কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন আপনার তরে, কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন সকলের তরে। যাঁরা জন্মগ্রহণ করেন সকলের তরে, নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেন মানবজাতির উপকারে – বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন সেই স্বল্পসংখ্যক গুণী মানুষদের কাতারে। তাঁর জাগতিক জীবনের পুরোটাই ছিলো মানুষের জন্য। এমন মঙ্গলকামী মানুষকে পেয়ে পৃথিবীও ধন্য।
ভাষা–বিদ্রোহ যখন শুরু হয়, তখন বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের তরুণ তুর্কি। রক্তে ছিলো তাঁর টগবগে নেশা – শৃঙ্খলমুক্ত করবেন মায়ের ভাষা। দেশজোড়া ছিলো তখন তমদ্দুন মজলিসের বিপুল সমর্থক। ঐতিহাসিক বিচার বা বিবেচনায় ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিস ছিলো সমার্থক। তমদ্দুন মজলিসের ত্যাগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে – বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন এ নিয়ে। তিনি লিখেছেন, “আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে…।“(দ্র– অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ–৯১)। তখন সেই সংগ্রামের সাথে তমদ্দুন মজলিসের সৈনিক হিসেবে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী।
ভাষা–বিদ্রোহটা বেগ পায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত ট্রাজেডির পর। পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, জাব্বার সহ অগণিত ভাষা–প্রেমিক মারা গেলে বিদ্রোহের আগুনে আরো হাওয়া লাগে। সে খবর পরদিন পৌঁছলে দাবানলের মতো দ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে দক্ষিণ বাংলা। বীর চট্টলার বীর সন্তান বদিউল আলম চৌধুরীও সেই বিদ্রোহে সামিল হন।
তখন বদিউল আলম চৌধুরী একটি সাইকেল বাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন। এর পেছনে কারণও ছিলো। কারণ আর কিছু নয়, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে একুশকে নিয়ে লেখা একটি কবিতার প্রচার। কবিতাটি ছিলো মাহবুব উল আলম চৌধুরী‘র লেখা কালজয়ী কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসীর দাবি নিয়ে এসেছি‘। এটি বাংলা ভাষায় একুশকে নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা। কবিতাটি লেখা হওয়ার পর ঝুঁকি নিয়ে এটিকে পুস্তিকাকারে প্রকাশ করে কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস। প্রকাশের পর লালদিঘি মাঠের বিক্ষোভ সভায় কবিতাটি পড়েন চৌধুরী হারুন। এ কথা সরকারের কানে গেলে সরকার কবিতাটি নিষিদ্ধ করে এবং শহরময় গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে শহর ও শহরতলিতে কবিতাটি প্রচার কঠিন হয়ে পড়ে। কথায় আছে, যত মুশকিল তত আহসান। ভাষা–বিদ্রোহীরা তাদের কর্মকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে নতুন বুদ্ধি বের করলেন – সাইকেল বাহিনী গঠন করলেন। এই বাহিনী গঠন করেন যে সংগঠনের লোক, সেই সংগঠনের নাম তমদ্দুন মজলিশ। আর এর নেপথ্যের নায়ক ছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী। তাঁর সাথে যোগ দেন আরেক উঠতি ছাত্রনেতা মোহাম্মদ হোসেন খান। মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছ থেকে শোনা স্মৃতিকথার বরাত দিয়ে লেখক, কলামিস্ট সাখাওয়াত হোসেন মজনু তাঁর জনপ্রিয় কলাম ‘সামপ্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি‘-তে লিখেন, “তাঁরা দু‘জনই ছিলেন বাংলা ভাষা আন্দোলনের চট্টগ্রামের প্রধান সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের উঠতি ছাত্র নেতা। তারা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গোপন মিশনে নেমেছিলেন। তাঁদের দু‘জনের বাহন ছিলো দু‘টি সাইকেল। তখন প্রকৃতির বুকে হালকা শীতের আমেজ। কবিতার পুস্তিকার পাশাপাশি তারা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে লিফলেট বিলি করতেন। বদিউল আলম চৌধুরীর বাড়ি ছিলো উত্তর কাট্টলী নাজির বাড়ি।…একেবারে গ্রামীণ জনপদ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বদিউল আলম চৌধুরী গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুস্তিকা পৌঁছিয়ে দিতেন। তখন গ্রামীণ এলাকায় রাস্তায় বিদ্যুৎ বাতি ছিলো না। সন্ধ্যা হলেও মানুষ ঘরে ঢুকে যেতেন। শুধু মসজিদকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ পথ চলতেন হ্যাজাক বাতি বা বোম্বা বাতি বা বোম্বা চেরাগ নিয়ে। সে সময় বদিউল আলম চৌধুরী‘র জ্ঞাতি চাচা মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ভাষা সংগ্রামীদের জন্য একটি টাইপ মেশিন ও একটি গেসটেটনার সাইক্লোস্টাই মেশিন দিয়েছিলেন। এই মেশিন দিয়ে প্রচুর প্রচারপত্র গোপনে বের করে শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ভাষা সংগ্রামী তরুণরা।“(দৈনিক আজাদী, ১২ অক্টোবর ২০২০)।
বদিউল আলম চৌধুরী‘র রক্তে ছিলো রাজনীতি। তাঁর চাচা নূরুল হক চৌধুরী, চাচা নবী চৌধুরী, বড়ভাই খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন রাজনীতিতে অত্যন্ত সুপরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তি। বদিউল আলম চৌধুরীর কাছে রাজনীতি মানে ছিলো নীতির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের সেবা করা। রাজনীতিতে তাঁর অভিষেক হয়েছিলো খেলাফতে রব্বানী পার্টিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘদিন তিনি এই দলের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালের দিকে ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স ফ্রন্টের সাথেও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এই ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার কথা লিখতে গিয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও চারণ কবি বদন দিদারী লিখেছেন, “আজিজ মিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার নাম ছিলো ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স ফ্রন্ট। এটার প্রথম সভা হয়েছিলো জে এম সেন হলে। সে মিটিংয়ে ব্যারিস্টার সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী, চেম্বার নেতা ইদ্রিস মিয়া, রফিকউল্লাহ চৌধুরী, নবী চৌধুরী‘র ভাইপো খোরশেদ আলম চৌধুরী ও বদিউল আলম চৌধুরী সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আমীর হোসেন দোভাষ উক্ত মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছিলেন। রফিকউল্লাহ চৌধুরী ফ্রন্টের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।“(দ্র– জননেতা আমীর হোসেন দোভাষ স্মারকগ্রন্থ, সম্পাদকঃ নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, প্রকাশ– নভেম্বর ২০১৩, চট্টগ্রাম, পৃ–৬৭)।
চুয়ান্নতে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের যে নির্বাচন হয়েছিলো, তাতেও যুক্তফ্রন্টের পক্ষে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী। সেই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন নবী চৌধুরী, যিনি ছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী‘র চাচা। সেই নির্বাচন নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম (নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ভাই) ‘ঘরে, স্কুলে আর বাইরে‘ শীর্ষক লেখার একস্থানে লিখেছেন, “যুক্তফ্রন্ট নিয়ে বেশ কিছু প্যাঁচ লেগেছিল সারা প্রদেশেই – এত শরীকের মধ্যে নমিনেশন ভাগ করে দিতে গিয়ে। এরকম একটি নমিনেশন সমস্যার আলোচনা বাসায় শুনে শুনে তাতে আমার কিছু আগ্রহ জন্মেছিল।…শুনেছি নমিনেশন নিয়ে এই সমস্যা প্রায় ভাঙনের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, দুই দলের কেউ ছাড়বেনা। শেষ পর্যন্ত হক সাহেব বুদ্ধি করে ব্যাপারটি ফয়সালা করার পুরো এখতিয়ার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর ওপর দিয়ে দিয়েছিলেন। আর সোহরাওয়ার্দী ভাঙন ঠেকাতে নিজের দলের এম এ আজিজের বদলে নবী চৌধুরীকেই দিয়েছিলেন।…যুক্তফ্রন্টের প্রতীক নৌকা আর মুসলিম লীগের হারিকেনে সারা শহর ঢেকে গিয়েছিল। জনসভার আশ–পাশে তো প্রতীকের মচ্ছব লেগে যেত। ছোট ছোট মিছিল আসতো বিশাল বিশাল প্রতীক সঙ্গে নিয়ে।“(বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঈদ সংখ্যা ২০১৫)। ঐ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী মাহমুদুন্নবী চৌধুরী। তাঁর ঐ বিজয়ে বদিউল আলম চৌধুরী‘র অবদান কতটুকু ছিলো সে সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সন্দীপ থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও ভাষাসৈনিক এ কে এম রফিকউল্লাহ্ চৌধুরী লিখেছেন, “মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর নির্বাচনে জনাব বদিউল আলম চৌধুরী যে অবদান রেখেছিলেন, তার সহকর্মীরা বহুদিন পর্যন্ত তাঁর অবদানের কথা ভুলতে পারেনি। সেই নির্বাচনে বদিউল আলম চৌধুরী বিভিন্ন সভা ও পথ সভায় যে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তা এখনো যেন আমার কানে বাজছে। উক্ত নির্বাচনে বদিউল আলম চৌধুরীর বড় ভাই মরহুম খোরশেদ আলম চৌধুরীর কথাও আমরা ভুলতে পারিনা। এই দুই ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া জনাব নবী চৌধুরীর সাফল্যের আশা একপ্রকার অসম্ভব ছিলো।“(দ্র–বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন, পৃ.৫–৬)।
বায়ান্নর রক্ত রাঙা পথ ধরেই আসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ঊনসত্তরে উত্তাল যখন গোটা দেশ, তখন বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের রাজনৈতিক শাখা খেলাফতে রব্বানী পার্টির চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি উক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গণমানুষের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে গণআন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় পার্টির চট্টগ্রাম অধিবেশন থেকে। সেই কর্মসূচির সংবাদ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯–এর দৈনিক আজাদী, দৈনিক ইনসাফ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় গণমিছিলে অংশগ্রহণ করার গৌরবও অর্জন করেন তিনি। (দ্র-‘ইস্টার্ন এক্সামিনার‘ ও দৈনিক আজাদী)।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ছিলো একটি ঐতিহাসিক দিন। সেদিন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরদিন বদিউল আলম চৌধুরী ‘স্বাধীন নয়াবাংলা‘-র শ্লোগান নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। এর কিছুদিন পর শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেই সংকটময় সময়ে স্বদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে বদিউল আলম চৌধুরী‘র ভূমিকা কি ছিলো সে সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি জহুর–উশ–শহীদ এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, “তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। আন্দরকিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সম্মুখে পুলিশ বিটের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং বিশাল এক মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এই মিছিল তখন আন্দরকিল্লা থেকে শুরু করে কোতোয়ালির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠন করে পাক–হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ব দেন তিনি। অবশ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিপক্ষে এসব কাজ চালানো উচিত কিনা এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্থানে রবুবিয়ত আন্দোলনের যে–সব গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, তার সবকটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন, আর সামগ্রিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতির পর্যালোচনা শেষে স্বাধীনতার পক্ষেই তিনি সবসময় অটল থাকেন।“(দ্র– বদিউল আলম চৌধুরী স্মারকসংকলন, পৃ.২৮–২৯)। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান তাঁর ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম‘ শীর্ষক বিশাল বইয়ের একস্থানে লিখেছেন, “চট্টগ্রামে খেলাফতে রব্বানী পার্টির নেতা ছিলেন রফিকউল্লাহ্ চৌধুরী, সোলায়মান, এ এস এম মোজাফফর, হারুনুর রশীদ খান, বদিউল আলম চৌধুরী (জেলা সম্পাদক), আজিজুর রহমান চৌধুরী, মানোয়ার আহমদ, জামাল উদ্দিন চৌধুরী, এস. এম. তোফাজ্জল আলী, কে এম আবদুল ওহাব চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন খালেদ, ডা. মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। দলটি ইসলামপন্থী হলেও এ দলের এক অংশ হারুনুর রশীদ খান, বদিউল আলম চৌধুরী, আজিজুর রহমানের চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।“(প্রথম প্রকাশ– মার্চ ১৯৯৩, চট্টগ্রাম, পৃ–২৫১)।
বদিউল আলম চৌধুরী‘র জন্ম ১৯ জানুয়ারি ১৯৩২ সালে – চট্টগ্রামের কাট্টলীস্থ বিখ্যাত বনেদী বাড়ি নাজির বাড়িতে। তাঁর পিতার নাম ওহিদুল আলম এবং মায়ের নাম সুলতানা বেগম। প্রখ্যাত জমিদার ফয়েজ আলী চৌধুরী ছিলেন তাঁর পিতামহ। ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বদিউল আলম চৌধুরী শুধু ভাষাসৈনিক ও মুক্তি সংগ্রামের সক্রিয় সমর্থকই ছিলেন না, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী, সৎ ও বাগ্মী হিসেবেও সমাজে সুপরিচিত ও সম্মানিত ছিলেন। তাঁর মতো মানবদরদী মানুষেরা শুধু বাংলাদেশেরই সম্পদ নন – বিশ্বেরও সম্পদ।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রম্যলেখক