দেশে শক্তিশালী ও আধুনিক হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা। বাড়ছে ডিজিটাল সেবার পরিধি। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যে গৃহীত ও পরিকল্পিত সকল প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ লক্ষ্যে ই–নামজারি সিস্টেম, নাগরিকদের অনলাইনে দাখিলা প্রদান ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সমগ্র বাংলাদেশের ১,৩৮,০০০টি ম্যাপকে ডিজিটালাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই ম্যাপের ওপর স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণির একটি তথ্যভাণ্ডারও তৈরি হচ্ছে। দৈনিক আজাদীতে ২৩ মে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, কর্মক্ষেত্রে শুদ্ধাচার চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর এবং সংস্থার ছয়জন কর্মকর্তা–কর্মচারী ২০২১–২২ অর্থবছরের জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন। সোমবার পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা সনদ ও স্মারক তুলে দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, স্মার্ট ভূমিসেবার অন্যতম অনুষঙ্গ সুশাসন। আমরা যতই সিস্টেম বদল করি না কেন, সিস্টেমের অপারেটর তথা পেছনের মানুষ যদি দক্ষ এবং সততাপরায়ণ না হন, চূড়ান্তভাবে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। জনগণকে সরকারের পরিকল্পিত স্মার্ট ভূমিসেবা বিষয়ে অবগত করা, ভূমিসেবায় নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং দ্রুত প্রযোজ্য সেবা দেয়ার মাধ্যমে ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন ভূমিমন্ত্রী।
অন্যদিকে, ‘স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও ভূমি সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করা হয়েছে। গত সোমবার নগরীর সদর ভূমি অফিসে ভূমি সেবা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আবু রায়হান দুলন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম ও কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড উমর ফারুক। এর আগে সার্কিট হাউসে ভূমি সেবা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে ব্রিফিং করা হয়। লিখিত ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দালালদের দৌরাত্ম্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয় মানে হচ্ছে, ভূমি সংক্রান্ত সেবা অনলাইনে দিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সবকিছু অনলাইনে যেহেতু হচ্ছে সেখানে তো আর দালালের বিষয়টি থাকছে না। দালাল তো দূরের কথা, সেবা নিতে সেবাপ্রার্থীদের ভূমি অফিসেও যাওয়া লাগবে না।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য টেকসই ও স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। আমরা চাচ্ছি ২০২৬ সালের মধ্যে বর্তমানে গৃহীত ও পরিকল্পিত সব প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়ন। ২০২৬ সালে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে খতিয়ানের দাগ শেয়ার হবেনা এবং মালিকভিত্তিক খতিয়ান হবে। এটা হলে ভূমি নিয়ে মামলা–মোকাদ্দমা ও সীমানা বিরোধ কমে যাবে। এনআইডি দিয়েই যেন পাওয়া যায় জমির সকল তথ্য– এই ব্যবস্থা করাও আমাদের পরিকল্পনায় আছে। সর্বোপরি দ্রুত সারাদেশে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) বাস্তবায়ন করা। যেসব জায়গায় একবার এই ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হবে, সেখানে ভবিষ্যতে আর জরিপ করার প্রয়োজন পড়বে না।
এখানে উল্লেখ্য, ভূমি সংস্কার বোর্ডের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ই–মিউটেশনসহ ভূমিসেবা অটোমেশনের সব কার্যক্রমের মাঠ পর্যায়ের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান ও তদারকি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেলের সঙ্গে সমন্বয় করা; অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর আদায় কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা ও তদারকি; উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বাজেট প্রণয়ন, ছাড়করণ ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা; জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় সব ভূমি অফিস ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারী যাঁরা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত, তাঁদের আন্তর্বিভাগ বদলি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম (নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যতীত) পরিচালনা করা; ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণে অর্পিত/অনাবাসী ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও তদারকি, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি এবং ষান্মাসিক/বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো।
আমরা চাই, স্মার্ট ভূমি সেবা। এখানে কোনো হয়রানি থাকবে না, থাকবে না কোনো অনিয়ম।