স্বাস্থ্যখাত : অনিয়ম-দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না

| বুধবার , ১৬ জুন, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে অর্থ ব্যয়ে দুর্নীতি, স্বাস্থ্যে জনবল নিয়োগে লেনদেন বাণিজ্যও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সংকট মোকাবেলায় সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাবের বিষয়টিও এসেছে গবেষণায়। ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলা কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল আয়োজনে প্রকাশ করা হয়। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন বলেন, করোনা সংক্রমণের এক বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা যায়নি। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ৩০০ আইসিইউ শয্যা, ১৬৬টি ভেন্টিলেটর ও ৩৩৫টি হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা ব্যবহার হচ্ছে না।
প্রতিবেদনের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবেলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় হলেও তাতে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। করোনার সংক্রমণ চলাকালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া টিকার প্রাপ্তি, মজুদ ও টিকাদানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত বলেও জানান তিনি।
এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্য খাতে কোথায় দুর্নীতি হয়েছে- তা দেখাতে বলেছেন। স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশ বা সংস্থা প্রশংসা করেছে বাংলাদেশের। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। কিন্তু টিআইবি ঘরে বসে একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আমরা করোনা শনাক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে। অথচ করোনা শনাক্তে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে কোনো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আইসিইউ বাড়াতে পারিনি বলে টিআইবি যে দাবি করছে এটা সঠিক নয়। গত বছর যেখানে তিন থেকে চারশ’ আইসিইউ ছিল, সেখানে এখন ১ হাজারের বেশি আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের নাজুক অবস্থার চিত্রটি প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। দরকারি উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব, নিয়োগ আর কেনাকাটায় একের পর এক দুর্নীতির খবর যেন এই খাতের বেহাল দশাকেই তুলে ধরেছে। মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোভিড টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি, জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতালের মতো বড় আর আলোচিত ঘটনার পরেও, গত তিনমাসেই স্বাস্থ্য খাতে ১৮০০ জনবল নিয়োগে কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব, শত শত কোটি টাকার কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর আবার বাংলাদেশের গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ২০২০ সালের বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ নিচে নেমে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১২তম আর এই অবনমনের পেছনে করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। টিআইবি বলছে, আমূল সংস্কারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের সঠিক শাস্তি না হওয়ার কারণেই এই খাত দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়ম দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বহুদিন ধরে স্বাস্থ্য খাতে যে অনিয়ম চলে আসছে সেটি দূর করে স্বাস্থ্য খাতের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর ভিত্তিক বড় বড় হাসপাতালগুলোতেই কেবল নজরদারি বাড়ানো হলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে