স্মৃতিতে মাহাতা-পাঠনীকোঠা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়

ছাবের আহমদ চৌধুরী | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রতিটি মানুষকেই সৃষ্টিকর্তা বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মহাতাপাঠনীকোঠা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে শিক্ষাই শিক্ষিত হতে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো ছাত্রছাত্রীদেরকে শুধু পুথিগত শিক্ষা নয়, দেশপ্রেম, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধূলা মানবিক গুণাবলী ইত্যাদি বিষয়েও শিক্ষিত করে একটি পরিপূর্ণ শিক্ষার্থীরূপে শিক্ষিত করে তুলে। এই আনোয়ারা উপজেলায় মাহাতাপাঠনীকোঠা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে স্কুলের দীর্ঘভবন, বিশাল খেলার মাঠ, খোলামেলা পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এইটা যেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট্ট একটি গণ্ডি থেকে বিশালতায় পদার্পণ, যা আমার হৃদয়কে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। ক্লাস নাইনে ছিলাম আমি নির্বাচিত ক্লাস ক্যাপ্টেন। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ছিল কালাম, হামিদ, শহীদ, ফজলুল কাদের, জামাল উদ্দিন, শান্তিপদ, দুলাল, প্রদীপ, রাজিয়া, রূপনা, খালেদা, রতন, বাবলা চক্রবর্তী, রনজিত, ইউনুস্‌ সহ নাম না জানা অনেকেই। আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে জামাল স্যার, আজিজ স্যার, নুর হোসেন স্যার, সুনীল স্যার, দীপক স্যার, তুষার স্যার, এস এম কালাম স্যার, প্রত্যেকেই খুব স্নেহ করতেন। স্যারদের ঋণ কখনো শোধ করার মত না। ঐ স্কুলের জমি দাতা ছিলেন পাঠনীকোঠা গ্রামের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফুল্ল চন্দ্র রুদ্র মাহাতাপাটনীকোঠা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন আতাউর রহমান খান কায়সার। আমার জন্মস্থান ওষখাইন গ্রামে আমার বড় ২বোন ওষখাইন ইউসুফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে কাছে হাই স্কুল না থাকার কারণে পড়াশুনায় অগ্রসর হতে পারে নি। বড় ভাই পরৈকোড়া নয়নতারা হাইস্কুলে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। ১৯৭৩ সালে মাহাতা পাঠনীকোঠা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মাহাতা গ্রামের এক তরুণ যুবক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কমান্ডার মোহাম্মদ ইদ্রিস এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখার যাত্রা শুরু হয়। এই মোহাম্মদ ইদ্রিস এর অবদানের কারণে ৭৪ সালে আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এরপর থেকে আমাদের ওষখাইন, শিলালিয়া, তিশরীগুজরা, পাঠনীকোটা, মাহাতা, তালসরা, পূর্ব কন্যারা, দেওতলা, খাসখামা সহ আশেপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মহাতা পাঠনীকোঠা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আনোয়ারায় ঐ স্কুলটি শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে চট্টগ্রামে পরিচিতি লাভ করে। এই পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন গ্রামে শায়িত আছেন ১৮শতকের কবি, সাধক ও ৩৬ বছর জঙ্গলে সাধনা করে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে যার নাম লেখা হযরত শাহ্‌ আলী রজা প্রকাশ কানু শাহ্‌ (রাঃ) এর মাজার শরীফ। প্রতি বছর ১৪ই জানুয়ারি ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। পরৈকোড়ায় অবস্থিত রাজা রাজবল্লভের বাড়ি, বাংলাদেশের স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্‌দৌল্লাহর বিশ্বস্থ লোক হয়েও রাজা রাজবল্লভ, মীর জাফর ও ঘষেটি বেগম সহ অনেকে সিরাজউদ্দৌল্লার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। সে রাজবল্লভের বাড়ি পরৈকোড়া গ্রামে। ১৯৭১সালে ২৬ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের দায়িত্বরত আবাসিক প্রকৌশলী মোসলেম খানের জন্ম ওষখাইন গ্রামে। জ্ঞানের আলোকে বিজ্ঞানের প্রত্যাশা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী মোহাম্মদ ইদ্রিসের প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারায় ঐতিহ্যমণ্ডিত মাহাতাপাঠনীকোঠা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালে গৌরবময় ৫০ বৎসরের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়ের চোখে বাবা ‘আইডল’
পরবর্তী নিবন্ধবেড়ে চলেছে মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ-দ্বন্দ্ব : প্রয়োজন উত্তরণ