টানা কয়েকদিনের অচল অবস্থা কেটে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে পণ্য রপ্তানির স্বাভাবিক কার্যক্রমও। কারখানা থেকে বন্দরে পণ্য পাঠানোর প্রবাহ বেড়েছে। বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস এবং জাহাজীকরণে গতি এসেছে। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও ছুঁয়েছে স্বাভাবিক সময়ের মাইলফলক। কাস্টমসের কার্যক্রমে গতি পেয়েছে। বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। অচল অবস্থা কেটে যাওয়ায় আমদানি রপ্তানিকারকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মুখ থুবড়ে পড়েছিল দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দর এবং কাস্টমসের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারফিউ, সাধারণ ছুটি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এলসি খোলাসহ রপ্তানি মূল্য দেশে আনাও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্দরের ইয়ার্ডে কোটি কোটি টাকার পণ্য ও কাঁচামাল নিয়ে কন্টেনার আটকা পড়া, বন্দর থেকে পর্যাপ্ত পণ্য না পেয়ে স্বল্প সংখ্যক কন্টেনার নিয়ে বিদেশি জাহাজের বন্দর ত্যাগ, সময়মতো পণ্য পাঠাতে না পারায় ইউরোপ আমেরিকামুখি মাদার ভ্যাসেল মিস করাসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছিল। গত বুধবার থেকে কারফিউ শিথিল করে সরকারি বেসরকারি অফিস–আদালত এবং ব্যাংকগুলো খুলে দেয়া, সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালুর ফলে টানা কয়েকদিনের অচল অবস্থা ঘুচতে শুরু করে। গতকালও দিনে স্বাভাবিক ব্যাংকিংসহ বন্দর এবং কাস্টমসে পুরোদমে কাজ চলেছে। রাস্তায় চলাচল করেছে পণ্যবাহী গাড়ি। এতে কারখানা এবং ডিপোগুলোতে আটকা পড়া কন্টেনার বন্দরে পৌঁছানো, বন্দর থেকে কাঁচামাল আইসিডি কিংবা কারখানা নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসে।
গতকাল বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর এলসি খোলা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বিদেশে বিভিন্ন রপ্তানিকারকের আটকা পড়া রপ্তানি মূল্যও দেশে আসতে শুরু করেছে। গত দুইদিনে কয়েকশ’ কোটি ডলারের রপ্তানি মূল্য দেশে এসেছে বলে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, ইউসিবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ব্যাংকিং সময় কিছুটা কম থাকলেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। কিছুটা বাড়তি চাপ থাকলেও ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদান করেছে। বিলম্বে ব্যাংকিং শুরু করার প্রভাব গ্রাহকদের বুঝতে দেয়া হয়নি বলেও একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু কিংবা ঘণ্টা দুয়েক আগে শেষ করতে হলেও তার কোন প্রভাব ব্যাংকের গ্রাহকদের বুঝতে দেয়া হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করেছি। গতকালও প্রচুর লোকজন নগদ টাকা তুলেছেন, আবার অনেকেই জমাও দিয়েছেন। দেশের নানা স্থানে টাকা পাঠানো হয়েছে। আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক পরিশোধসহ সরকারি নানা রাজস্বও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো স্বাভাবিকভাবে আদায় করেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার প্রভাব পড়েছে বন্দর এবং কাস্টমসের কার্যক্রমে।
গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩ হাজার ৬০৪ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য ডেলিভারি হয়েছে। বন্দরে বার্থিং নেয়া জাহাজে আমদানি পণ্য বোঝাই ২ হাজার ৪৪৭ টিইইউএস কন্টেনার নামানো হয়েছে, জাহাজীকরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৯৫ টিইইউএস কন্টেনার। যা স্বাভাবিক সময়ের কাছাকাছি বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, গতকাল বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৯৭৫ টিইইউএস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক সময়ের মতোই পুরোদমে চলছে। চট্টগ্রামের একজন শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক গতকাল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এটি আমাদের জন্য খুবই স্বস্তির। বিদ্যমান ধারা অব্যাহত রাখা গেলে থমকে যাওয়া আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।