মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছে চট্টগ্রাম। এতে কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরবাসী পেয়েছে স্বস্তি। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটা ছিল মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী জনিত বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও নগর এবং উপজেলায় দুর্ভোগও বয়ে এনেছে এ কালবৈশাখী। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া। বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এরপর রোদ উঠলেও বিকেল সাড়ে ৫টার পর আবারো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আকাশ। এসময় শুরু হয় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি।
এর আগে সকালে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির জন্য কর্মস্থলমুখী লোকজন বেকায়দায় পড়ে। কয়েক জায়গায় পানি জমে থাকায় দুর্ভোগ বাড়ে স্থানীয়দের। শহরের অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। সবমিলিয়ে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শহরের অনেক সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখা হয়। সেখানে এতদিন ছিল ধুলোবালি। বৃষ্টিতে তা রূপ নিয়েছে কাদায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাড়ইপাড়া হাজীরপুল এলাকায় পানি জমে ছিল দীর্ঘক্ষণ। পানি আটকে ছিল চান্দগাঁও নূরনগর এলাকায়ও। শেখ মুজিব রোডের চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত সড়কে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের জন্য সৃষ্ট গর্তে পানি জমেছিল। সেখানে কাদা-পানিতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্তও কাদায় একাকার ছিল। মেরিনার্স সড়ক, অঙিজেন থেকে মুরাদপুর সড়ক, অঙিজেন-কুয়াইশ সড়ক, কাজীর দেউড়ি থেকে জামালখানসহ বিভিন্ন সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সৃষ্ট গর্তজুড়ে ছিল পানি এবং কাদা।
কাদা ও পানিতে একাকার ছিল বিমানবন্দর সড়কও। ফ্লাইওভারের জন্য সড়কের ব্যারিস্টার কলেজ মোড়, ইপিজেড মোড়, ইপিজেড কাঁচা বাজার, বে-সিটি মেডিকেল সার্ভিস ও চৌধুরী মার্কেটের পূর্ব পাশে, বে-শপিং এর কোনায় ইপিজেডে প্রবেশ মুখে, সল্টগোলা থেকে ইপিজেডে যেতে নবনির্মিত সিডিএ মার্কেটের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ, লায়লা সিএনজি থেকে ঈসা খাঁ গেইট পর্যন্ত অংশের সড়কে ছোট-বড় গর্ত হয়ে আছে। সেখানেও পানি জমে ছিল।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন জানান, গতকাল সকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ নর্থ বা ১১৭ কিলোমিটার। এদিকে তীব্র এ হাওয়ায় অনেক জায়গায় বিশেষ করে উপজেলায় ভেঙে পড়েছে গাছ ও ডালপালা। ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে বসতঘরের উপর বড় একটি গাছ উপড়ে পড়ে। সেখানে চাপা পড়ে মারা যান গৃহবধূ রীনা আকতার। কালবৈশাখীর প্রভাবে কুমিরা থেকে সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একটি স্পিডবোট ডুবে প্রাণহানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি নৌযানও (বাল্কহেড) ডুবে যায়।
এদিকে কালবৈশাখীর প্রভাবে বাঁশখালীতেও গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। গতকাল বিকেল ৪টার দিকেও রাউজানর অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি। উপজেলার হলদিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল উদ্দীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, কালবৈশাখীর অজুহাতে ৭/৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন উপজেলায় বোরো আবাদ চলছে। তরমুজ-ভাঙিও রয়েছে মাঠজুড়ে। শিলা বৃষ্টি এবং ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় কালবৈশাখীর প্রভাবে এর তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারপরও মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে সংস্থাটি। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা, কালবৈশাখীর প্রভাবে নগরে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হারুন-অর-রশীদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১২-১৮ কিমি বেগে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৪৫-৬০ কিমি বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।