স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন আছে, সেবা নেই

মীরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র উপজেলার ৭ ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভিজিটর শূন্য

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ৩১ মে, ২০২৫ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা দিনে দিনে চরম হতাশাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কোন ভিজিটর নেই। স্থানীয়রা কেউ কোন চিকিৎসা, পরামর্শ বা ঔষধ বা সুবিধা তো পাচ্ছেনই না বরং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতর দেখা যায় ভূতের মতো পরিবেশ। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখা যায় একই চিত্র। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রটির করুণ দৈন্যদশা। এ সময় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল স্থানীয় এক গৃহবধু বিনা রানী দাস (৪৫ )। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ মাস আগে একদিন গিয়ে খোলা পেয়েছিলাম। কিন্তু কোন ঔষধ বা যে জন্য গিয়েছি তার সমাধান কোথায় পাব সেটারও কোন পরামর্শ পাইনি।

স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম (৪৪) বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে পারব শুনেছিলাম। কিন্তু গত এক বছর খুলতেও দেখিনি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন চৌধুরী (৬৫) আক্ষেপ করে বলেন, হাসপাতালটি হবার পর এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল আর দুরে যেতে হবে না। এখানেই আমরা বিভিন্ন চিকিৎসা অথবা পরামর্শ হলেও পাবো। কিন্তু এই পর্যন্ত শুধু ঘরটিই দেখা যাচ্ছে। সেবা নিতে কাউকে ভুলেও যেতে দেখি না।

স্থানীয় কয়েকজনের মাধ্যমে জানতে পারি দুর্গাপুর বাজারের ফার্মাসিস্ট শুভ দত্ত উক্ত হাসপাতালের সহকারী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশার বিষয়ে জানতে চাইলে শুভ দত্ত বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে একবার গিয়ে অফিস খুলে বসি। ১১টার পর মাঠে চলে যাই। তাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কখনো দেখা যায় না প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে মাঠেই বেশি থাকতে হয়, কারণ আমি তো কোন ঔষধ বা পরামর্শ দিতে পারব না।

শুধু এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিই নয় উপজেলার ইছাখালী, কাটাছরাসহ আরো ৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একই দশা। হাইতকান্দি ও সাহেরখালীর মধ্যবর্তী কমরআলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তো আরো আগেই পরিত্যক্ত ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা অমিত মোদকের মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে উক্ত বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন কেন্দ্রটি পার্শ্ববর্তী ৯নং মীরসরাই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শক পিংকি দাসের অতিরিক্ত দায়িত্বাধীন। কিছুদিন পূর্বে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভিজিটে এসেছিলেন। তখন তারা এখানে নতুন করে ভবন নির্মাণের ও কার্যালয় সংস্কার প্রস্তাবনা দেন। আর এখানকার রোগীগুলো মাঠ কর্মীদের পরামর্শে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে যেতে বলা হয়।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিতেই ভিজিটর নিয়োগ নেই। তাই আমাদেরও সাপ্তাহিক রুটিন করে অন্য ভিজিটরগণকে দিয়ে এগুলো চালাতে হয়। আবার ডিডিএস কিট ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে এই সংকটের অবসান হলে সবাই ঠিকমতো স্বাস্থ্য সেবা পাবেন বলে আশা করেন বলে জানান মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হোসাইন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কোরবানিতে পছন্দের শীর্ষে লাল বিরিষ
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণে ধসের ঝুঁকিতে সাড়ে তিন হাজার পরিবার