শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেছেন, তার কাজের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কোনো অভিপ্রায় উপদেষ্টার নেই বলে জানিয়েছেন। সি আর আবরার বলেন, সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে উচ্চতর কমিটির সিদ্ধান্তে। আমি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার কাজের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার নিয়োগকর্তা রয়েছে। তারা যেতে বললে আমি অবশ্যই চলে যাব। আঁকড়ে ধরে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন কিনা এদিন এক সাংবাদিক জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো রকমের অব্যবস্থাপনা হয়নি। প্রয়োজনে মামলা করেন, কোর্টে যান। ন্যূনতম সৌজন্যতা যদি না রাখেন, তাহলে আমাদের পক্ষে কথা বলা সম্ভব হবে না। খবর বিডিনিউজের।
মন্ত্রণালয় থেকে কোনো রকমের অব্যবস্থাপনা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ও পিতামাতা রয়েছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত কেন আর দ্রুত নেওয়া হল না। বাস্তবতা হচ্ছে এই ধররের সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া যায় না। একটু সময় লাগে। আরও আগে নেওয়া গেলে ভালো হত। কিন্তু আগে নেওয়া যায়নি সঙ্গত কারণে। পরীক্ষা সূচি নির্ধারণ ও কোনো কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে হলে তা কিছু প্রক্রিয়া মেনে করতে হয়। একটা ধারণা সবার মাঝে রয়েছে যে, একক সিদ্ধান্তে এই কাজটি করা যায়। এটা সঠিক নয়। পরীক্ষাটা যেন নিয়ে নেই অনেক জায়গা থেকে এমন প্রস্তাবও এসেছিল।
মাইলস্টোন অ্যান্ড কলেজে আগের দিন শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে নয় ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শফিকুল আলমকে। নয় ঘণ্টা পর পুলিশি পাহারায় সেখান থেকে বের হতে পারেন তারা। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কালকে দুইজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সেখানে গিয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমবেদনা জানাতে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা। তিনি বলেন, তারা বল প্রয়োগ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে চাননি, প্রয়োজনে একদিন দুই দিন থাকারও মানসিক সিদ্ধান্তও তাদের ছিল। যাওয়ার আগেই আমরা ছয় দফা দাবিনামা পেয়েছিলাম। আমরা বলেছি দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল। দুই একটা দাবি একটুখানি পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম ওটা সেখানেই শেষ হবে। কোনো কারণে আমাদের অবস্থানটা আরও প্রলম্বিত হলো। বাইরের থেকেও লোকজন আসলেন। আমরা কখনই চাইনি বল প্রয়োগের মাধ্যমে সেখান থেকে চলে আসি। সেখানে কোনো রকমের যেন বল প্রয়োগ না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। প্রয়োজনে একদিন দুই দিন থাকারও মানসিক সিদ্ধান্তও আমরা নিয়েছিলাম। সেই হিসাবে আমরা অপেক্ষা করেছি। পরবর্তীতে আমরা চলে এসেছি।
শিক্ষার্থীদের তুলে ধরা ছয় দফা দাবির কিছু আগেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। শিক্ষার্থীদের লাশ ও নিহত সংখ্যা নিয়ে আবরার বলেন, ঘটনাটা ঘটেছে একটা নির্দিষ্ট এলাকায়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। শিক্ষকদের নাম রয়েছে, হাটে বাজারে বা রেল স্টেশনে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে লাশ কাউন্ট করা মুশকিল হত। আমরা ছাত্রদেরকে তালিকা হস্তান্তর করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে যদি কোনো শিক্ষার্থী মিসিং থাকে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ সেটার জন্য দায়বদ্ধ। আমার জানা মতে এখনও এই ধরনের পরিস্থিতি হয়নি।
লোকালয়ে প্রশিক্ষণ বিমান চলাচলের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, অবশ্যই এই ধরনের মহড়া পুনর্বিবেচনার দাবিদার। এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে কিছু কিছু মিডিয়াতে এমন তথ্য শুরু থেকেই প্রচার হওয়া শুরু করল যেখানে বাস্তবতার সঙ্গে কোনো রকম সঙ্গতি নেই। ছবিগুলো পুরোনো এআই জেনারেটেড। এই ধরনের দায়িত্বহীন রিপোর্টিং এটা শুধু লোকজনকে বিভ্রান্ত করে তা নয়। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারের প্রতি অসম্মান।