স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করা অত্যন্ত জরুরি

| রবিবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসা সেবা এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, আমরা খালি ওষুধের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। আসলে এটা কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা না। এটা চিকিৎসা ব্যবসা হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন হলে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও ডিভাইসবিষয়ক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী।

নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা যদি সবাই মিলে রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার মধ্যে ফিরে যাই, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব। আমরা রাতকানা রোগের কথা জানি। এক সময় বাচ্চাদের মাঝে এই রোগের অনেক প্রকোপ ছিল। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেলে যেমনসবুজ শাকসবজি, হলুদ ফলমূল খেলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে মানুষের সচেতনতার কারণে এই রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে।

. ওমর ইশরাক বলেন, যেসব প্রস্তুতকারক বা কোম্পানি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি এবং মেশিনারি সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে সার্ভিস চুক্তি করতে হবে। যেন যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা হলে তারা নিজ উদ্যোগে এটা ঠিক করে দেয়। সার্ভিস চুক্তিতে এটা উল্লেখ থাকলে প্রস্তুতকারক বা সরবরাহ কোম্পানি নিজেরাই এটা মেরামত করবে। প্রয়োজনে তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে গিয়ে ঠিক করবে অথবা আমাদের দেশেই যন্ত্রপাতি ঠিক করার জন্য তাদের অফিস স্থাপন করবে। সার্ভিস চুক্তিতে স্পষ্ট করে এসব বিষয়গুলো উল্লেখ থাকলে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি এবং মেশিনারি নিয়ে সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, যদি আমরা রোগ হওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়বে না। মাত্রাতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়াটা ব্যাহত হয়। আমাদের রোগ না হওয়ার জন্য প্রিভেনটিভ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে আমরা দেখি, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক। ক্ষেত্রবিশেষে লাইসেন্স ছাড়াই দিনের পর দিন কার্যক্রম চলছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা ইতোপূর্বে নেওয়া হয়নি। এমনকি প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও কেবল মুনাফার লোভে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে এসব নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। আর তাদের এই অনিয়ম ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে অকালে ঝরে পড়ছে বহু জীবন। হাসপাতালের নামে এসব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে কসাইখানা। যতক্ষণ না বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এসব নজরে আসে না। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের স্বাস্থ্যসেবার মান দিনে দিনে করুণ হওয়ার কারণে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের অর্থনীতিও এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ধীরে ধীরে তা আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। তাই দেশের জনগণের চিকিৎসাসেবার অধিকার নিশ্চিত করতে এই খাতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সরকারের আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সময় এসেছে।

অভিযোগ আছে, এখানে অনেক বড় বড় সিন্ডিকেট জড়িত। বলা হয়ে থাকে, এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সর্বত্র পচন ধরেছে। দেশে যখন করোনা মহামারি চলছে, ১২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সাত লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত যন্ত্রণাময় জীবন কাটাচ্ছে, তখনো স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মহামারিকে নাকি অনেকে লুটপাটের সুযোগ হিসেবেই দেখেছে। স্বাস্থ্য খাতের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগও প্রবল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য খাত আর দশটি খাতের মতো নয়। এখানকার অনিয়ম বহু মানুষের জীবনমৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। নকল এক্সরে ফিল্ম আর ভেজাল বা নিম্নমানের ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে সঠিক রোগ পরীক্ষা কখনো সম্ভব হবে না। আর ভুল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া চিকিৎসা রোগীর কোনো কাজে আসবে না। রোগীর মৃত্যুই শুধু ত্বরান্বিত হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মদুর্নীতি দূর করা অত্যন্ত জরুরি। দুদক ও আর্থিক গোয়েন্দাদের তৎপর হতে হবে। তাঁরা বলেন, নানা ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চিকিৎসাসেবায় দেশ বেশ সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, কিন্তু সত্যি বলতে তা দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি সেভাবে। ক্যানসার, কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপনের মতো জটিল সব রোগের চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব। তবে হতাশাজনক ব্যাপার হলো, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় মানুষের ভরসা শূন্যের কোটায় বিধায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সচেতন বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা নেন দেশের বাইরে। তাই চিকিৎসাসেবায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে