স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি

| রবিবার , ১৪ মার্চ, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতির আবারও বিপর্যয়কর হতে পারে বলে আশাঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এজন্য তারা জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাধ্য করতে সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন।
গত কয়েকদিনে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে গেছে। সংক্রমণ লাগাতার বেড়ে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি বেড়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ৩২৭ জনে নেমে এসেছিল। এরপর থেকে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। তাদের মতে, কিছুদিন সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। মানুষ মনে করছে, করোনা আর বাড়বে না বা করোনা নেই। এর ফলে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমে এসেছে। এছাড়া যারা করোনা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তারাও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাদ দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব কেউ মেনে চলছেন না। জনসমাগম, বিভিন্ন ধরনের জমায়েত, সভা-সমাবেশে, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। মানুষ উন্মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে, পর্যটন এলাকায় ভিড় বাড়ছে। এসব কারণে করোনা সংক্রমণ আবার দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সংক্রমণ কমাতে হলে মানুষকে এখন থেকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষকে বাধ্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে বাধ্য করতে প্রয়োজন হলে সরকারকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ারও পরামর্শ দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, পর পর কয়েক সপ্তাহ করোনা সংক্রমণ কম থাকায় মানুষ ভেবে নিয়েছিল করোনা নেই। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ভেবেছে স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও চলবে। এসব কারণে মানুষ ব্যাপক অসচেতন হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডে যে নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেটা আমাদের দেশে ধরা পড়েছে। ভারতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ভেরিয়েন্ট ধরা পড়েছে। আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখতে হবে এই ধরনগুলো ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা। এখনই মানুষকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উদ্বুদ্ধ না হলে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে এখনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মোস্তাক আহমেদ বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এবং এটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ মাস্ক পরছে না, স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানছে না। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। যারা টিকা নিচ্ছেন তারা টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানা বাদ দিচ্ছেন। আর যারা মাস্ক পরছে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে কথা বলছে। বদ্ধ রুমে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। কার মধ্যে করোনাভাইরাস আছে সেটার লক্ষণ না থাকলে তো বোঝা যাবে না। বলা হয় গরিব মানুষের করোনা হয় না। এটা ঠিক কথা নয়। বরং তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যারা মাস্ক কিনতে পারছে না তাদের মাস্ক দেওয়াসহ সামাজিক সহযোগিতা দিতে হবে। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন কিনা, আইসোলেশনে যাচ্ছেন কিনা বা যারা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাচ্ছেন তারা আইসোলেশনে থাকছেন কিনা-এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। কঙবাজারসহ পর্যটন এলাকায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহোটেল কক্ষে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ
পরবর্তী নিবন্ধচলতি সপ্তাহের শেষে মাঝারি কালবৈশাখী