স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র আজাদীকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া সময়ের দাবি

ফেরদৌস আরা রীনু, প্রাবন্ধিক | বৃহস্পতিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীর আমি নিয়মিত পাঠক। লেখালেখি করি এই আজাদীতেই। এর আগেও আমি লেখার চেষ্টা করেছি আজাদী নিয়ে। এবারও বলতে চাই সেই বিষয়ে, আজাদীকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক।

আমরা জানি সংবাদপত্র হলো একটি মুদ্রিত প্রকাশনা, যার মধ্যে থাকে বর্তমান ঘটনা, তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, বিভিন্ন ফিচার এবং বিজ্ঞাপন…..এইসব মেনেই ‘দৈনিক আজাদী’ আজ ৬৫ বছরে পদার্পণ করলো। ‘দৈনিক আজাদী’ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্র, ১৯৬০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর যার যাত্রা শুরু। বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রাচীনতম দৈনিক। তার আগের পত্রিকা হিসেবে এই বাংলায় শুধু দুটি দৈনিক এখনো চালু আছে। একটি ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ আর অন্যটি ‘দৈনিক সংবাদ’। ৫ সেপ্টেম্বর আজাদী পত্রিকাটি প্রকাশের কারণ হলো ঐদিন ছিল ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)। এই দৈনিকটি ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সকালে প্রকাশিত হওয়ার কারণে স্বাধীন বাংলার প্রথম দৈনিক হিসেবে মর্যাদার আসনে আসীন।

১৯৬০ সালে প্রকাশিত আজাদী ষাটের দশকের সাদাকালো সাদামাটা হলেও তার আবেদন এখনো রঙিন। চট্টগ্রাম জনপদের সুখদুঃখ, ইতিহাস ঐতিহ্য, সমস্যাসম্ভাবনা, অবহেলা ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরে ৬৪ বছর ধরে অত্যন্ত সততার সাথে এগিয়ে চলছে, এই দৈনিক। আজাদীর প্রতি রয়েছে চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসা, রয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে পত্রিকাটি দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র এম এ মালেক এর পরিচালনায় ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এর সম্পাদনায় নিরলস পরিশ্রমের ফসল আজাদীর নিয়মিত পথচলা। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুর পর এম এ মালেক সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। তিনি তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক পরিবর্তন গ্রহণ করে এটিকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়ার পথ প্রদর্শক। আজাদীর প্রিন্ট সংস্কারের পাশাপাশি অন লাইনে দুটি সংস্করণ রয়েছে যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চট্টগ্রামের মানুষ অবস্থানরত, যারা আজাদীর পাঠক তারা নিয়মিত ব্রাউঞ্জ করেন।

অবহেলিত চট্টগ্রামের উন্নয়ন এবং এই জনপদে আলোকিত মানুষ সৃষ্টিতে দৈনিক আজাদী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে অনবরত। এই পত্রিকার বিষয়বস্তু জনসাধারণের জন্য যুক্তিসংগত প্রবেশযোগ্য। এটি এমন একটি পত্রিকা যেটি প্রতিদিন নিয়মিয়তভাবে প্রকাশিত হয়ে তথ্য প্রকাশনায় হালনাগাদ এবং সর্বজনীন। এই পত্রিকার প্রতিদিন আলাদা আলাদা ফিচার নতুন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশ করে একদিকে যেমন সৃজনশীল মানুষ তৈরি করে যাচ্ছে অন্যদিকে এর পাঠকদের বৈচিত্র্যময় স্বাদ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে।

দৈনিক আজাদীকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা এখন সময়ের দাবি। কেননা মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দৈনিক আজাদী জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এত বছর ধরে ভোর চারটায় পত্রিকাটি হকারদের কাছে পৌঁছে দিয়ে পাঠকদের মনের খোরাক দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর আধুনিক বিপ্লব এবং সংগ্রামের ইতিহাসে সংবাদ পত্রিকার ভূমিকা যেমন আনেক তেমনি ষাটের দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যত আন্দোলন সংগ্রাম সব কিছুর সংগে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিল দৈনিক আজাদী।

চট্টগ্রামের অধিবাসীরা যেখানে থাকুক না কেন অন্তত দিনে একবার আজাদী পড়ুক এবং বিশ্বের দরবারে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের জাতিকে প্রেরণায় প্রেরিত করে যাবে অনন্তকাল। কেননা চট্টগ্রামের আজাদী, আজাদী চট্টগ্রামের’।

মানবমুক্তি ও সমাজ মুক্তির দিকে লক্ষ্যে রেখে কাজ করে যাবে এবং সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুনমাত্রাও যোগ করবে আজাদী এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈচিত্র্যে চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতাকামী বাঙালির মানসগঠনে আজাদীর ভূমিকা