স্বস্তির বৃষ্টি, সাথে দুর্ভোগ

নিম্নাঞ্চলে জলজট, কয়েকটি স্থানে কাটা হলো বাঁধা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ জুন, ২০২১ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে প্রত্যাশার বৃষ্টি। বৃষ্টিতে মিলেছে কিছুটা স্বস্তি। তবে এই বৃষ্টি নগরবাসীর দুর্ভোগ ও জনভোগান্তিরও কারণ হয়ে উঠেছে। নিম্নাঞ্চলে জলজট এবং তুলানমূলক উঁচু জায়গার ভাঙা স্থান ও সড়কে কাদা এই দুর্ভোগের কারণ। ফলে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি গরমে অস্থির নগরবাসীর জন্য যেমন ছিল আশীর্বাদ তেমনি ছিল অভিশাপ। বৃষ্টিতে সরাইপাড়া, আগ্রাবাদসহ শহরের নিচু এলাকায় প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগ বাড়ে পথচারীর। এছাড়া সকালের বৃষ্টিতে অফিস ও কর্মস্থলমুখী লোকজনের ভোগান্তি ছিল বেশি।
অন্য সময়ে নগরের যেসব স্পটে দীর্ঘক্ষণ পানি আটকে থাকতে গতকাল সেখানে ছিল ব্যতিক্রম। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে গেছে পানি। অবশ্য বৃষ্টির গতি বৃদ্ধি পেলে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরের কয়েকটি খালে ইতোপূর্বে দেওয়া বাঁধের কিছুৃ অংশ কেটে দেওয়া হয়। এতে পানি দ্রুত নেমে যায় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর চারটি রেসপন্স টিমও সক্রিয় ছিল। তারা বিভিন্ন খালে আটকে যাওয়া ময়লা দ্রুত সরিয়ে নেয়। এর আগে মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টি হয়েছিল ঈদের দিন। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সেদিন শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬২ দশমিক ০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে গতকাল বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এ সময় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার, ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ মিলিমিটার, ১২ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮ মিলিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা রিয়াজুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে।
এদিকে গতকাল সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, ওয়াসা মোড়, দুই নম্বর গেট, ঝর্ণাপাড়া, খাতুনগঞ্জ, জিইসি মোড়, চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেট, জেলেপাড়া, মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেইন, ডিসি রোড, কাপাসগোলা, ঘাসিয়ার পাড়া, ফুলতলা, কেবি আমান আলী রোড ও রসুলবাগ, দক্ষিণ কাট্টলী ও কাতালগঞ্জসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। তবে কয়েকটি স্পট ছাড়া বাকি জায়গা থেকে পানি দ্রুত নেমে যায়। এছাড়া আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের কয়েকটি স্থানে কিছুক্ষণের জন্য পানি জমে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম জানান, ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের ঝর্ণাপাড়ায় পানি জমেছিল। রাস্তায় ছিল হাঁটু সমান পানি। অনেক দোকানপাট ও বাসায় পানি ঢুকে গেছে। আজব বাহার খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে জলাবদ্ধতা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ জানান, চকবাজার মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেইনে বিকেল সাড়ে চারটার দিকেও পানি জমেছিল। সামান্য বৃষ্টিতে চকবাজারে প্রায় হাঁটু সমান পানি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা বেগতিক হবে।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদীকে বলেন, সকাল থেকে প্রায় সবগুলো স্পটে ঘুরেছি। কোথাও পানি জমে থাকেনি। তিনি বলেন, আমাদের চারটি রেসপন্স টিম মাঠে ছিল। যেখানে পানি আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেখানে তাৎক্ষণিক পরিষ্কার করা হয়েছে। যেসব খালে বাঁধ ছিল সেখানে পাইপ দিয়ে পানি গেছে। তবে যেখানে সমস্যা হবে বলে মনে হয়েছে সেখানে বাঁধ খুলে দিয়েছি। চশমা খালে শিক্ষাবোর্ডের সামনে দুটি বাঁধ ছিল, সেটা কেটে দিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে খাল-নালায় বর্জ্য পেলেই ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধতিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ