সুরের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র,বাংলার কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী,শিক্ষক ও সুরকার সাদি মহম্মদ বড়ই অসময়ে এক বুক কষ্ট আর হাহাকার নিয়ে ৬৭ বছর বয়সে অসংখ্য ছাত্র–ছাত্রী ও ভক্ত অনুরক্তদের কাঁদিয়ে গত ১৩মার্চ চলে যান না ফেরার দেশে। ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছোট ভাই শিবলী মোহাম্মদ বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী। শহীদ পরিবারের সন্তান সাদী মহম্মদ শিশুকালে বাবাকে চিরতরে হারান। স্বাধীন দেশে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর দায়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তাঁর বাবা সলিম উল্লাহ এবং চাচাকে চোখের সামনে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে এবং পুরো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বাবাব নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সলিম উল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্র চর্চা এবং পরবর্তী প্রজন্মে তা ছড়িয়ে দেয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।এমন কি ৭৫ পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্র চর্চার ক্ষেত্রে সামপ্রদায়িক শক্তি নানাভাবে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলো তা থেকে নতুন প্রজন্মকে বের করে আনার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করা, একই সঙ্গে রবীন্দ্র সঙ্গীতের আবহ তৈরি আরও অনেককে আগ্রহী করার পেছনে শিল্পী সাদি মহম্মদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিশেষ করে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হবার নয়। ২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তাঁর শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও আধুনিক গানসহ তাঁর ষাটটিরও বেশি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এছাড়াও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। চ্যানেল আই ২০১২ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে। শিল্পী সাদি মহম্মদ সারাজীবন সুর আশ্রয় করে, গান আশ্রয় করে বেঁচে ছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি শিল্পীর মৃত্যু নেই। তিনি তার গান ও সুরের মাঝে বেঁচে থাকবেন সহস্র বছর।