বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে জনগণের কাছে পৌঁছেনি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, গবেষণা ও প্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা জনতার কাছে ছড়িয়ে দিতে তরুণদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে। যে চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সে চেতনাকে শাণিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদের। গত মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণস্থ শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে এসব কথা বলেন মেয়র।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ভূমিকা ঐতিহাসিক। শুধু নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের ডাকে বিশাল জনসভায় প্রথম জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচির ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদান করেন। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পাকিস্তানিদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া অপারেশন জ্যাকপট যার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ পানিতে তলিয়ে যায় তাও পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।
বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন : স্বাধীনতা দিবসে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান মেয়র। এপর সেখানে বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্বোধন করেন মেয়র। এ কর্নারে বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই– অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন রাখা হয়েছে। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত সব উক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে দেয়াল। চসিকে আসা সেবাগ্রহীতারা অপেক্ষমাণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন নানা কিছু এ কর্নার থেকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আবদুস সালাম মাসুম, নুরুল আমিন, গোলাম মো. জোবায়ের, সলিম উল্ল্যাহ, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুল মান্নান, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, নূর মোস্তফা টিনু, আনজুমান আরা ও চসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা–কর্মচারীবৃন্দ।
চসিকের স্বাধীনতা স্মারক সম্মাননা : নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মহান স্বাধীনতা স্মারক সম্মাননা পদক–২০২৪ পেয়েছেন ১০ জন। গত মঙ্গলবার বিকেলে নগরের থিয়েটার ইন্সটিটিউটে সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত ও মরণোত্তর পদক পাওয়াদের পরিবারের সদস্যের হাতে পদক তুলে দেন মেয়র।
পদকপ্রাপ্তরা হলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বপন চৌধুরী (মরণোত্তর), স্বাধীনতা আন্দোলনে জাহান আরা আঙ্গুর (মরণোত্তর), চিকিৎসায় ডা. মো. এখলাস উদ্দিন (মরণোত্তর), ক্রীড়ায় জর্জ ম্যাকওয়া (মরণোত্তর), শিক্ষায় অধ্যাপক মোহাম্মদ ফজলুল হক, সংগীতে সৈয়দ মহিউদ্দিন, শিল্প উন্নয়নে মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সমাজসেবায় সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন, সাংবাদিকতায় ডেইজী মউদুদ ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণে মো. আলমগীর অপু। অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, মেয়র দেশ গড়ার কাজে সবাইকে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মাননা জানাচ্ছি আমরা। আপনারা দেশপ্রেম দিয়ে, শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এ আমাদের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ফজলুল হক, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ডেইজী মউদুদ। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম।