স্মরণীয় জয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এবারের এশিয়া কাপের কোনো কিছুই যেন বাংলাদেশের পক্ষে যাচ্ছিল না। ক্রিকেটাররা যেমন পারছিলেন না মাঠে পারফর্ম করতে, তেমনি ইনজুরি যেন পিছু ছাড়ছিল না টাইগার শিবিরে। তাই দারুণভাবে সুপার ফোর পর্বে এসেও শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হয় টানা দুই ম্যাচে হেরে। তবে সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে যখন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তখন যেন পাওয়ার ছিল অনেক কিছুই। হারানোর ছিল না কোনো কিছুই। শেষ পর্যন্ত অনেক কিছু পাওয়ার ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ঠিকই জিতে নিল সবকিছু। পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলে যেমনটি বাংলাদেশ সবসময় করে। সেটাই যেন এই ম্যাচে করল সাকিবরা। ম্যাচটি কেবলই আনুষ্ঠানিকতার হলেও জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শেষ করার একটা লক্ষ্য ছিল টাইগারদের। আর সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে গেল একেবারে শিহরণ জাগিয়ে। স্মরণীয় এক জয় দিয়ে এবারের এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ। যেখানে সাকিবরা হারিয়েছে এরই মধ্যে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া ভারতকে। ৬ রানের রোমাঞ্চকর জয়ের তৃপ্তি নিয়ে দেশে ফিরছে টাইগাররা। ইনজুরির কারণে দলে নেই তামিমএবাদতরা। শান্ত ফিরে গেছেন দুই ম্যাচ খেলে। পারিবারিক কারণে নেই মুশফিক। তাসকিনকে বাইরে রেখে একাদশ সাজানো হয়েছিল। তবে দিন শেষে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে স্মরণীয় এক জয়। সাকিব, হৃদয়, মেহেদী, নাসুমদের দারুণ ব্যাটিংয়ের পর তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় স্মরণীয় এই জয়। এবারের এশিয়া কাপে ভারতের এটি প্রথম পরাজয়। আর তাদের সে পরাজয়ের স্বাদটা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে এই জয় রাখবে দারুণ ভূমিকা। ক্রিকেটারদের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া পারফরম্যান্সের সাথে সাকিবের দারুণ ক্যাপ্টেন্সি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে স্মরণীয় এই জয়। অথচ ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না মোটেও। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাংলাদেশ দল যেন হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। যদিও ম্যাচের শেষটা হয়েছে একেবারে রোমাঞ্চ জাগানো।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই বিবর্ণ। দলের রান যখন ১৩ তখন ফিরেন লিটন দাশ। রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ সামিরের বলে বোল্ড হন লিটন। পরের ওভারে ফিরেন অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম। ১৩ রান করেন এই ওপেনার। দীর্ঘ দিন পর দলে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়ও পারলেন না সুযোগটাকে কাজে লাগাতে। ফিরলেন ৪ রান করে। ২৮ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। সাকিবের সাথে জুটি বেধে এগুতে পারলেন না মিরাজও। ফিরেছেন ১৩ রান করে দলকে ৫৯ রানে রেখে। এরপর সাকিবের সাথে জুটি বাধেন তাওহিদ হৃদয়। বিপর্যয় সামলে এগুতে থাকেন সামনের দিকে। দুজন মিলে গড়লেন শতরানের জুটি। চার বছর পর সাকিবকে হাতছানি দিচ্ছিল সেঞ্চুরি। কিন্তু ৩৩ ওভারের পর পানিপানের বিরতি যেন অভিশাপ হয়ে এলো টাইগার অধিনায়কের জন্য। বিরতির পর মনোসংযোগে চিড় ধরলো। প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলেন সাকিব। শার্দুল ঠাকুরের বল ব্যাটে লেগে ভেঙে গেলো স্ট্যাম্প। সাকিবের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি হলো একরাশ হতাশা নিয়ে। ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংসে ৬টি চার আর ৩টি ছক্কার ছিল। আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংস খেলা তাওহিদ এই ম্যাচেও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

ক্যারিয়ারের পঞ্চম আর টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পেলেন হৃদয়। তবে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মোহাম্মদ শামিকে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন হৃদয়। ৮১ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে তিনি ৫টি চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা। তবে শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন নাসুম, মেহেদী এবং তানজিম সাকিব। এই তিন জনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ২৬৫ রানে। নাসুম আহমেদের ৪৫ বলে ৬ চার আর এক ছক্কায় করেন ৪৪ রান। শেখ মেহেদি ২৩ বলে ৩টি বাউন্ডারিতে করেন ২৯ রান। আর তানজিম সাকিবের ইনিংসটি ছিল ৮ বলে ১৪ রানের। ভারতের শার্দুল ঠাকুর ৬৫ রানে নেন ৩টি উইকেট। ৩২ রানে ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি।

২৬৬ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মাকে ফেরান তানজিম সাকিব। রানের খাতা খুলতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক। নিজের পরের ওভারে আবার সাকিবের আঘাত। এবার তার শিকার অভিষিক্ত তিলক ভার্মা। ১৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন শুভমান গিল এবং কে এল রাহুল। ৫৭ রান যোগ করেন দুজন। ১৯ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদী হাসান। ইশান কিশানকেও দাড়াতে দেননি মিরাজ। তবে ৯৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সুর্য কুমার যাদবকে নিয়ে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শুভমান গিল। দুজনের ৪৫ রানের এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ফেরান ২৬ রান করা সুর্য কুমার যাদবকে। রবীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করে ম্যাচে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেন মোস্তাফিজ। কিন্তু গিল যেন চীনের প্রাচীর হয়েই দাড়িয়েছিলেন। তাকে যেন কোনো মতেই থামানো যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত গিলকে যখন ফেরান মেহেদী হাসান ততক্ষণে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ফেলেছেন গিল। ১৩৩ বলে ১২১ রান করে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন গিল। একটি পাথর গিলকে সরানো গেলেও অক্ষর প্যাটেল যেন আরেক পাথর হয়ে চেপে বসেছিল বাংলাদেশের উপর। ঝড়ের গতিতে ব্যাট করে দলকে যেন নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৪২ রান করা অক্ষর প্যাটেলকে যখন ফেরান মোস্তাফিজ তখন ম্যাচের ভাগ্য দুলছিল দুদিকেই। শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান। হাতে উইকেট একটি। প্রথম তিন বল থেকে কোনো রানই দিলেন না তানজিম সাকিব। চতুর্থ বলটাতে চার মেরে সামি আবার জমিয়ে তুললেন ম্যাচ। তবে পঞ্চম বলে আর পারেননি ভারতের এই পেসার। দুই রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান সামি। আর তাতেই ৬ রানের স্মরণীয় জয় তুলে নেওয়ার উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। ৫০ রান খরচায় তিন উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তানজিম সাকিব এবং শেখ মেহেদী হাসান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আজ ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ মাসে নিখোঁজ শতাধিক