ছাব্বিশে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১এর এই দিনে দীর্ঘ পরাধীনতার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছিল স্বাধীনতা, শুরু হয়েছিল সশস্ত্র প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও গুরুত্ববহ। আজ স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকী। ১৯৭০এর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে জয়লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বাঙালিদের হাতে শাসনভার তুলে দেওয়ার পরিবর্তে শুরু করে নানা ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ১ মার্চ পূর্ব নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করলে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু আহবান জানান মুক্তি সংগ্রামের। এরপর এলো ২৫শে মার্চের কালরাত্রি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র–নিরীহ জনগণের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ ঘটালো রাতের অন্ধকারে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতারের আগে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ঘোষণাপত্র পাঠালেন। ২৬শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হলো স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার আন্দোলন হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়। বাংলার মুক্তিকামী জনগণের জীবনে একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ এসেছিল বহু ত্যাগ আর আত্মদানের বিনিময়ে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৪’এর সাধারণ নির্বাচন, ৬২’এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০’এর নির্বাচন, ৭১’এর রক্তাক্ত মার্চ এমনই একের পর এক আন্দোলন সংগ্রামের সিঁড়ি ডিঙিয়ে তা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতায় রূপ পেল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ছাব্বিশ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র প্রতিরোধে সূচনা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের। ১৯৭১–এ বাংলাদেশে পাকবাহিনী ও এদেশীয় দোসরদের পরিচালিত গণহত্যায় প্রাণ বলিদান ঘটেছিল ত্রিশ লাখ মানুষের, লাঞ্ছিত হয়েছিল তিন লক্ষাধিক নারী আর দেশ ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল প্রায় এক কোটি মানুষকে। স্বাধীনতা দিবস তাই একদিকে ত্যাগ আর বেদনায় মহীয়ান, অন্যদিকে বাঙালির আত্মপরিচয়ের গৌরবে সমুজ্জ্বল।