স্বামী বিবেকানন্দ আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, ধর্মসংস্কারক, সমাজ চিন্তাবিদ ও লেখক। অসাধারণ বাগ্মী ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বিবেকানন্দ নানা সংস্কার, প্রথা ও আচারের বাতাবরণ ছিন্ন করে ভারতবর্ষের মানুষকে মানবতাবাদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ করায় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি আধুনিক ভারতের অন্যতম স্রষ্টা হিসেবে পূজিত।
স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। জন্ম ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার সিমুলিয়ায়। মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন ও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন শেষে ১৮৮৪ সালে জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে বি.এ পাস করেন তিনি। পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে নিবিড় পাঠচর্চা করেন। সুকণ্ঠ বিবেকানন্দ ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী। গায়ক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ছাত্রাবস্থায় যোগ দেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে। পরবর্তীসময়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, ব্রতী হন উদার ধর্মসত্য প্রসারে। শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁরই আদর্শে বিবেকানন্দ বরানগরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন স্থাপন করেন। শান্তি, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বে ভারতবাসীকে সচেতন করার প্রয়াসে বিবেকানন্দ নিঃসম্বল পরিব্রাজক হিসেবে সারা ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ মুগ্ধ ছিলেন বিবেকানন্দের ঋজু ব্যক্তিত্বে, বহুমুখী প্রতিভায় এবং মানবতাবাদী আধ্যাত্মিকতায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশে, মানুষকে আত্মসচেতন করতে এবং উদার হতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ধর্ম মহাসভায় যোগ দেন বিবেকানন্দ। তাঁর অসাধারণ বাগ্মীতায় আকৃষ্ট হন ধর্মসভায় যোগদানকারী অনেকে। ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। বিবাদ নয় সহায়তা, বিনাশ নয় গ্রহণ, মতবিরোধ নয় সমন্বয় ও শান্তি – এই ছিল বিবেকানন্দের বিশ্বাস। দেশে ও বিদেশে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের মাধ্যমে বিবেকানন্দ মানবসেবার নতুন ধারার সূচনা করেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। এসবের মধ্যে ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘ভাববার কথা’, ‘বর্তমান ভারত’, ‘সখার প্রতি’, ‘নাচুক তাহাতে শ্যামা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই বিবেকানন্দ প্রয়াত হন। ব্যক্তিত্বগুণে, চিন্তায় ও কর্মে ভারতবাসীর জীবনে তাঁর প্রভাব গভীর, ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।