স্মৃতিতে মহান শিক্ষা দিবস

এ.কে.এম.আবু বকর চৌধুরী | বুধবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধ ’৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ দুটি যুগে সংগ্রামমুখর দিনগুলির একটি হল ১৯৬২ এর ১৭ সেপ্টেম্বর তথা মহান শিক্ষা দিবস। এই মহান দিবস উপলক্ষে নিবেদিত আমার এই স্মৃতিচারণটি উৎসর্গ করছি মহান শহীদ বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহর এবং ২০২৪’র জুলাই৫ আগস্টে শহীদ ১৫০০ ছাত্র জনতার অমর বেদীতে।

পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান পেতে সময় লেগেছে দীর্ঘ নয় বছর (১৪ আগস্ট ’৪৭ ২৩ মার্চ ’৫৬) আর সুষ্ঠু জাতি গঠনে মৌলিক উপাদানগুলির অন্যতম একটি শিক্ষা নীতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে একটি যুগ (২৬ আগস্ট ’৫৯) তাও আবার বৈষম্যমূলক, বিতর্কিত ও বিদ্বেষপূর্ণ যা ইতিহাসে কুখ্যাত শরীফ শিক্ষা কমিশন ’৫৯ নামে খ্যাত।

কুখ্যাত শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেয়াই ছিল এর মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৬২র ৩০ জানুয়ারী করাচির ‘লাখাম হাউজ’ হতে গণতন্ত্রের মানসপুত্র অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ (২৪ এপ্রিল’ ৪৬১৪ আগস্ট ’৪৭) ও পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী (৬ সেপ্টেম্বর ৫৬১৪ অক্টোবর ’৫৭) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ধর্মঘট ও সামরিক আইন অমান্য করে রাজপথে মিছিল বের করলে পুলিশ লাটিচার্জটিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ৭ ফেব্রুয়ারি কার্জন হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (৫৮৬২) মনজুর কাদের (ঐতিহাসিক আগরতালা ষড়যন্ত্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ৬৮৬৯) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলে ছাত্র সমাজ কর্তৃক বাধাগ্রস্ত ও চরমভাবে লাঞ্ছিতসহ তার গায়ে থু থু ছিটিয়ে দেয়, ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দী ছাত্রদের নিঃশর্ত মুক্তি, হুলিয়া প্রত্যাহার, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন, বাক স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। সকল বন্দী রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের মুক্তিদান, বাংলা হরফের রদবদলের বন্ধের দাবী জানিয়ে ছাত্র সমাজ সরকারকে ৭ দিনের চরমপত্র দিলে ৩১মে বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃ বন্ধ ঘোষণা করে। মে’র প্রথম সপ্তাহের, মধ্যে আটককৃত ছাত্রদের মুক্তি দেয়া হয়। ছাত্র সমাজের দাবী পূরণে স্বৈরাচার সরকারের অনীহার প্রতিবাদে ১৬ আগষ্ট সমগ্র দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয় এবং ২৮ তারিখ পর্যন্ত ধর্মঘট ও মিছিল অব্যাহত থাকে।

দেশব্যাপী এই শিক্ষা আন্দোলনকে গতিময় করে তুলতে ৬২র ২ আগস্ট তৎকালীন ডাকসুর সহসভাপতি শ্যামা প্রসাদ ঘোষ (ধলঘাট, পটিয়া, চট্টগ্রাম নিবাসী) ও জি.এস. এনায়েতুর রহমান সহ ছাত্রলীগের শেখ ফজলুল হক মনি, কে.এম ওবায়দুর রহমান, দাদা ভাই খ্যাত সিরাজুল আলম খান, অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের মুহাম্মদ ফরহাদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ ও জুলাই ২৪র ফাস্টিস্টের অন্যতম দোসর রাশেদ খান মেনন, এন.এস.এফের (ব্যারিষ্টার) আবুল হাসনাত, আনোয়ার আনসারী খান ও মাহবুবুল হক দুলন (৬৯র ১১ দফা আন্দোলনে অন্যতম নেতা) এবং ছাত্রশক্তির রেজাউল হক সরকার ও মিজানুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

৬২র শিক্ষা আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দাবীসমূহ হল : ) শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিল, () ৩ বছরের পাশ ডিগ্রি কোর্সকে ২ বছর করা, ) দ্বাদশ শ্রেণি প্রবর্তন বন্ধকরণ, ) বর্ধিত ছাত্র বেতন ও পাঠ্য পুস্তকের মূল্য হ্রাস, ) কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ হতে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও কলা বিষয় বাদ দেয়া, ) দ্বাদশ শ্রেণির ৭টি ইংরেজি বইয়ের স্থলে ২টি করা ৭) উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগকে ডিগ্রী কলেজের সাথে পুনঃ একত্রীভূত করণ, ) জনগণের গড়পড়তা আয় অনুপাতে শিক্ষার ব্যয় হ্রাস করা, ) বন্দী ছাত্রদের মুক্তিসহ হুলিয়া ও বহিস্কারাদেশসহ রুজুকৃত মিথ্যা মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, ১০) কলেজ শিক্ষকদের মর্যাদা সি.এস.পি অফিসার পদের সমমর্যাদাকরণ ও বেতনভাতা বৃদ্ধি করণ এবং ১১) পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করে অবিলম্বে জনসংখ্যা ভিত্তিতে ন্যায্য অধিকার দেয়া।

চট্টগ্রামে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিসদ এবং স্কুল সমূহের সমন্বয়ে সর্বদলীয় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম নৈশ কলেজের জি.এস. ছাত্রলীগ নেতা এম.. মান্নানের (মন্ত্রী ৯৬০১/এমপি ৭৩৭৫ ও ৯৬০১) সভাপতিত্বে জে.এম. সেন হলে এক বিশাল ছাত্র কর্মী সমাবেশ হয়। এতে ছাত্রলীগের এম.. মান্নানকে আহ্বায়ক, ছাত্রশক্তির মুহাম্মদ হোসেন খান (অধ্যক্ষ) ও হারুনউররশীদ খানকে (এমপি ৮৮৯০) যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ছাত্রলীগের আবদুর রউফ খালেদ, আবু সালেহ (এম.এন.এ ৭০৭১/গণ পরিষদ সদস্য ৪ এপ্রিল ১৬ ডিসেম্বর ’৭২), আবুল কালাম আজাদ, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের কাজী জাফরুল ইসলাম, ... শহীদউল্লাহ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী (বাঁশী), মাহবুবুল আলম তারা (হুইপ ৯১৯৬), এন.এস.এফের কাজী এ.কে.এম. নজরুল ইসলাম ও ডা. আবু খালেদ আকরাম এবং ছাত্র শক্তির মুহাম্মদ মহসীন (কানা মহসিন খ্যাত) ও নুরুল ইসলাম (ছ নুরুল ইসলাম খ্যাত) প্রমুখকে সদস্য করে চট্টগ্রাম জেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাঁশী ও ছাত্রলীগের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সহোদর বড় ও মেজ ভাই (এরা আমার একমাত্র ফুফাত বোনের সন্তান)। এতে অবশ্য সকল কলেজের ভিপি, জিএসদেরও সদস্য করা হয়। তখন চট্টগ্রাম শহরে চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী বাণিজ্য কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ও নাইট কলেজ ছিল।

১ সেপ্টেম্বর জে.এম. সেন হলে জে এম. সেন হাই স্কুলের ছাত্রলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্কুল সমূহের সকল ছাত্রদলের সমন্বয়ের এক বিরাট সমাবেশে নুরুন্নবী চৌধুরীকে আহ্বায়ক, কাজেম আলী হাইস্কুলের এন.এস.এফর এ.কে.এম. আবু বকর চৌধুরীকে সদস্যসচিব করে মুসলিম হাইস্কুলের ছাত্রলীগ নেতা শহীদ ’৭১ আবদুর রব, কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র শক্তির নেতা শামসুল আলম চৌধুরী (নদীয়া কিপাড় খ্যাত), মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এমই স্কুলের ছাত্রলীগ নেতা ফজলুল হক সহ সকল স্কুলের ভিপি ও জিএসদের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক স্কুল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

৮সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের স্কুলসমূহের ধর্মঘট পালন এবং বিকেলে জেলা ও মাধ্যমিক স্কুল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যৌথ উদ্যোগে জে.এম.সেন হলে এক বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এম.এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালকে সাফল্যমণ্ডিত করার অঙ্গীকার করে এবং এ সভায় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী, সদস্য সচিব এ কে এম আবু বকর চৌধুরী (এই নিবন্ধকার), শহীদ ’৭১ আবদুর রব, নদীয়া কি পাড় খ্যাত সামসুল আলম চৌধুরী (বোয়ালখালী), জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে (রাউজান) জেলা কমিটিতে সদস্য হিসেবে কোঅপট্‌্‌ করা হয়। ১১ দফার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরী কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী সংযোজিত হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে সমগ্র দেশে এক ঐতিহাসিক হরতাল পালিত হয়। একে ভেঙ্গে দেয়ার হীন লক্ষে সরকারের সকল পর্যায় সহ সরকারী দল কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতাকর্মীদের সকল প্রকারের প্রচেষ্টা চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়। ঢাকাচট্টগ্রাম সহ অন্যান্য শহরগুলিতে ছাত্র সমাজের মিছিলের পর মিছিল প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ঢাকায় বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা প্রদেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ঢাকার নবাব খাজা হাসান আসকারীর গাড়ী ও ইপিআরটিসির বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের গুলিতে ঢাকায় সচিবালয়ের পাশ্ববর্তী সড়ক আবদুল গণি রোডে বাবুলমোস্তফাওয়াজিউল্লাহ নিহত হয়ে মহান একুশের শহীদ, সালামজব্বারবরকত সালাউদ্দিন প্রমুখদের সাথে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বিতীয় রক্তাক্ত ইতিহাস ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবসকে মহীয়ান করে তুলে।

সরকার শেষ পর্যন্ত সংগ্রামী ছাত্র সমাজের মোকাবেলায় পুলিশের পাশাপাশি ইপিআর বাহিনীকে লেলিয়ে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায়। লাটিচার্জকাঁদুনে গ্যাসগুলির বিনিময়ে ও বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতাকে রুখতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন (মেঅক্টোবর ’৬২) গোলাম ফারুক ও প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী (জুন ’৬২ জুন ’৬৫)মহিউদ্দিন আহমদ।

এদিন চট্টগ্রামের ষ্টেশন রোড, কোতোয়ালী থানা এলাকা, লালদীঘির মাঠসহ পার্শ্ববর্তী সড়ক, কে. সি. দে সড়ক হয়ে বক্সিরহাট পুলিশবিট, তৎকালীন চট্টগ্রাম পৌরসভার সম্মুখভাগ পর্যন্ত সড়ক ছাত্রজনতার সাথে পুলিশইপিআর বাহিনীর বারবার সংঘর্ষ হয়। লাটিচার্জ আর কাঁদুনের গ্যাসের মোকাবেলা হয় ইটপাটকেল দিয়ে প্রশাসনের মূল লক্ষ্য লালদীঘির মাঠের যেন আমাদের দখলে না যায় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ঘন ঘন আক্রমণে আমরা শেষ বেলায় দিকে জে.এম.সেন হল চত্বর দখল করতে সক্ষম হই এবং এম.. মান্নানের সভাপতিত্বে এক বিশাল ছাত্রজনতার সমাবেশে এ.এম.এম শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ হোসেন খান, হারুনউররশীদ খান, মাহবুবুল আলম তারা, .কে.এম. আবু বকর চৌধুরী প্রমুখরা বক্তৃতা করি এবং কেন্দ্রের নির্দেশানুযায়ী পরবর্তী তিনদিনব্যাপী শোক দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর এক অবর্ণনীয় শোক মিছিল বের হয়। মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, এম.. স্কুল, কাজেম আলী হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিশাল মিছিল ডাঃ খাস্তগীর সরকারী বালিকা স্কুলের মূল ফটকের সামনে এলে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল কাদের চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা জোবায়দা মুনওয়ার বেবী ফটক দিয়ে বের হয়ে মিছিলে মিশে যায় (সে তখন এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল), আমরা হতবাক হলেও আনন্দিত হয়েছি। মিছিল যখন সিটি কলেজে পৌঁছে তখন সিটি কলেজ, মুসলিম হাই স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, নন্দনকানন অপর্ণা চরণ বালিকা বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল স্কুল ও জেএমসেন স্কুলের শিক্ষার্থীতে পূর্ণ হয়ে যায়। এম.. মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বিশাল সমাবেশে আমরা অনেকে বক্তৃতা করি।

১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার আবদুল গণি রোডে পুলিশের গুলিতে বাবুলমোস্তফাওয়াহিদুল্লাহ নিহত, আহত ২৫০জন ও ২৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রামেও ৩০০ ছাত্রজনতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং পুলিশ ইপিআর সাথে সংঘর্ষে ১২৭ জন ছাত্র আহত হয়। সরকারের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের ফলে ৬২ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৬০ দিন ক্লাসসমূহ চালু ছিল, স্বৈরাচারমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশে বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ায় এবং আমাদের ধর্মঘটের কারণহেতু ১০মাস বিশ্ববিদ্যালয় অচল ছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলার ছাত্রসমাজের আন্দোলনের চাপের কাছে নত স্বীকার করে করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল কাদের চৌধুরী শরীফ শিক্ষা কমিশনের কার্যক্রম স্থগিত করে তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সকে ২ বছরে ফিরে দেয়ার কথা ঘোষণা দেন। ৬৪’র ১৫ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ঢাকা হাইকোটের তৎকালীন বিচারপতি হামদুর রহমানের নেতৃত্বে স্থগিত শরীফ শিক্ষা কমিশনের ভুলত্রুটি নিরসনে একটি কমিশন গঠন করে, রিপোর্টে কমিশনকে যথোপযুক্ত বলে রায় দেয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যে, হামদুর রহমান (নোয়ালখালী) বাঙালি হয়েও বাঙালিদের কল্যাণ চিন্তা না করায় পুরস্কারস্বরূপ পরবর্তীতে পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি (১৯৭০৭২) করা হয়েছিল, তারই নেতৃত্বে ৭১র স্বাধীনতা যুদ্ধে শক্তিশালী হানাদার বাহিনীর চরম লজ্জাস্কর পরাজয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট (২০ ডিসেম্বর ৭১ ২৬ মার্চ ৭৩) ও প্রধানমন্ত্রী (২৬ মার্চ ৭৩৭৭) এই উপমহাদেশীয় ইতিহাসের অন্যতম নরাধম জুলফিকার ভুট্টো যে কমিশন গঠন করে সব দোষ বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলে।

আজকের এই মহান শিক্ষা দিবসে ৬৩ বছর পূর্র্বে যারা এই মহান দিবসটি রচনা করেছিলেন, বন্দী হয়েছিলেন, নির্যাতন ভোগ এবং জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদেরকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি : তারা গেয়েছে তাদেরই গানদুহাতে করে গেছে তাদেরই দান/ যুগে যুগে তার নাহি পরিমাণ।

লেখক : জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমি, কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাহ