দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়ছে উদ্বেগজনকহারে। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের অনীহার কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেকের জড়ো হওয়া, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে মহামারি চলে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ‘মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছে না এবং মাস্ক পরছে না। সে কারণেই এখন সংক্রমণের হার বেশি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আর লোকজনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা পেছনে ফিরে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কী ঘটেছে তা আমরা দেখতে চাই না। সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ সীমিত করতে আমরা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ডিসিদের নির্দেশনা পাঠিয়েছি।’ এরই মধ্যে দেশে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব নির্দেশনা অবিলম্বে সারাদেশে কার্যকর হবে এবং আপাতত অন্তত দুই সপ্তাহ বলবৎ থাকবে। নির্দেশনায় রয়েছে : সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণের এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে। বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে, মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে, পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচার ব্যবস্থা করতে হবে, ওষুধের দোকানেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে, স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্ক পরাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে, শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে, অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক না পরলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে, স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয়- এমন যে কোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ আসনের বেশি মানুষ বসানো যাবে না, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।
সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতেই বলা হয়েছিল, টিকা পাওয়া মানেই করোনা থেকে মুক্তি নয়। টিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিও সবাইকে মানতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের যেমন উদাসীনতা আছে, তেমনি প্রশাসনও অনেকটা উদাসীনতা দেখাচ্ছে।
সরকার নতুন করে যে বিধিনিষেধ দিয়েছে এতেই কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে, না-কি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়ও কোন পরিবর্তন আনতে হবে? এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আসলে কেউ আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটাই ভালো। এখন গত জানুয়ারি থেকে আক্রান্তের হার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যেও শৈথিল্য চলে এসেছিল। বিশেষ করে যারা টিকা নিয়েছেন তারা তো আর স্বাস্থ্যবিধি মানছিলেন না। ফলে এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এখন করোনাভাইরাসের যে ধরনের পরিবর্তনই হোক না কেন, আমাদের কিন্তু চিকিৎসা একই। সাপোর্টিভ টিটমেন্ট। ফলে যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। এখন আমাদের স্বাস্থ্যবিধির উপর অনেক বেশি জোর দিতে হবে।’ করোনাকে মোকাবিলা করতে সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন সর্বাত্মক ও সমন্বিত পদক্ষেপ।