নগরীর পাঁচলাইশ থানার ১০টি মোড়ে পুলিশের সাথে যানজট সামলাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সিটিজেন্স ফোরামের তত্ত্বাবধানে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ৫০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে। প্রতিদিন বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ইফতার পর্যন্ত উক্ত ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক পুলিশের সাথে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ এই উদ্যোগ ১০টি মোড়ের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। যানজট কবলিত মুরাদপুর মোড়, মির্জার পুল, বহদ্দারহাট মোড়, পাঁচলাইশ থানার মোড়সহ ১০টি মোড়ে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম প্রয়োজনে বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে পাঁচলাইশ থানা এলাকা অন্যতম। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ বেশ কয়েকটি জায়গা ছাড়াও শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলো রয়েছে। পাঁচলাইশ থানা মোড়, কাতালগঞ্জ মোড়, মির্জার পুল, মুরাদপুর মোড়, এলইজি শপিং কমপ্লেক্স, সাউথ সিটি ফিনলে শপিং কমপ্লেক্স, হামজারবাগ, আতুরার ডিপোসহ পাঁচলাইশ প্রতিটি পয়েন্টে কমপক্ষে ৫ জন করে ভলান্টিয়ার নামানো হয়েছে সিটিজেন্স ফোরামের পক্ষ থেকে।
থানার বিভিন্ন মোড় শহরের অন্যতম যানজট প্রবণ এলাকা। রোজায় প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট বেড়ে যায়। এতে ঘরমুখো মানুষ বিপাকে পড়েন। বিষয়টি কয়েকদিন খেয়াল করার পর পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান সিটিজেন্স ফোরামের সাথে বৈঠক করেন। তিনি সিটিজেন্স ফোরাম থেকে ৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠন করেন একটি টিম। স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যদের ৫ জন করে গঠন করা হয় ১০টি পৃথক দল। উক্ত ১০টি দলকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ইফতার পর্যন্ত রাস্তার যানজট সামলাতে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিদ্যমান পুলিশ টিমের সাথে ৫ জন বাড়তি সদস্য যানবাহন সামলানোর দায়িত্ব পালন করায় সড়কে ম্যাজিক্যাল পরিবর্তন আসে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ওসি। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত মানুষের যে ভোগান্তি ছিল তা নেই বললেই চলে। গাড়ি চলাচলে প্রত্যাশিত গতি এসেছে।
ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের সংযুক্তির ফলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। ইফতারের আগে সাধারণত গাড়ির চাপ বেশি থাকে, কিন্তু এখন আগের মতো দীর্ঘক্ষণ যানবাহন আটকে থাকার ঘটনা ঘটছে না। ঈদের আগে আরো কয়েকটি পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ওইসব মোড়ে যায়ায়াত করা যাত্রীরা বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু গাড়ি সামলাচ্ছেন না, পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করতেও দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল বিকালে মুরাদপুর মোড়ে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমরা প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে কাজ শুরু করি। পথচারীদের রাস্তা পার হতে সহায়তা করি এবং চালকদের ট্রাফিক আইন মানতে উৎসাহিত করি। পুলিশ সদস্যরা আমাদের দিকনির্দেশনা দেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করি। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়েছে।
পাঁচলাইশ মোড়ে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের কারণে আমাদের কাজ সহজ হয়েছে। তারা আমাদের সহায়তা করছে, জনগণকেও সচেতন করছে। ফলে রাস্তায় শৃক্সখলা এসেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবীদের সক্রিয়তা ট্রাফিক ব্যবস্থায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। সড়কের চেহারা পাল্টাতে শুরু করেছে।
এক পথচারী বলেন, আগে রাস্তা পার হতে অনেক সময় লাগত। স্বেচ্ছাসেবকরা এখন সাহায্য করায় আমরা সহজেই রাস্তা পার হতে পারছি।
আরেক ব্যক্তি বলেন, অফিস থেকে বাসায় ফিরতে কিংবা ঘর থেকে ইফতার কিনতে বের হতে আগে ভয় লাগত। এখন অনেকটাই স্বস্তি লাগছে।
নগরীর অন্যান্য এলাকায় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যানজট কবলিত এলাকাগুলোর পাশাপাশি মার্কেটকেন্দ্রিক যানজট নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হলে সুফল মিলবে বলে তারা মনে করেন।