স্বস্তিতে কাটল রমজান, ঈদযাত্রাও ভালো

হাসান আকবর | শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ থাকলেও এবার পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক ছিল। বাজারে দুয়েকটি পণ্য ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম অনেকটাই স্থিতিশীল ছিল। রোজায় ১০০ টাকায় ৩/৪ কেজি পেঁয়াজ পাওয়া, কাঁচা মরিচ, বেগুন শসাসহ নানা সবজির কম দাম মানুষের কাছে বড় ধরনের স্বস্তির কারণ। গ্যাসবিদ্যুৎপানির তেমন বড় কোনো সংকট দেখা যায়নি।

ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে রোজা, শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। সেখানেও পুলিশ প্রশাসন এবং বিআরটিএর গণমুখী উদ্যোগে পরিস্থিতি গতকাল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে দেখা গেছে। এতে যাত্রীসাধারণ স্বস্তি অনুভব করছেন বলে জানালেন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও প্রশাসন বলছে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রমজানে ছোলা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, শসা, গাজর, লেবু, মাছ, মাংসসহ রোজাদারদের ব্যবহারের ফলে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যগুলো নিয়ে এবার কারসাজির কারণে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশংকা করা হচ্ছিল। রমজানের শুরুতে বাজারে তেল, চাল নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা চোখে পড়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের কঠোরতায় মাসজুড়ে তা নিয়ন্ত্রণে ছিল। সবজি ও পেঁয়াজের যোগান আর সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালে। মাংসের দাম কিছুটা চড়া থাকলেও স্থিতিশীল ছিল। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি, সামুদ্রিক মাছের দামও স্বাভাবিক ছিল। যা রোজায় মানুষকে স্বস্তিতে রেখেছিল। পণ্যমূল্যের পাশাপাশি রোজায় গ্যাসবিদ্যুৎপানির বড় সংকটের আশংকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এলএনজি আমদানি নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছিল। কিন্তু সবকিছু মিলে নগরীর কয়েকটি এলাকা পানি নিয়ে সংকটে পড়লেও গ্যাস এবং বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পানি সংকটের প্রধান কারণও ছিল সরবরাহ লাইন কেটে যাওয়া।

রমজানে গ্যাস সংকটের অভিযোগ আগের বছরগুলোর তুলনায় কম পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারের সময় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও তুলনামূলক ভালো ছিল। লোডশেডিং হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে, তবে তা খুব বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেনি। ইফতার, তারাবি এবং সেহেরিতে বিদ্যুতের তেমন সংকট হয়নি। সবকিছু মিলে রোজার দিনগুলো মোটামুটি ভালোয় কেটেছে মানুষের।

রোজার শেষ পর্যায়ে এসে মানুষের বড় উদ্বেগ থাকে বাড়ি যাওয়া নিয়ে। ঈদযাত্রায় যানজট, অতিরিক্ত ভাড়াসহ যাত্রী হয়রানি ও দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের ভোগান্তি থাকে। কিন্তু এবার ঈদযাত্রার শুরুতে পুলিশ এবং বিআরটিএ মাঠে নামে। প্রথম দিনেই শুরু করে অভিযান। নগরীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সাদা পোশাকে চলে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা। এতে বাড়তি ভাড়া হাতানোর চেষ্টা প্রথম দিনেই মাঠে মারা পড়ে। রেলওয়ের টিকেট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় টিকেট নিয়ে কালোবাজারি চলেনি বললেই চলে। বাস এবং ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। গতরাত পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের রমজান ও ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক ছিল। সাজ্জাদ উল্লাহ নামের একজন যাত্রী গতকাল এ কে খান মোড়ে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেছি, রাস্তায় কোনো বড় যানজট পাইনি। ঢাকামুখী যাত্রী কামরুল ইসলাম শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। আগের দামেই টিকেট পেয়েছি। ঈদের জন্য বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়নি। এটা অনেক স্বস্তির। পণ্য মূল্য সম্পর্কে একজন বলেন, বাজারে কিছু পণ্যের দাম কিছুটা বেশি ছিল। চালের দরও বেশি ছিল। তবে আগের মতো রোজাকে পুঁজি করে যে অস্বাভাবিক দাম হাতিয়ে নিতো তা এবার হয়নি। তিনি পুরো রোজায় ১১৫ টাকা ডজনে ডিম কিনেছেন বলে জানান। পেঁয়াজ নিয়েছেন ৩০ টাকায় কেজি। বেগুনের কেজি ছিল ৫০/৬০ টাকা। শসা গাজরসহ সব সবজির দামই কম ছিল।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, রোজায় মানুষ স্বস্তিতে রাখার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। সবার সহযোগিতায় আমাদের উদ্যোগ সফল হওয়ায় ভালো লাগছে। তিনি সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানান।

নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ স্বস্তিতে রোজা সম্পন্ন হওয়ায় মহান আল্লাহর শোকরানা আদায় করেন। তিনি বলেন, আমরা নগরবাসীকে স্বস্তিতে রাখবার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। পণ্যমূল্য নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং অবৈধ মজুতদারি যাতে কেউ করতে না পারেন সেদিকে সজাগ ছিলাম। নাড়ির টানে গ্রামে যাওয়া মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন তা নিয়েও আমরা কাজ করেছি। সিএমপির সকল সদস্যের নিরলস চেষ্টায় আমরা মানুষকে স্বস্তি দিতে পেরেছি, এটাই আমাদের শান্তি। তিনি সকলকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবধানে চলাচল বিশেষ করে গ্রামে শিশুদের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমিকম্পে মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা বিধ্বস্ত, নিহত ১৪৪
পরবর্তী নিবন্ধমিয়ানমারের ভূমিকম্পে কাঁপল চট্টগ্রাম