বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের সেথা নাইকো শেষ। কেউবা বলে ধানের দেশ, কেউবা বলে গানের দেশ, আমরা বলি প্রাণের দেশ বাংলাদেশ। লক্ষকোটি প্রাণের দেশ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের জন্মদিন তথা স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ।
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের পর বৃটিশদের পরাস্ত করে উপমহাদেশে জনগণ পেয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তান রাষ্ট্রে এর দুটি অংশ ছিল অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ যা বর্তমান পাাকিস্তান। কিন্তু স্বাধীনতার পর শুরু হয় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বাঙালীদেরকে নূতন করে শোষণ এবং পরাধীনতার শৃংখলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র।
পাকিস্তানী হানাদারদের শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালীরা। বাঙালী জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জিবীত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশে ’৪৮ এ বাংলাভাষার দাবীতে গড়ে উঠা আন্দোালন এর পথ বেয়ে বায়ান্ন’র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন; ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ; ‘৫৮ এর মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন; ‘৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন; ‘৬৬ এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন; ‘৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা; ৬৯ এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান; এবং ৬ দফা ভিত্তিক ৭০ এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন; সর্বশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুুর ”এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালী জাতি। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলংকজনক অধ্যায় একটি কালরাত। সময় যখন রাত ১১টা বেজে ২৫ মিনিট ঠিক তখনই আরম্ভ হল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন নিরিহ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্থানী সৈন্যবাহিনীর হানাদার দানবেরা। যারা ঘুমন্ত বাঙালীর উপর চালিয়েছিল বর্বর নির্যাতন। শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে জঘন্যতম অন্যায় সেদিন সংঘটিত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু সে সময় প্রমাদ গুণছিলেন কখন তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। শুধু গ্রেফতার নয়ু ইয়াহিয়ার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতারের পর হত্যা করতে পারে জেনেও তিনি সেই সময় জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চের কালরাত্রিতে গণহত্যা শুরুর পর তারই কন্ঠে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাটি ছিল এরকম: “এ হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহবান জানাচ্ছি। পাকিসতান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।” এই ঘোষণাটি বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোণ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এর সংগে তিনি আরো একটি বার্তা পাঠান।
“পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।” বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাঁকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় সরাসরি বলেছেন ’আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন’ এবং তিনি পাক শাসকবর্গকে শাসকবর্গ না উল্লেখ করে বলেছেন ’দখলদার বাহিনী’। এখান থেকেই পরিস্কার হয়ে যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশ একটা নূতন রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ ২৬শে মার্চই বাংলাদেশের জন্মদিন এবং সেদিন বাংলাদেশের উপর যে জায়গায় অবস্থিত যত পাকসেনারা ছিল প্রত্যেকেই দখলদার বাহিনী হিসাবে চিহ্নিত হবে। ১৯৭১ সালে যে নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে তা শুধুমাত্র এই দখলদার পাকিসেনাদের উৎখাত করার জন্যই পরিচালিত হয়েছিল। কেননা সেই দিনই পাকি শাসকবর্গ আর শাসকবর্গ থাকে না; বঙ্গভূমিতে দখলদার বাহিনী হিসাবে অভিহিত হয়ে আসছে।
১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ বাঙালির ওপর গণহত্যা ও নিধনযজ্ঞ পরিচালনার পরিকল্পনা অনুমোদন করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এর আগে ১৮ই মার্চ মেজর জেনারেল খাদিম রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশন ব্লিজ (BLITZ) পরিবর্তন করে অপারেশন সার্চলাইট এর রূপরেখা তৈরি করেন। অপারেশন শুরু করলে যাতে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য ইপিআর ও অন্যান্য বাহিনীর বাঙালি সেনাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার এবং বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ও পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনকে নেতৃত্বহীন করার জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় লিপিবদ্ধ নেতাদের মধ্যে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ওসমানী, সিরাজুল আলম খান, আবদুল মান্নান, আতাউর রহমান খান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, অলি আহাদ, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল, রব, মাখন এবং অন্যান্য ছাত্রনেতা।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকি বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গড়ে উঠে প্রতিরোধ। শুরু হয় জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ। আর সে যুদ্ধে জনগণের সাথে লিপ্ত হয় ছুটিতে থাকা, অবসরপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ করা বাঙালী পুলিশ, ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যগণ। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে বাংলাদেশকে পাকি বাহিনীর হাত থেকে মুক্তাঞ্চলে পরিণত করে রেখেছিল। বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ে দীর্র্ঘ নয় মাসের সশস্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং কোটি জনতার ত্যাগ তিতিক্ষার ফলে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূত্থান ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। বাংলাদেশ পেয়েছিল একটি স্বাধীন ভূখন্ড। একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত এবং বিশ্বের বুকে এক গর্বিত পরিচয়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যে জঘণ্য হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল তার পেছনে নীলনকশাকারী ছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং জেনারেল টিক্কা খান। তাদের সাথে আরও একজন পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি হচ্ছেন পিপল্স পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। যিনি ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর কাছে বিপুল পরিমাণ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন এবং এ পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতেই তিনি এই চরম ঘৃণিত পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং জেনারেল নিয়াজির বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি জেনালের ইয়াহিয়া খান জেনারেল টিক্কাখানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাঙালি যত সেনাবাহিনী আছে, ই.পি.আর., ই.বি.আর যত সদস্য আছে তাদেরকে নিরস্ত্র করতে এবং সামরিক বাহিনীকে নিরস্ত্র করতে হুকুম দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেনারেল টিক্কা খান তার আদেশকে অমান্য করে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছিলেন। জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন ‘I want the land only, not the people.’ আমি মানুষ চাই না শুধুমাত্র ভূমি চাই এবং এই গণহত্যার আরও একজন সমর নায়ক মেজর জেনারেল রাওফরমান আলী বলেছেন, ’The green land of east Pakistan will be painted red.’ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যাগুলোর মধ্যে একটি হয়ে আছে। এরি মধ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ২৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ এই গণহত্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, জগন্নাথ হলের নৃশংসভাবে ছাত্র এবং শিক্ষকদের হত্যা করা, জগন্নাথ হলে গণকবর দেওয়া হয়। নারীদের উপর চালানো হয় নৃশংস নির্যাতন। সারা ঢাকায় চালানো হয় অগ্নিসংযোগ। সেদিন ঢাকা নগরীকে দেখে মনে হয়েছিল সেই বাগদাদ কিংবা বোখরার হালাকু খান কিংবা চেংগিস খান এর চেয়েও বড় বড় নরপিশাচরা নেমে এসেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ কুমিল্লা হতে পাক বাহিনী রওয়ানা দিয়েছিল চট্টগ্রামে। সেখানে ১৩২ জন ই. বি. আর এবং ই. পি. আর বাঙালী সেনারা ১৫২ জন পাক বাহিনীকে হত্যা করেছিল এবং এটিই ছিল স্বাধীন বাংলার প্রথম বিজয়।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা দিবস আমাদের জয়দীপ্ত গর্বের নিদর্শন। সেই স্বাধীনতা দিবস আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে; নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালী সেদিন ঘুমন্ত ছিল। কিন্তু সেই ঘুমন্ত বাঙালীর হাতেও সিদিন স্টেনগান উঠে এসেছিল, তারা লড়াই করে গিয়েছেন। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ২৩ বছরের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাসের অবসান ঘটিয়ে ছিলাম। বাংলাদেশ আমাদের সকলের প্রিয় মাতৃভূমি। এই মাতৃভূমিকে আমাদের পবিত্র রাখতে হবে। আমাদের পূর্ব পুরুষ আমাদের কাছে শ্যামল সুন্দর দেশ রেখে গেছেন সেই দেশের রক্ষা করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। তাইতো আমাদের সকলের জীবনের মূলমন্ত্র “মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি”। আমাদের এই মুক্তির স্বাদ গ্রহন করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ এনে দিয়েছেন সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’
লেখক : প্রফেসর, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও সভাপতি, শিক্ষক সমিতি,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।