স্মরণের আবরণে বিদূষী এক নারী বেগম ফজিলাতুল কদর

শামীম ফাতেমা মুন্নী | বুধবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

বেগম ফজিলাতুল কদর – চট্টগ্রামের সাহিত্যাঙ্গনে এক অনন্য নাম, ঐশী কবি বলে পরিচিত এক বিদূষী অনন্যা নারী। আশির দশকের শুরুতে চট্টগ্রামের রক্ষণশীল নারী সমাজে ইসলামি সংস্কৃতির চর্চায়, শিক্ষা- দীক্ষায় – জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে যে কজন মহিলা সাহসী অগ্রপথিক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ, চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাব, চট্টগ্রাম একাডেমি, মা ও শিশু হাসপাতাল, ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং আরো অনেক দাতব্য সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন।
জ্ঞানের অনির্বাণ ঐশী আলোয় নারী সমাজকে প্রগতিশীল করে তোলার সেই স্বপ্নকে তাঁর কঠোর শ্রম এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফল করে তোলেন চট্টগ্রাম মহিলা ইসলামি পাঠাগার নামকরণ করে ১৯৮৪ সালে অক্টোবর মাসে। আমৃত্যু বেগম ফজিলাতুল কদর মহিলা ইসলামি পাঠাগারের সভানেত্রী ছিলেন। এখনো সেই প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ভবনে ঐশী জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে চলেছে যোগ্য নিষ্ঠাবান উত্তরসূরীদের জ্ঞান স্পৃহায়।
স্বামী, চার কন্যা ও তিন পুত্র, নাতি- নাতনী নিয়ে বিশাল সংসারের কর্ণধার ছিলেন তিনি। শত কাজের ফাঁকেও দুহাত উজাড় করে লিখতেন তিনি, বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। চট্টগ্রামের এখনকার অনেক প্রতিষ্ঠিত, প্রথিতযশা সামাজিক ব্যক্তিত্ব, স্বনামধন্য অনেক কবি সাহিত্যিক আত্মপ্রচার বিমুখ এই বিদূষী নারীর স্নেহধন্য হয়েছেন। বেগম ফজিলাতুল কদরের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো : আমার টেবিলে একগুচ্ছ হাস্নাহেনা(কাব্যগ্রন্থ), বাণীতে নিহিত শান্তি (কাব্যগ্রন্থ), স্মৃতিতে গোলাপ (গল্প গ্রন্থ), তারা ফুল ১ম ও ২য় খণ্ড (কাব্যগ্রন্থ), হীরা জহরত মুক্তা পান্না (কাব্যগ্রন্থ), ঐশী ভালোবাসা (কাব্যগ্রন্থ), নীলা চৌধুরীর কবিতা (কাব্যগ্রন্থ), শতদলে ফোটে মুগ্ধ হৃদয় (কাব্যগ্রন্থ), শুভা চৌধুরীর ছড়া (শিশুতোষ ছড়া গ্রন্থ), মন উড়ে যায় পাখির সাথে (শিশুতোষ ছড়া), হাজার কবিতা (কাব্যগ্রন্থ), সুরা আল বাকারার কাব্যানুবাদ, স্ত্রী লোকের হজ্ব (নারী শিক্ষা মূলক), আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে গো ফুল ফুটবে (প্রবন্ধগ্রন্থ)।
ব্যক্তিগত জীবনে অমায়িক বন্ধুবাৎসল এবং ধর্মভীরু হলেও চিন্তা- চেতনায়, মনন ও মানসে তিনি অত্যন্ত আধুনিক এবং ঐশ্বর্যময়ী ছিলেন। একজন মানুষ ব্যক্তিগত পরিচয়ে অমরত্ব লাভ করে না, অমরত্ব আসে তার সৃজনশীল কর্মে। কর্মের সফলতাই তাঁর সাফল্য, তাঁর সার্থকতা, তাঁর সৌরভ- গৌরব। বেগম ফজিলাতুল কদরের সুতীক্ষ্ম লেখনীতে শিশুর সরল উচ্ছ্বাসে এসেছে ঐশী প্রেম, রাসুল (স) এর মুহাব্বত, দেশ প্রেম, প্রকৃতি প্রেম,মানব প্রীতি,সত্য ও সুন্দরের জয়গান, সমাজের অসঙ্গতি, প্রতিচ্ছবি, ভালোবাসা,আশা- আকাঙ্ক্ষা। তাইতো তাঁর স্নেহধন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক রাশেদ রউফ উচ্চারণ করেন – ‘ফজিলাতুল কদর : কবিতায় সহজিয়া উচ্চারণের সাধক’। ফরিদপুর জেলার নীলকমল গ্রামে ১৯৩৩ সালে ৮ ই সেপ্টেম্বর এক খানদানী পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। দাদা আবদুল জব্বার ছিলেন ফারায়েজি আন্দোলনের নেতা। পিতা এম.আব্দুল্লাহ( এম. এ),মাতা খাদিজা দেওয়ান। বাবার আদরের হাস্নাহেনার বিয়ে হয় চট্টগ্রামের এক সম্‌ভ্রান্ত পরিবারে আলহাজ্ব বাদশা মিয়া চৌধুরীর সাথে। ২০১৩ সালের ২৪ শে অক্টোবর আমাদের বটবৃক্ষ ফজিলাতুল কদর স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তের পথে যাত্রা করেন।
তোমাকে ভুলিনি নানু, তোমাকে ভুললে যে আমরা আমাদেরই ভুলে যাবো। তুমি আছো সবার হৃদয় জুড়ে, প্রার্থনা জুড়ে– দয়াময় রব তোমাকে জান্নাতি বাগিচায় চির শান্তিতে রাখুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুল খুলবে! স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতন কতটুকু?
পরবর্তী নিবন্ধস্মরণের আবরণে সাংবাদিক সাধন কুমার ধর