আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি অন্যতম ইন্দ্রিয় হচ্ছে জিহ্বা আমাদের গড় জিহ্বার দৈর্ঘ্য তিন ইঞ্চি। জিহ্বার উপরের পৃষ্ঠ প্যাপিলাইতে অবস্থিত অসংখ্য স্বাদকুঁড়ি দ্বারা আবৃত। বেশিরভাগ লোকেরই ২০০০ থেকে ৪০০০ স্বাদের কুঁড়ি রয়েছে যা পছন্দের সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে সহায়তা করে। জিহ্বা প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান কাজ হলো মানুষের ক্ষেত্রে কথা বলায় সাহায্য করা এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে কন্ঠস্বর সক্রিয় করা। জিহ্বার পাঁচটি অংশ হলো ডগা, শরীর, ভিত্তি, বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ। মোট কথা মুখবিবরের যে অঙ্গ স্বাদগ্রহণে, লেহন করতে এবং মানুষের ক্ষেত্রে কথা বলতে সাহায্য করে তাই জিহ্বা।
জিহ্বা এমন একটি অঙ্গ যা মাঝে মাঝে তলোয়ারের চাইতেও বেশি শক্তিশালী হয়। এই জিহ্বা মানুষের মাঝে প্রেম, ভালোবাসা, মায়া মমতা বাড়াতে পারে, কাউকে শত্রু থেকে বন্ধু বা বন্ধুকে শত্রু করে তুলতে পারে যার জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। এই বিশ্বে বহু নামীদামী, খ্যাতিমান বা সাধারণ মানুষের সর্বনাশ হয়েছে, মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়েছে এই জিহ্বার কারণে। তারপরও আমরা এই জিহ্বাকে নিজেদের বাগে রাখতে ভুলে যাই। আমরা আবেগে, হিংসায়, অহংকারে, ক্রোধের বশে, সরলতায় অনেক সময় এমন কিছু মানুষের কাছে মনের কথা হোক বা অন্যের সমালোচনা হোক যখন করি তা যদি সেই মানুষটির কানে পৌঁছায় তখন তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে, ঝগড়া ঝাটি হতে পারে এমন কি মারামারির পর্যায়েও যেতে পারে।
সেই সমালোচনা বা বলা কথাগুলো সেই ব্যক্তি নিজেও শুনতে পারে কিংবা যার সামনে বলা হয়েছে সে আরো কিছু বাড়িয়ে তাকে বলতে পারে। যার ফলে যে শোনে সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে, ভালো মন্দ বিচার না করে ঐ ব্যক্তির উপর চড়াও হয়। কিংবা এমন আচরণ করে বা অবহেলা, অপমান করে যে ব্যক্তি কথাগুলো বলেছে সে অনেক সময় কিছুই বুঝতে পারে না বা তার করার কিছুই থাকে না। এজন্য নিজের জিহ্বাকে সবসময় আমাদের শাসনে রাখা উচিত। রামসুন্দর বসাক প্রণীত বাল্যশিক্ষায় বিভিন্ন নৈতিক উপদেশ ছন্দে ছন্দে বর্ণিত আছে। সেই অনেকগুলো উপদেশমূলক বাক্যের মধ্যে একটি অন্যতম বাক্য হলো-‘স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে। আমরা কমবেশি সবাই জিহ্বার অসংযতায় আক্রান্ত। কাম, ক্রোধ, লোভ এই তিনটির মূলে রয়েছে আমাদের মহাশত্রু জিহ্বা। তাই আমাদের এই জিহ্বাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।