স্বাস্থ্যসেবা : প্রতিরোধমূলক সচেতনতা বাড়াতে হবে

| রবিবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমলেও বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। দেশে স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মতে, প্রতি বছর দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত রোগীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগে ভুগে মারা গেছে। তাদের মধ্যে হৃদরোগীদের হার সর্বোচ্চ, যা ৩০ শতাংশের বেশি। সামপ্রতিক বছরে হৃদরোগের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে গুণগতমান ও উৎকর্ষ বেড়েছে। তবে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা, চিকিৎসা ব্যয় ও আঞ্চলিক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের জীবনাচার ও খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিরোধমূলক সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।

বলা জরুরি যে, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যে মানুষের অধিকার, কারো দয়া বা করুণার বিষয় নয় এটাও সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে বোঝানো এবং সরকারিবেসরকারি পর্যায়ে যারা সেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় আছেন তাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। অধিকারভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলেই এইসব ক্ষেত্রে অর্জন, এসডিজির গোলসমূহ অর্জন করা এবং সর্বোপরি যে কোনো বিপদশঙ্কুল পরিস্থিতি আরও সুদৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করা সহজতর হবে। স্বাস্থ্য অধিকারের দাবিতে দেশে একটি স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সারা বিশ্বের সিদ্ধান্ত। শুধু বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নয়। প্রত্যেক মানুষ, সর্বস্থানে এবং সর্বস্তরে স্বাস্থ্য সেক্টরের একটি অ্যাকসেস থাকতে হবে। এটি আমাদের জন্মগত অধিকার, এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতেই হবে। শুধু আমার পকেটে টাকা নেই বলে আমি স্বাস্থ্যসেবা পাব না, তা কিন্তু হবে না। কাজেই সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এটি দেশের উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন প্রয়োজন তখনই যেকোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা বিনা মূল্যে গ্রহণ করতে পারবে, তখনই আমাদের দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। এ জন্য আরো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হতে পারে; যদিও আমাদের মতো এত জনবহুল দেশের সব মানুষকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কঠিন। তবু সরকারের উদ্যোগ থাকলে তা অসম্ভব হবে না। আমাদের দেশে এখনো সরকারি যে স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান, তা অনেক দেশের চেয়ে ভালো। আমাদের যে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আছে, তা অনেক দেশেই নেই। হাসপাতালগুলোতে ফ্রি সেবা দেওয়া হয়, ওষুধ দেওয়া হয়। তাতেই কি আমরা সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবো। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সেক্টরকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিভিশন করার জন্য, সেটি কিন্তু পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, সেবার মধ্যে আমরা দেখেছিলাম সব জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং সব প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারএগুলো ছিল সেবার অধীনে। এখন দেখা যাচ্ছে যে ২০ শতাংশ শিক্ষা এবং আর ৮০ শতাংশই সেবার অধীনে। এখন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ফ্যামিলি প্ল্যানিংসহ যে ছয়জন ডিজি আছেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনো সমন্বয় মিটিং আমরা আজ পর্যন্ত দেখি না। কখনো কোনো সমন্বয় মিটিং হয় না। তাহলে ফ্যামিলি প্ল্যানিং যে কাজটি করছে আর স্বাস্থ্যসেবা যে কাজটি করছে তাদের মধ্যে ডুপ্লিকেশন অব ওয়ার্ক হচ্ছে। মনিটরিং ঠিকমতো হচ্ছে না; যার কারণে দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বাস্থ্য খাতকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এটি হচ্ছে উপযুক্ত পর্যায়ের মনিটরিং ও পরিকল্পনার অভাবে।

অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে যে বাজেট হচ্ছে, সেটাকে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে হবে অর্থাৎ দুর্নীতিমুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কস্ট ম্যানেজমেন্ট ও পরিকল্পিত উপায়ে করা সম্ভব হলে সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতো। আরেকটা বিষয় হলো মনিটরিং। মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত দুর্বল। আমরা শুধু জানি আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়া দরকারতাই নেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাস্তবায়নে সরকারি যে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, তা আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা চাই, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি সবার আস্থা আসুক, বজায় থাকুক মমত্ববোধ, ধীরে ধীরে আরো উন্নত হোক আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সাধারণ মানুষ পাক তাদের প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা। তবেই নিশ্চিত হবে সবার জন্য স্বাস্থ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে