বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতিমধ্যে অনিয়মের তথ্য পেতে চমেক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিঠি দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়া বিষয়টির পেছনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমানের ইন্ধন রয়েছে বলে উল্টো অভিযোগের আঙুল তুলছেন। ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য রাজনীতিতে ফয়সালের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।
গতকাল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা অনুসন্ধানে পরিষ্কার হয়ে যাবে। অভিযোগে যেখানে ১০৬ একর জমির কথা বলা হয়েছে, সেখানে আমাদের মাত্র ৬ একর পৈতিৃক জমি রয়েছে। আমার বাপ-দাদারা জমিদার ছিলেন ওখানকার। যেখানে আমি খামার ও আম বাগান করেছি। সিটি কর্পোরেশন থেকে যে প্লটটি দেওয়া হয়েছে, সেটা পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমি নিয়মমাফিক কিনেছি। তাছাড়া বাকলিয়ায় আমার পৈতিৃক অর্ধনির্মিত দালান ছিল। ১৯৮৬ সালে আমার পিতা জায়গাটি কিনেছেন। ওই জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগও আমার পিতার নামে। আমার তিন বোন, আমি একমাত্র ভাই। আমরা এখন ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ওখানে বিল্ডিং করেছি।’
ডা. মিনহাজের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, ‘বিএমএ নির্বাচনে সে (মিনহাজ) আমার কাছে ১৪শ ভোটে হেরেছে। সে ম্যাঙের বিপরীতে তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছে। চট্টগ্রাম শহরে কোন ডাক্তার তিন হাজার বর্গফুটের বাসায় থাকে কী না বলা দুষ্কর। তাছাড়া সেবা ডায়ানষ্টিক সেন্টার, প্রিমিয়ার হসপিটাল ও প্রিমিয়ার বেবি কেয়ার হাসপাতালের মধ্যে সেবার পরিচালকও আমি ছিলাম। প্রিমিয়ারে আমি এক লক্ষ টাকা দিয়ে আবার নিয়ে নিয়েছি। সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ছিল মেডিকেলের স্টাফদের। ওকে (ডা. মিনহাজ) নিয়েছিল ওখানে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য। পরে ওটা সে (মিনহাজ) দখল করে কাউকে (শেয়ারহোল্ডার) ওখানে (সেবা) ঢুকতে দেয় না। আজকে ১৫-২০ বছর ধরে সে দখল করে আছে। কাউকে চার আনা পয়সা লাভও দেয়নি। প্রিমিয়ার হসপিটালে ডাক্তারদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে শেয়ার নিয়েছে। কোন ডাক্তারকে সে ওখানে ঢুকতে দেয় না। সে কোন বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মিটিং ডাকে না। সে (মিনহাজ) একাই সব।’
তিনি বলেন, ‘আগ্রাবাদ এঙেস রোডের সাউথ পয়েন্ট হসপিটাল। ওখানেও আমার শেয়ার ছিল। ওখানে আমারটা (শেয়ার) আমি নিয়ে বের হয়ে গেছি। ওখানে সে (মিনহাজ) আমাকে ২৫ হাজার টাকা লাভও দিয়েছিল। ওখানে সব ডাক্তারদের কিছু দেয় না। তবে ওখানে একজন শেয়ারহোল্ডার আছে শিবিরের এইট মার্ডারের আসামি ইলিয়াছ। ওখানে সে (ইলিয়াছ) ওষুধের দোকান চালায়।’
প্রিমিয়ার বেবি কেয়ারের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়ার বেবি কেয়ারটা সে মেডিকেলের সামনে চালায়। ওর বউ হচ্ছে শিশু রোগের সহকারী অধ্যাপক। মেডিকেল কলেজের ৩২নং ওয়ার্ড থেকে রোগী সব ভাগিয়ে তাঁর বেবি কেয়ারে নিয়ে আসে। কারো ছোট বাচ্চার এনআইসিইউ বেড লাগলে মেডিকেল থেকে বলে দেয় প্রিমিয়ার বেবি কেয়ারে নেওয়ার জন্য।’
আ ম ম মিনহাজুর রহমানের বক্তব্য : এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ডা. ফয়সালের বিরুদ্ধে আমি কোন অভিযোগ করিনি। ওর অভিযোগের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’ ডা. ফয়সালের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি, সেটা আমার নিজস্ব ফ্ল্যাট। ২০১৪ সালে আমি ওই ফ্ল্যাটে উঠেছি। ওই ফ্ল্যাট নিয়ে এখনো আমার ৯০ লক্ষ টাকা ব্যাংক লোন আছে। মাসে মাসে কিস্তিতে পরিশোধ করি।’
সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রিমিয়ার হাসপাতাল ও সাউথ পয়েন্ট হাসপাতাল থেকে শেয়ার হোল্ডারদের বঞ্চিত করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, সেবার একটি শেয়ারের মূল্য হলো দেড় লাখ টাকা। সাউথ পয়েন্টের একটি শেয়ারের দাম হলো এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। আরো পরিচালক যাঁরা আছেন, তাদের তালিকা দিয়ে দেবো। তাদের সাথে আপনি (প্রতিবেদক) কথা বলবেন। তাঁরা আসে কি না, বসে কি না। আর এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দিতে পারবো না, এটা কি হয়। তবে এইট মার্ডারের যার কথা বলা হয়েছে সে আগেই মারা গেছে।’
প্রিমিয়ার বেবি কেয়ার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ৩২নং ওয়ার্ড হচ্ছে বাচ্চাদের (নিউ নেটাল) ওয়ার্ড। আমার স্ত্রী নিউ নেটালে কোন ডিউটি করে না। নিউ নেটাল ওর (স্ত্রীর) আয়ত্বের মধ্যে না। ট্রেনিং পিরিয়ডের পরে ওই ওয়ার্ডে তাঁর কোন দায়িত্বও নেই। ও আরপি (বহির্বিভাগ) হিসেবে ছিলেন ৫ বছরের অধিককাল সময়। ওই সময়ে আমাদের প্রিমিয়ার হসপিটাল ছিল। ওখান থেকে আলাদা ইউনিট (বেবি কেয়ার) করেছি বাচ্চাদের জন্য। এজন্য প্রথমে ২৮ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছি। ওই ঋণ পরিশোধ করে আবারো দুটি মেশিন কিনেছি। এইভাবে আস্তে আস্তে করে চার বছরে কিন্তিুতে ঋণ পরিশোধ করে এটি চালাচ্ছি।’