে পারলেন এটাতো ফাল-ই-হাফিজের সাথে মিলে গেছে। অতঃপর তা হলে তার কষ্টটা কি? ২/১ দিনের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। অতঃপর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন। হাফিজের কথা শতভাগ কার্যকরী হওয়ায় তিনি খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন।
ইতোমধ্যে আমার বড় ছেলে চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল থেকে এ-লেভেলে ভাল ফলাফল করে। সে চায় ইউরোপ-আমেরিকায় পড়তে যেতে। আমি চাই সে যেন এশিয়ার বাইরে না যায়। কারণ আমরা বয়স্ক মানুষের পক্ষে ইউরোপ-আমেরিকার মতো মুক্ত সমাজে টিকে থাকা সহজ নয়। একদিন গল্প প্রসঙ্গে কথাটি আমি সৈয়দ আহমদুল হকের নিকট বললাম। তিনি আমার ছেলেকে তার কাছে নিয়ে যেতে বললো। সে মতে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে তার কাছে গেলাম মূলত দোয়ার জন্য। তিনি দীওয়ান-ই-হাফিজ নিয়ে আমার ছেলেকে খোলার জন্য বললেন। আমার ছেলে তার কথা মতো খুলল-অতঃপর তিনি তা পাঠ করে আমাদের শোনালেন। যার সারমর্ম হচ্ছে হাফিজ বলছেন, ‘‘তাকে সম্মানিত না করলে আল্লাহ অসম্মান বোধ করবেন।’’ অর্থাৎ আমার ছেলেকে আল্লাহ দ্রুত সম্মানিত করবেন। উনার বক্তব্য, ব্যাখ্যা শুনে এবং তার আতিথেয়তা গ্রহণ করে সন্তুষ্টচিত্তে আমরা ফিরে এলাম। তার কিছু দিনের মধ্যে আমার ছেলে সিঙ্গাপুর সরকারের বৃত্তি নিয়ে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে মেডিসিন পড়ার সুযোগ লাভ করেন। আমি মনে করি এসব সৈয়দ আহমদুল হকের দোয়ার ফসল।
লেখক : প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়