স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চান প্রধানমন্ত্রী

| বুধবার , ১২ জুলাই, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আজ সময় এসেছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট৩ ও অভীষ্ট১৭এর আলোকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করার। যে প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা। এ উদ্দেশ্য পূরণে স্পষ্ট বৈশ্বিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি লক্ষ্যঅভিমুখী, নিবেদিত কূটনৈতিক তৎপরতার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন সরকারপ্রধান।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘জনস্বাস্থ্য ও কূটনীতি’ বিষয়ক দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং কোভিড১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় অতীতের সাফল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ এই প্রচেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কোভিড১৯ মহামারী প্রমাণ করেছে, আমরা যতই নিজেদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন ভাবি না কেন, আমাদের সকলের ভাগ্য আসলে একসূত্রে গাঁথা। আমরা কেউ সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি।

বৃহত্তর স্বার্থে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমত, ভবিষ্যৎ জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সাড়াদান নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাময়যোগ্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে এবং ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বিস্তাররোধে সবচেয়ে ভালো উপায়গুলো বিনিময়ে একত্রে কাজ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলধারায় যুক্ত করতে এবং পানিতে ডুবে যাওয়া ও দুর্ঘটনার মত প্রাণঘাতী বিপর্যয় রোধে আরও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় সুপারিশে। তিনি বলেন, চতুর্থত, নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা অবকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেষ ও পঞ্চম সপুারিশে বলেন, মা, শিশু এবং কিশোরকিশোরীদের স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট৩ অর্জনের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে তা আগামী ৭৫ বছর এবং তার পরেও অর্থপূর্ণভাবে সমগ্র মানবজাতির সেবা করে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের শুরুর দিকে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও কোভিড১৯ মহামারী আঘাত হানে। সামগ্রিক কোভিড ব্যবস্থাপনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। মহামারীর চ্যালেঞ্জিং সময়েও বাংলাদেশ যে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আশ্রয় চাওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গার কথা ভুলে যায়নি, সে কথাও বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চেকআপ, টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমার এবং আমার দেশের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের বিষয় যে সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক বাংলাদেশের উদ্ভাবনী স্বাস্থ্যসেবা মডেলকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং এটাকে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। ‘এমডিজি পুরস্কার ২০১০’ শিশুমৃত্যু হ্রাসে সাফল্যের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশিদের ‘শক্তি দেখানোর চেষ্টায়’ বিএনপির নতুন কর্মসূচি : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬