বাংলাদেশের ইতিহাসে নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক ঘটনা হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির ভাগ্যাকাশে হানাদার পাকিস্তানিদের বর্বরতার এটি একটি কালো অধ্যায়। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করেছিল। সেদিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অর্জন।
৭০ এর শেষের দিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হই। ভর্তির অব্যবহিত পরেই হলে সীট পেয়ে যাই। ৭১ এর ২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ মার্চ সন্ধ্যার মধ্যে আমাদেরকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন এবং ঐদিনই অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের মতো হল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্মরণ কালের বৃহত্তম জন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রেসকোর্স ময়দানে রওনার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু নাকি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ভাষণে তিনি কি বলবেন। বেগম মুজিব নাকি উত্তরে বলেছিলেন “তোমার সামনে জনতা, পেছনে রাইফেল, তোমার মুখে যাই আসে তাই বলবে“। আমরা যারা সভাস্থলে যেতে পারিনি, সারা বাংলায় যে যার মতো ঘরে বসে রেডিওতে ঐতিহাসিক ভাষণটি শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমরা সেদিন হতাশ হয়েছিলাম কারণ যথাসময়ে ভাষণটি প্রচার মাধ্যমে সমপ্রচার বন্ধ ছিল। জনতার রুদ্র রোষ ও চাপের মুখে রেডিও পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ পরদিন ৮মার্চ সকাল ৯ টায় ভাষণটি প্রচার করতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চের কালো রাত থেকে শ্লোগান, মিছিল ও সংগ্রাম মূখর কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল বাংলার প্রতিটি শহর, নগর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম। ২৫ মার্চের রাতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন যেটি ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগ্রামী নেতা মরহুম এম, এ হান্নান ভরাট কন্ঠে চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বারবার ঘোষণা করে যাচ্ছিলেন। নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ শহর, নগর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে–গঞ্জে বিস্তৃত হতে থাকে। এদেশীয় দুষ্কৃতিকারীদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা ২৭ মার্চ আমাদের কদলপুর গ্রামের নিকটস্থ ঊনসত্তর পাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে প্রায় ৭০ জনের মতো নিরীহ নারী পুরুষকে হত্যা করে। মানুষ জন নিজেদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ও সহায় সম্বল হারিয়ে শরনার্থী হয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে যাবার কারণে আমাদের মতো অনেকেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে দীর্ঘ ৯ মাস মানবেতর জীবনযাপন করেছি। তবে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামে–গঞ্জে এসে পৌঁছায় তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করে যেতাম। প্রথম যে দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম তারা হলেন উত্তর রাংগুনিয়ার আমিন শরীফ ও বেতাগী, রাংগুনিয়ার সুজন বড়ুয়া (উভয়ই প্রয়াত)। পরবর্তীতে কমান্ডার হাশেমের বাহিনী, কমান্ডার শফি বাহিনী, কমান্ডার কেদার বাহিনী ও কমান্ডার খায়েজ আহমদ বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমরা থাকতাম এবং তাদের খাওয়ার ব্যবস্থায় ব্যস্ত থাকতাম। যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই আমাদের কদলপুর পশ্চিম বড়ুয়া পাড়ায় লুটেরা বাহিনী হামলা চালাতে সাহস পায়নি। তবে আমরা অনেক যুবক কিশোর মুক্তিযুদ্ধের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি রাজাকারদের অবহিত করে রাজাকারের দোসর গ্রামের কুখ্যাত, ঘৃণিত ও কলংকিত ব্যক্তি অমলেন্দু বড়ুয়া। সে গ্রামে রাজাকার এনে অনেক যুবককে ঘর ছাড়া করায় আমাদের আশ্রয় কেন্দ্র হয় খৈয়াখালী গ্রামের ফৈঁয়ার বাড়ি এবং হোয়ারাপাড়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও অগ্রসার কমপ্লেক্স। রাজাকারের দোসর অমলেন্দুর প্ররোচনায় রাজাকারেরা অনেকবার আমাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছিল। একদিন আমাদের গ্রামের সুধর্মানন্দ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রসু্ততি চলছিল। অমলেন্দুর আহ্বানে সকাল নয়টার দিকে রাজাকাররা আমাদের গ্রামে ঢুকে সাতজন যুবক কিশোরকে ধরে বিহার প্রাঙ্গনে নিয়ে বেধড়ক মারধর করলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত বিভূতি বড়ুয়ার দু’টো কাঁচা দাঁত পড়ে যায়। রাজাকার কর্তৃক ধৃত ও প্রহৃত অপর ৬ জন হলেন, কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, বিধান চন্দ্র বড়ুয়া (প্রয়াত), স্বপন কুমার বড়ুয়া (প্রয়াত), অরুণ কান্তি বড়ুয়া (প্রয়াত) ও জনপ্রিয় বড়ুয়া। এদের মধ্যে সুশীল কান্তি বড়ুয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয় রাজাকারের দোসর ঘৃণ্য অমলেন্দুর ছোট ভাইয়ের অনুরোধে। তারা সেদিনের কঠিন চীবর দান সভাটি পন্ড করে দেয়, এমনকি ভিক্ষু শ্রমন যারা সেদিনের চীবর দান অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাঁদেরকে অভুক্ত অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য করে। সেই কুখ্যাত রাজাকারের দোসর অমলেন্দু এক ভোর সকালে রাজাকার নিয়ে আমাদেরকে ধরতে আসে। আমরা কিন্তু যেকোন সময় রাজাকারের উপস্থিতি মাথায় রেখে নিজ বড়িতে না থেকে পার্শ্ববর্তী অন্য এক বাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর সকালে রাজাকারদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমার গ্রামের তারামন বিবি খ্যাত প্রয়াত সুরবালা বড়ুয়া (মানিকের ভ্রাতা) আমাদেরকে ঘুম থেকে তুলে খৈয়াখালী গ্রামের দিকে চলে যেতে বলে।
তাঁর পরামর্শ মতো ধান জমির উপর দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে অনেকবার জমিতে পড়ে যাই। রাজাকারের ছোঁড়া গুলির ধোঁয়া আমাদের মাথা ও কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। রাজাকারদের লক্ষ্য স্থির না থাকার কারণে আমরা সেদিন প্রাণে বেঁচে যাই। ৭১ এর জুন থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী আধার মানিক গ্রামের হিন্দুদের ভস্মীভূত পোড়া ভিটাতে দিনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে আশেপাশের বাড়িতে কিংবা অগ্রসার কমপ্লেক্সের আশেপাশের বিভিন্ন বাড়িতে রাত কাটাতাম। সকাল দুপুরে আমরা গ্রামের আশেপাশে চলে আসতাম। দিনের বেলা এবং সকালে গরুর ঘাস কাটতে আসার ভান করে সেই তারামন বিবি খ্যাত সুরবালা বড়ুয়া আমাদের জন্য চা–নাস্তা ও দুপুরের খাবার নিয়ে আসতেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন অনেক বছর হলো কিন্তু তাঁর দুঃসাহসিক ত্যাগের কাছে আমরা ঋণী হয়ে থাকলাম। কুখ্যাত অমলেন্দুর অপর কুকীর্তি হলো ভারত প্রত্যাগত এক অসহায় পরিবারের তার চাচাতো বোনকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা সাজিয়েছিল যেখানে রাজাকার কর্তৃক ধৃত ও প্রহৃত ৬ জন ছাড়াও আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এ তথ্যগুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্য শুধু একটাই, পাঠকগণ যাতে অবরুদ্ধ সমগ্র পূর্ব বাংলার বর্বরতার চিত্র খুঁজে পান কারণ দেশের শহর, নগর, গ্রামে–গঞ্জে এর চেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক ঘটনা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ঘটেছিল যা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশ হানাদার মুক্ত হবার পরে ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসি মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসের কিছু চিহ্ন স্বচক্ষে দেখার জন্য। মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর বিজয়োল্লাসে সমগ্র এলাকা ছিল মুখরিত। দেশাত্মবোধক গান মানুষকে ক্ষণিকের জন্য দীর্ঘ ৯ মাসের বিয়োগ ব্যথা ও বিষাদ বেদনা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তারপর হৃদয় বিদারক দৃশ্য হলো, সার্কিট হাউসের চারপাশে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা কুকুর বিড়ালের চেটে খাওয়া হত্যাযজ্ঞের শিকার নিরীহ মানুষের মাথার খুলি ও হাড় গোর। বাংকারে ঢুকে দেখতে পেলাম, সম্ভবত ধর্ষণকৃত মা–বোনদের পরিধেয় বস্ত্রের অবশিষ্টাংশ। সার্কিট হাউসের বাইরে স্থাপন করা ছিল মানুষ হনন করার যন্ত্র বৈদ্যুতিক চেয়ার যেখানে নিরীহ মানুষদের বসিয়ে সুইস টিপে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। উল্লেখ্য যে, চেয়ারটা পাকিস্তানি বর্বরতা ও নৃশংসতার চিহ্ন হিসেবে বাংলাদেশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
২৮ ডিসেম্বর আমার শহীদ পিতা প্রেমলাল বড়ুয়া কর্মস্থল মির্জাপুর চা বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যোগে সকাল ৭টায়। তখন যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশে রেল বা সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। হয়তো বা যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করার লক্ষে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন রেল সেতু, সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়েছিল। চট্টগ্রাম শহর থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে দীর্ঘ ৭–৮ মাইল পথ পায়ে হেঁটে অন্য একটি ট্রেনে করে কুমিল্লা পৌছাতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। উপায়ন্তর না দেখে কুমিল্লাতে একটি হোটেলে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। পরদিন সকালে কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কোম্পানিগঞ্জ হয়ে শায়েস্তাগঞ্জের দিকে যাওয়ার পথে তিতাস নদীসহ বেশকয়েকটা নদী ফেরিতে পার হই। নদীতে অনেক বেওয়ারিশ লাশ ভাসতে দেখে পাকসেনাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন খুঁজে পাই। সাতগাঁও স্টেশন সংলগ্ন সিলেটগামী সড়কে নেমে সন্ধ্যায় কিভাবে মির্জাপুর যাবো তাই ভাবছিলাম। গাড়ির অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় মির্জাপুর চা বাগানের একটা ট্রাক্টর পেয়ে যাই। চালক চিনতে পেরে আমাকে গাড়িতে তুলে নিল। সন্ধ্যার দিকে মির্জাপুরে আমাদের কোয়ার্টারে পৌঁছে যাই। চালকের মুখে পাকসেনা কর্তৃক অন্য চারজন সহকর্মীর সাথে আমার বাবাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই। আমার বাবাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকৃত ৩০ লক্ষ শহীদের কাতারে মিশে গিয়েছিল। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলখানায় ঘুরে ঘুরে বাবার খোঁজ পেতে ব্যর্থ হয়ে জানুয়ারি ০৫ তারিখ ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম ফিরে আসি। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি মৌলভী বাজার জেল থেকে বাবর আলীকে আলাদা করে নেওয়ার পর পাকসেনা কর্তৃক গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। বেঁচে যাওয়া বাবর আলীর সাথে একই কক্ষে থাকা অন্য চারজন কর্মকর্তা হলেন– আমার পিতা শহীদ প্রেমলাল বড়ুয়া, শহীদ অঘোর চন্দ্র ভট্টাচার্য, শহীদ ডাঃ রাখাল চন্দ্র দাশ ও শহীদ নলিনী চক্রবর্তী। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধ যদি আমাদের গৌরব, স্বাধীনতার ত্যাগ আমাদের জন্য সুতীব্র বেদনাও বটে।
পরাজিত পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া ছাড়া পাকিস্তান সরকার তথা ভুট্টোর কাছে আর কোন পথ খোলা ছিল না। মুক্তি দিয়ে ভুট্টো নিজেই রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী পি আই এর একটি বিমান ৮জানুয়ারি ‘৭২ সকাল ৭টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বৃটিশ কমেট জেটের একটি বিমান ১০ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দিল্লী বিমান বন্দরে অবতরণ করে। ভারতীয় প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা দেবার পর একই দিন বেলা ১.৩০ মিনিট সময়ে বঙ্গবন্ধুর বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে এক আবেগঘন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে বঙ্গবন্ধু লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশ রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছলেন। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে হর্ষোৎফুল্ল জনতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ১২ জানুয়ারি ৭২ এ বঙ্গবন্ধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণের পর তাঁর সামনে ছিল জাতি গঠনের আরেকটি যুদ্ধ। ববঙ্গবন্ধু দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনঃগঠিত করে সমৃদ্ধি ও সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য ও কলংকজনক ঘটনা হলো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো রাত্রিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের দোসর কর্তৃক বিশ্ব নন্দিত বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ড। বঙ্গবন্ধুর শহীদী আত্মদান কোটি জনতার কন্ঠে আজও উচ্চারিত হচ্ছে– ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ











