স্মার্ট সিটি গড়তে ৩০ প্রকল্প

অযৌক্তিক কর আরোপ করা হবে না, সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

অর্থ সংস্থানের অনিশ্চয়তা থাকলেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে নগরবাসীকে এক গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের স্বপ্ন দেখালেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। বললেন, চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মাধ্যমে উন্নত ও সহজ পন্থায় নগরবাসীকে সেবা দিতে পারবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। স্মার্ট সিটি গড়তে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। সিটি কর্পোরেশনের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্যে সম্ভাব্য প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বাজেট বক্তব্য রাখেন তিনি।
৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প : স্মার্ট সিটি গড়তে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয়ের পাশাপাশি ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা জানান মেয়র। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- নগরে পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুট ওভারব্রিজ ও মেকানিক্যাল পার্কিং স্থাপন, চসিকের ওয়ার্ড অফিসসমূহ সংস্কার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্প, নগরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, নগরে স্বাধীনতা স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহের সংরক্ষণ প্রকল্প এবং আগ্রাবাদ ডেবা ও পাহাড়তলী জোড় দীঘির সংস্কার প্রকল্প।
এছাড়া বিওটি (বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) এর আওতায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন, যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণ, ঠাণ্ডাছড়ি পার্ক উন্নয়ন, আউটার রিং রোডের পাশে সী সাইটে ওশান পার্ক ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলেও জানান মেয়র।
আরো ২০টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, স্মার্ট সিটি প্রকল্প, বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনির্মাণ, চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশমতে প্রস্তাবিত নতুন সড়ক নির্মাণ, মুরাদপুর, ঝাউতলা, অঙিজেন ও আকবর শাহ রেলক্রসিংয়ের ওপর ওভারপাস নির্মাণ, ঢাকামুখী, কঙবাজারমুখী ও হাটহাজারীমুখী বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুট ওভার ব্রিজ ও ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণ, চসিকের নিজস্ব জায়গায় স্পোর্টস কমপ্লেঙ নির্মাণ, কাঁচা বাজারের আধুনিকায়ন, চান্দগাঁওয়ে আধুনিক স্লটার হাউস-নির্মাণ, বাকলিয়া স্টেডিয়ামে স্পোর্টস কমপ্লেঙ নির্মাণ, ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ, শিশুপার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, মিলনায়তন, ব্যায়ামাগার ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, নগরের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক কনভেনশন হল নির্মাণ, জোনভিত্তিক মুক্তমঞ্চ ও থিয়েটার ইনস্টিটিউট নির্মাণ, বিবিরহাট গরুর বাজার শহর হতে দূরে ফতেয়াবাদ স্থানান্তর করা, নগরের প্রধান সড়কসমূহের ফুটপাত, মিডিয়ান, রাউন্ড আধুনিকীকরণ এবং লেন পার্কিং ও জেব্রা ক্রসিংসহ উন্নয়ন, নগরের কাঁচা সড়কসমূহ পাকাকরণ এবং হকার পুনর্বাসন প্রকল্প।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ সংস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সব প্রকল্পে সরকারি অর্থের প্রযোজন হবে তা কিন্তু কথা নেই। আমাদের যেসব ল্যান্ড আছে সেগুলোকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। মার্কেট করে সেলামীর মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করতে পারি। কাউন্সিলর কার্যালয়কে সম্প্রসারণ করব, সেখানে কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য আয়বর্ধক প্রকল্পের ব্যবস্থা করবো। যেমন বেপারিপাড়া, বিবিরহাট, চকবাজার, আগ্রাবাদে যদি প্রকল্প নিই টাকার অভাব হবে না। কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না। সেলামী নিয়ে প্রকল্পগুলো করে ফেলতে পারব।
তিনি বলেন, নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্ন-বাসযোগ্য নগর গড়তে বিশাল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, সেই সক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরও উন্নয়ন থেমে থাকতে পারে না। তাই সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব আয়বর্ধক প্রকল্পে জোর দিচ্ছি। সরকারের কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়। আপনাদের সবার সহযোগিতা, চিন্তা-চেতনা, মেধা ও সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকব।’
এ সময় অতীতে সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত আয়বর্ধক প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, সব আয়বর্ধক প্রকল্পে সাফল্য আসেনি ঠিক না। কিছু প্রকল্পে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে বা সাফল্য আসেনি। কিন্তু অতীতের মেয়রগণ যেসব আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন তার ৭০ শতাংশ সফল। যেগুলো স্থবির হয়ে পড়েছিল সেগুলো সচল করার উদ্যেগ নিয়েছি।
গৃহকর প্রসঙ্গ
বাজেট বক্তব্যে মেয়র গৃহকর প্রসঙ্গে বলেন, নগরের যারা আদিবাসী তাদের ওপর হোল্ডিং ট্যাঙসহ কোনো ধরনের অযৌক্তিক কর আরোপ করা হবে না। তবে কর পরিশোধের ক্ষেত্রে সকলের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সহমত পোষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিজস্ব আয়ের উৎসগুলোর পরিধি বাড়াব এবং রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াকে সহজতর করব যাতে নগরবাসী কর প্রদানে উৎসাহিত হয়।
তিনি বলেন, বকেয়া কর পরিশোধের লক্ষ্যে সারচার্জ মওকুফের সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং রাজস্ব আদায়ের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিয়মিত পত্র ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থাসমূহ থেকে পাওনা পৌরকর আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পৌরকর আদায়ের সুবিধার্থে রিভিউ বোর্ডের কার্যক্রম চলমান আছে। হোল্ডিং ট্যাঙ, ট্রেড লাইসেন্সসহ সকল ধরনের ফি ও চার্জ অনলাইনে গ্রহণের নিমিত্তে সফ্‌টওয়্যার প্রণয়ন, ব্যাংকের সাথে সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে এবং সফ্‌টওয়্যারটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ভেন্ডার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে পৌরকর ও ট্রেড লাইসেন্স শতভাগ অনলাইনে আদায় ও প্রদান করা সম্ভব হবে।
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে প্রত্যেক কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে একজন করে কর্মকর্তা ও সহকারীর পরিচালনায় সড়ক, অলিগলি এবং নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও আবর্জনা অপসারণে প্রতিদিন পরিচ্ছন্নকর্মীগণ কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে ৩ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত নালা-নর্দমা থেকে জমে থাকা মাটি উত্তোলন করে পানি চলাচলের প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় তিন ফুটের বেশি প্রশস্ত নালা ও খাল পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের প্রবাহ রক্ষা করার সামগ্রিক দায়িত্ব বর্তমানে সিডিএ-র হলেও মশার প্রজনন বৃদ্ধি প্রতিরোধ ও পানি প্রবাহের স্বার্থে অনেক বড় নালা-খাল থেকে সিটি কর্পোরেশন মাটি উত্তোলনসহ আবর্জনা অপসারণ করছে। মশার উৎপাত রোধকল্পে ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশার ওষুধ অ্যাডালডিসাইড ও লার্ভিসাইড স্প্রেকরণ ও নালা-নর্দমা হতে মাটি, আবর্জনা উত্তোলনকাজ অব্যাহত আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসায় ফিরে মা দেখেন খাটের নিচে মেয়ের নিথর দেহ
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নে শুরু, মৃত্যুতে শেষ