চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কীর্তিগাথা এখন নগরবাসীর মুখে মুখে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। একটার পর একটা প্রশংসনীয় কাজ করে আলোচনার তুঙ্গে অবস্থান করছেন তিনি। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর অভাবনীয় সব কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আমরা ইতোপূর্বে তাঁর সম্পর্কে সম্পাদকীয়তে লিখেছি এবং অভিনন্দন জানিয়েছি কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য। ‘খেলার মাঠে মেলা নয়’ ঘোষণা দিয়ে বসে থাকেননি, বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়ামসহ খেলার মাঠগুলোতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আর কোনো মেলা হবে না। এগুলো খেলাধুলার জন্যই উন্মুক্ত রাখা হবে। মাঠে অবৈধ স্থাপনা থাকলে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। তবে অন্য খোলা মাঠে মেলার আয়োজন বন্ধ থাকবে না। চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে যে সরকারি জায়গা উদ্ধার করেছে, সেখানে সব মেলার আয়োজন করা হবে।’ দীর্ঘদিনের বেদখলে থাকা খেলার মাঠ রক্ষায় নিয়েছেন কঠোর পদক্ষেপ। খেলার মাঠ থেকে তাড়িয়েছেন সব ধরনের মেলা। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন খেলার মাঠের আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা। এছাড়া অনেকের হম্বিতম্বি ও রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উদ্ধার করেছেন বেদখল হওয়া সরকারি শতকোটি টাকার সম্পদ।
এছাড়া ‘শিশু স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় মায়ের দুধের বিকল্প কিছুই নেই’–এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ‘মাতৃক্রোড়’র উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। নারী সেবা প্রত্যাশী যারা শিশু সন্তান নিয়ে জেলা প্রশাসনে আসেন তারা অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে ‘মাতৃক্রোড়’–এ বসে শিশুদেরকে বুকের দুধ পান করানোর পাশাপাশি তাদের ডায়াপার ও পোশাকসামগ্রী পরিবর্তন করাতে পারছেন। ব্রেস্টফিডিং কর্নারের পাশে মহিলা–পুরুষের জন্য আলাদাভাবে বেসিনসহ মোট ৪টি টয়লেট ও ৪টি ইউরিনাল তৈরি করা হয়েছে।
পর্যটন সুবিধা প্রদানেও জেলা প্রশাসক কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, পাহাড়, নদী, সমুদ্র ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। এর জনপ্রিয়তা পর্যটকদের কাছে দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া ফৌজদারহাটে অবস্থিত ডিসি পার্কও দিনদিন মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে। নির্বিঘ্নে যাতে মানুষ এসব পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করতে পারে সে জন্য গ্রহণ করেছেন নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এসব পর্যটন স্পটে যাওয়া আসার জন্য পর্যটক বাস সেবা চালু।
জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েই আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান যে কাজগুলো করে চলেছেন, তা এককথায় অভিনন্দনযোগ্য।
এবার তিনি নগরে নামাচ্ছেন স্মার্ট স্কুল বাস। আজ সোমবার থেকে প্রযুক্তি সুবিধা সম্পন্ন বাসে চড়ে নগরীর যেকোনো প্রান্ত থেকে স্কুলে যাবে শিক্ষার্থীরা। ভাড়া গুণতে হবে শুধুমাত্র ৫ টাকা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ‘সমৃদ্ধ নগর, উন্নত গ্রাম, প্রযুক্তির ছোয়ায় স্মার্ট চট্টগ্রাম’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ নামক উদ্ভাবনী উদ্যোগটি প্রথম পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
স্মার্ট স্কুল বাসের যাত্রা শুরু উপলক্ষে সার্কিট হাউসে আয়োজিত একটি অংশীজন সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ–২০২৩ এর প্রথম পুরস্কার পেয়েছে স্মার্ট স্কুল বাস। টাকার অংকে পুরস্কারের পরিমাণ ৮০ লাখ টাকা। এ টাকা স্মার্ট স্কুল বাস পরিচালনায় খরচ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত ১০ টি স্কুল বাস প্রযুক্তি সুবিধার আওতায় এনে স্মার্ট স্কুল বাসে রূপান্তরের কাজ চলছে। একটির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৯টি স্মার্ট স্কুল বাস আগামী জানুয়ারি থেকে চালু করা যাবে। আপাতত শিক্ষার্থীদের খরচ করতে হবে ৫ টাকা। আগামী বছর ১০ টাকা করে শিক্ষার্থীরা ভাড়া দিবেন। তিনি বলেন, স্মার্ট স্কুল বাসে নগরীর বিভিন্ন স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অসহনীয় যানজট, অভিভাবকদের ভোগান্তি, অধিক যাতায়াত খরচ, জ্বালানি অপচয়, সড়ক দুর্ঘটনা, অনিরাপদ স্কুল যাত্রাসহ অভিভাবকদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যার সমাধান হবে।
আসলে স্মার্ট স্কুল বাস চালুর পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল। এ কর্মসূচির কারণে অভিভাবকদের ভোগান্তি, উৎকণ্ঠা ও টেনশন দূরীভূত হবে–তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব কর্মের মধ্য দিয়ে নিজে মেধাবী, চৌকস, সাহসী ও মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। আমরা তাঁর এসব সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক সাফল্য প্রত্যাশা করছি।