স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে দরকার সঠিক ব্যবস্থাপনা

| বুধবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষের সুস্থ জীবনযাপন এবং উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে একজন ব্যক্তি তার শারীরিক এবং মানসিক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে, যা তার দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা কেবল ব্যক্তিগত চাহিদার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবায় বড় পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নতুন করে দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এই আদেশ জারি করা হয়। এতে সই করেন সহকারী সচিব এম কে হাসান জাহিদ। অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমদ চৌধুরীকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হককে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমানকে জাতীয় পুষ্টি পরিষদএর মহাপরিচালক এবং ডা. মো. জানে আলম মৃধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) করা হয়েছে। এই পরিবর্তন স্বাস্থ্যখাতকে কতটা উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে একটি জনমুখী সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বলা জরুরি যে, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যে মানুষের অধিকার, কারো দয়া বা করুণার বিষয় নয়এটাও সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে বোঝানো এবং সরকারিবেসরকারি পর্যায়ে যারা সেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় আছেন তাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। অধিকারভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলেই এইসব ক্ষেত্রে অর্জন সর্বোপরি যে কোনো বিপদসংকুল পরিস্থিতি আরও সুদৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করা সহজতর হবে। স্বাস্থ্য অধিকারের দাবিতে দেশে একটি স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সারা বিশ্বের সিদ্ধান্ত। শুধু বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নয়। প্রত্যেক মানুষ, সর্বস্থানে এবং সর্বস্তরে স্বাস্থ্য সেক্টরের একটি অ্যাকসেস থাকতে হবে। এটি আমাদের জন্মগত অধিকার, এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতেই হবে। শুধু আমার পকেটে টাকা নেই বলে আমি স্বাস্থ্যসেবা পাব না, তা কিন্তু হবে না। কাজেই সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য একে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জনগণের কাছ থেকে পরীক্ষা ও ওষুধের খরচ যাতে বেশি রাখতে না পারে সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের নিজেদের দক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে আরেকটু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। মনে রাখা দরকার, রোগীকে চিকিৎসার বিষয়ে কিংবা ফলোআপের বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারলে বাইরে রোগী যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের। একটি সাহসী ও বাস্তবসম্মত ধারণা হলো বাংলাদেশকে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম হাব হিসেবে গড়ে তোলা। এর খরচসুবিধা এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ব্যবহার করে দেশটি প্রতিবেশী অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রোগীদের আকৃষ্ট করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোগীরা সাধারণত উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক পান না, তাই তারা জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে আসেন। বিপুল সংখ্যক রোগীর ভিড়ের কারণে জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসার মান উন্নত করা গেলে ওইসব হাসপাতালে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার মান নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আশার কথা, বিভিন্ন খাতে আমরা অনেক ইতিবাচক জিনিস অর্জন করেছি, কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে স্বাস্থ্য খাতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এখন দরকার সঠিক ব্যবস্থাপনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে