ছাত্রজীবন থেকে দেশ বিরোধী যেকোনো চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার জন্য নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখলেও পরিতাপের বিষয় একটা স্বীকৃতির জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে। সহযোদ্ধাদের হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ অবস্থায় আছেন তিনি। জাতীয় দিবসে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। কথাগুলো বলছিলাম পটিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমেদের সম্পর্কে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের এ বীরের।
নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই অকুতোভয় বীর সেনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান মৃত্যুর আগে। সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত শিক্ষাবিদ মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমদ বর্তমানে নিজ বাড়িতে জীবনের শেষ সময়টুকু অতিবাহিত করছেন নানা দুঃখ কষ্টে। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজের গনিত বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হই। স্যারের গাড়ি ছিল সবার আগে। জিপে রওয়ানা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশে। ইমাম গাজ্জালি কলেজ পার হবার পর আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। জানতে পারি স্যারের উপর হামলা হয়েছে। এ হামলায় স্যারসহ অনেকে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে হানাদার বাহিনী আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমার মা-বাবার উপর অনেক নির্যাতন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭৫ সালের পর থেকে আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলাম। এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম কাতারের বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরে শহীদ এখলাছুর রহমানের লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকলেও শহীদ গেজেটের জন্য ৫০টি বছর প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হয় । অবশ্য ইতিহাস ঐতিহ্য জুড়ে কিছু স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে এ মহান বীর শহীদের নামে। রণাঙ্গনে ১ম সারির বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ রফিক আহমদ প্রচার বিমুখ। বর্তমানে তিনি খুব অসুস্থ। মস্তিস্কের এক পাশে ব্লক ধরা পড়ে। যার কারণে অনেক কথা এখন ভুলে যাচ্ছেন।বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমেদ ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। রফিক আহমেদ পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম কাতারের সৈনিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। বয়সের ভারে এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমেদ। তারপরও আশা রাখেন মৃত্যুর আগে আদৌও স্বীকৃতি মিলবে কিনা এটাই এখন তার প্রশ্ন?
মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমদ ১৯৪৭ সালের ৭ আগষ্ট পটিয়ার কোলাগাঁও নলান্ধা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন । ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৯ সালে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে বি.কম, স্বাধীনতা উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রফিক আহমদের ছেলে মোজাম্মেল হক এরশাদ বলেন, ৬৯ এ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে ১১ দফা আনদোলনের অগ্রসৈনিক ও রনাঙ্গনে অবিস্মরণীয় অবদান থাকা সত্বেও স্বীকৃতি মেলেনি আজো। বর্তমানে আমার বাবা অসুস্থ । মস্তিস্কের এক পাশে ব্লক ধরা পরে। যার কারনে অনেক কথা এখন ভুলে যাচ্ছেন। তবে এখনো আমরা স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছি। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।