উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে পতেঙ্গার কর্ণফুলী তীরে অবস্থিত লালদিয়া চরের হাজারো বাসিন্দা স্বেচ্ছায় শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বসতভিটা ছেড়ে যাচ্ছেন। পুনরুদ্ধার হওয়া ভূমিতে সাথে সাথে বাঁশ পুঁতে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গতকাল ১ মার্চ লালদিয়া চরে উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে চরবাসী বন্দরের কাছে সময় চেয়ে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বাসা-বাড়ির টিন, দরজা, জানালা এবং আসবাবপত্র নিয়ে যান। বাপ দাদার ভিটে মাটি ছাড়ার সময় অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
গতকাল সকালে লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেন বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে অবশ্য ওই এলাকার বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ায় অভিযান চালানোর প্রয়োজন পড়েনি।
উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেছেন, পতেঙ্গার লালদিয়ার চর বন্দরের জায়গা। এখন জায়গাটা আমাদের পিসিটির ব্যাকআপের জন্য প্রয়োজন। আমরা উদ্বুদ্ধ করেছি যাতে চরের বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় চলে যান। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৯০ ভাগ চলে গেছেন। বল প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আমাদের এলাকায় আমরা বেড়া দিয়ে দেবো, যাতে কেউ দখল করতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আগেও লালদিয়ার চরের ২৬ একর জায়গা থেকে অবৈধ বসত উচ্ছেদ করেছি। আমরা চরের বাসিন্দাদের বলেছি প্রয়োজনে লেবার ও ইক্যুইপমেন্ট সহায়তা দেবো। শান্তিপূর্ণ প্রস্থানের ব্যবস্থা করছি। এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমাদের লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেছে। বুলডোজার বা স্ক্যাভেটর দিয়ে ভাঙার অভিপ্রায় নেই। তারা গরিব হলেও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা ঢিল পর্যন্ত ছুঁড়েনি। শুধু সময় চেয়েছেন। অবৈধ দখল উচ্ছেদ হলে সরকার তৃণমূলদের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। আমরাও লালদিয়ার চরবাসীদের সহায়তা করার জন্য তালিকা পাঠিয়েছি।
লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষকে পথে নামতে হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে গত ২০ দিন চেষ্টা করেছি। অহিংস আন্দোলন করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আমরা চলে যাচ্ছি। জানমাল মা-শিশু ও বৃদ্ধদের রক্ষার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যেতে হচ্ছে। ভাড়া ঘরও পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছি, আমরা দেশের জন্য জমি ছেড়ে দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা পুনর্বাসন চাই, খাসজমি চাই। ১৯৭২ সালে আমাদের নিষ্কণ্টক জায়গার পরিবর্তে ৪০০ পরিবারকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লালদিয়ার চরে জায়গা দেয়া হয়েছিল। নদী রক্ষার কথা বলে ৪৯ বছর পর আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।