স্মার্টফোন যেভাবে শনাক্ত করবে ভূমিকম্প

| সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার বে এরিয়া অঞ্চলে পাঁচ দশমিক এক মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। সৌভাগ্যজনকভাবে সেটি খুব বড় মাত্রার ভূমিকম্প ছিল না, ক্ষয়ক্ষতিও তেমন হয়নি। কিন্তু অন্য একটি দিক থেকে ওই ভূমিকম্পটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ ভূমিকম্প হওয়ার আগে ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ তাদের স্মার্টফোনে আগাম সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন।

এরপর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় হওয়া পাঁচ দশমিক দুই মাত্রার এক ভূমিকম্পের আগে নোটিফিকেশন পেয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। সে সময় অনেকে অন্তত ৩০ সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন বলে জানান। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফোন ব্যবহারকারীরা যে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন, সে ভূমিকম্প শুরুতে তাদের ফোনই শনাক্ত করেছিল। খবর বিবিসি বাংলার।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ, ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ও ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে এমন একটি প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা করছে, যেটি ভূমিকম্প হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম হবে। এই সতর্কবার্তা ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড আগে পৌঁছানো সম্ভব। আর ওই কয়েক সেকেন্ডই কাউকে টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়ার সময় দেবে কিংবা ট্রেনের গতি কমানোর সুযোগ করে দেবে বলে বিশ্বাস গুগলের।

যেভাবে কাজ করে এই সিস্টেম : এই সিস্টেম দুটি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে থাকা কয়েক হাজার সিসমোমিটার থেকে ভূমিকম্পের তথ্য নেয়। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর আশেপাশের অঞ্চলে হতে যাওয়া ভূমিকম্প আগে থেকে নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে এই প্রযুক্তি। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অর্থাৎ বাকি বিশ্বের জন্য এই সিস্টেম ব্যক্তিগত ব্যবহারের অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে কম্পন শনাক্ত করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থাৎ আপনার কাছে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোনই এক্ষেত্রে আগে থেকে কম্পন শনাক্ত করবে।

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অধিকাংশ ফোনেই এক্সেলারোমিটার রয়েছে, ফোন নাড়াচাড়া করলে তা শনাক্ত করতে পারে এটি। ফোন ব্যবহারকারী কতটুকু হাঁটল বা দৌড়াল, এই ধরনের তথ্য দিতে ফিটনেস ট্র্যাকার জাতীয় অ্যাপগুলোকে সহায়তা করে থাকে এই টুল। তবে এর সেন্সরগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এটি একটি ছোটোখাটো সিসমোমিটার হিসেবেও কাজ করে।

ভূমিকম্পের প্রাথমিক ধাক্কা শনাক্ত করার সাথে সাথে ফোনের এই সিস্টেমটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেমে তথ্য পাঠায়। এরপর গুগল যাচাই করে, একই এলাকার লক্ষ লক্ষ অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে একই ধরনের তথ্য তারা পাচ্ছে কিনা। সে রকম হলে সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে গুগল ওই এলাকায় অবস্থিত অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠায়। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। যেহেতু রেডিও সিগন্যাল সিসমিক কম্পনের চেয়ে দ্রুত যায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরে থাকা অঞ্চলগুলোতে কম্পন অনুভূত হওয়ার আগেই সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব হতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েডের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মার্ক স্টোগাইটিস বলেন, এই প্রক্রিয়ায় আমরা আসলে আলোর গতিবেগের সাথে ভূমিকম্পের গতিবেগের রেস খেলি। আমাদের সৌভাগ্য যে, আলোর গতিবেগ ভূমিকম্পের গতিবেগের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, এই সিস্টেমে ব্যবহারকারীকে যে নোটিফিকেশন পাঠানো হয় তা মূলত ব্যবহারকারীকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার তাগাদা দেয়। সতর্কবার্তায় বলা হয় ‘ড্রপ, কাভার অ্যান্ড হোল্ড।’

পৃথিবীতে ১৮শ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ডিভাইস রয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে তিন থেকে চারশ কোটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস আছে। গুগলের এই ভূমিকম্প শনাক্তকরণ পদ্ধতি ‘আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম’ ৯০টির বেশি দেশে কার্যকর রয়েছে। তবে এই ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেসব এলাকায় অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সংখ্যা তুলনামূলক কম, সমুদ্রে উৎপন্ন হওয়া ভূমিকম্প শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই সিস্টেম খুব একটা কার্যকর নয়। আর এ সিস্টেম ভূমিকম্প হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারলেও আগে থেকে ভূমিকম্প শনাক্ত করার বিষয়টি এখনো অনিশ্চয়তায় পূর্ণ।

যেভাবে আর্থকোয়েক অ্যালার্ট চালু করবেন : অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংস অপশনে যান। সেটিংসে ‘সেফটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি’ অপশনে যান। ‘আর্থকোয়েক অ্যালার্ট’ অপশনটি সিলেক্ট করুন। তবে এই সিস্টেমের শতভাগ সুবিধা পেতে কিছু শর্ত মানতে হবে। ফোনের লোকেশন অন রাখতে হবে, যেন গুগল শনাক্ত করতে পারে যে আপনার ফোন কোন অঞ্চলে রয়েছে। আর ফোনকে সিসমোগ্রাফ হিসেবে ব্যবহার করতে ডিভাইসটিকে স্থিতিশীল অবস্থানে (টেবিলের ওপর) রাখতে হবে এবং সেটিকে চার্জারের সাথে সংযুক্ত রাখতে হবে।

অর্থাৎ আপনার ফোন যদি স্থিতিশীল অবস্থায় চার্জারের সাথে লাগানো থাকে, তাহলে এটি ভূকম্পন শনাক্ত করে গুগলের কাছে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের তথ্য পাঠাতে পারবে। একই অঞ্চলের বেশ কিছু ফোন থেকে এ তথ্য পেলে গুগল সেগুলো বিশ্লেষণ করে বুঝতে সক্ষম হবে যে সেখানে ভূমিকম্প হতে চলেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তখন ওই এলাকা ও তার আশেপাশের এলাকার সব অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠাবে তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রশাসন কীভাবে দখল করতে হবে, প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধসশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে পদক পেলেন ৬৪ সেনা সদস্য