বৃহস্পতিবার ছিল পহেলা আষাঢ়। বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। আষাঢ়ের প্রথম দিনের সকালে গ্রাম–নগর–বন্দর ভিজছে স্বস্তির বৃষ্টিতে। দীর্ঘ কয়েকদিনের তাপতাহের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষার প্রতীক্ষায় ছিলো সকলে। তাদের মন রাঙাতেই যেন বর্ষা হাজির তারা বৃষ্টির ঝাঁপি নিয়ে। তখন হয়তো কোনো কবির সুরে গুনগুনিয়ে প্রেমিক–প্রেমিকা গেয়ে উঠবে, ‘বাদল–দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/এই–যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।’ ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে বর্ষাকালের মেয়াদ আষাঢ়–শ্রাবণ। তবে বৃষ্টির মুখরতা চলে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত। বর্ষা যেন আমাদের প্রকৃতিকে আপন মনে বিলিয়ে দেয় এবং এর ফুলের সৌন্দর্য আমাদের করে তোলে বিমোহিত। বর্ষার যে ফুলগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে তা হলো : কদম, বেলি, টগর, হাস্নাহেনা, বকুল, শাপলা, পদ্ম, দোলনচাঁপা, কেয়া, কামিনী, রঙ্গন, দোপাটি, কলাবতী, সন্ধ্যামালতি, সোনাপাতি (চন্দ্রপ্রভা), বনতলসী, কলমিসহ আরো নাম না জানা কত ফুল। বর্ষা ঋতু যেন ফুলের জননী। আর এভাবেই গ্রীস্মের প্রচণ্ড তাপদাহে মলিন হয়ে যাওয়া প্রকৃতিকে যৌবনাবতী করে তুলে বর্ষা ঋতু। হয়তোবা একারণেই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের কাছে বর্ষা এত প্রিয়। বর্ষা তাদের কাছে প্রেমের ঋতু, ভালোবাসার ঋতু। সবুজের সমারোহে সেজেছে প্রকৃতি। বৃষ্টি এলেই তাই নাগরিক মনে সাড়া পড়ে যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বর্ষার গান–ছবি। আর প্রেমিক মন গেয়ে ওঠে, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরষায়’। বর্ষা যেমন আনন্দের, তেমনি কষ্টেরও। বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। নদীর তীর উপচে কখনও বা ধেয়ে আসে বন্যা। তারপরও গ্রীস্মের তাপদাহ এড়িয়ে বর্ষায় বারিধারায় শান্তি খুঁজে পায় বাঙলার মানুষ। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতন পলীর আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। তাই বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু।












