স্বল্প পুঁজিতে কম সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় পুদিনা চাষে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায় অনেকগুণ। আর এই বিষয়কে মাথায় রেখে সীতাকুণ্ডে বেড়েছে পুদিনার চাষ। সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে পুদিনার চাষে ব্যস্ত এখন কৃষকরা। বাড়ির পাশে খালি জমি, উঠানে ও পাহাড়ের ঢালুতে পুদিনা চাষ করা হচ্ছে। রমজানে বেশি দামে বিক্রির আশায় এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও। রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতার সামগ্রীর স্বাদ বাড়াতে পুদিনার বিশেষ চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। এছাড়া স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮ হেক্টর জমিতে শতাধিক কৃষক পুদিনা চাষ করেন। উপজেলার ভাটিয়ারী, কুমিরা, ছলিমপুর ও সোনাইছড়ি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে এবং পাহাড়ের ঢালু জায়গায় এই পুদিনার চাষ হয়।
সরেজমিনে মধ্যম সোনাইছড়ি, কেশবপুর, বাজার পাড়া, ইমাননগর, পূর্ব হাসনাবাদ, জাহানারাবাদ, অলিনগর ও উত্তর সলিমপুর এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড় সংলগ্ন বেলে–দোঁআশ মাটির জমিগুলোতে ব্যাপকহারে এই সুগন্ধি পাতার চাষ হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে চাষাবাদের অবশিষ্ট জায়গাগুলো পুদিনা পাতার কাণ্ড (ডাল) রোপণ করা হয়। মাটিগুলোকে হালকা উর্বর করে তাতে লাগানো হয় পুদিনার কাণ্ড। প্রথমদিকে এর খরচ কম লাগে কিন্তু পরবর্তী সময়ে এর পরিচর্যার জন্য ব্যয়টা একটু বেশি পড়ে। এক মাসের মধ্যে কচি পাতা ধরে এবং শাখা–প্রশাখা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে উঠে।
জানা যায়, উপজেলার ভাটিয়ারীর খাদেম পাড়ায় পুদিনার চাষ হয়েছে ব্যাপক। খাদেম পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ২০ বছর যাবত পুদিনার চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ১২০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন পুদিনার ক্ষেত।
স্থানীয় মোহাম্মদ জনি ৮০ শতক জায়গাতেই পুদিনার চাষ করেছেন। মোহাম্মদ সোলাইমান করেছেন ৪০ শতক জায়গায়। এই মৌসুমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাদের উৎপাদিত পুদিনার বাজারমূল্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা হবে বলে জানান তারা।
ভাটিয়ারীর খাদেমপাড়া এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে রিপনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ শতক জায়গায় পুদিনার চাষ করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি তিন লাখ টাকা আয় করতে পারেন বলে জানান।
পুদিনা চাষিরা জানান, পাঁচ গন্ডার একটি জমিতে লাগানো পুদিনা ৫০ হাজার টাকার চেয়েও বেশি বিক্রি করা যাবে। তবে ফলনের ওপর নির্ভর করে লাভের হিসাব। আর যে ক্ষেতের পরিচর্যা যত বেশি হয় সেই ক্ষেতের পুদিনা পাতা তত ভালো হয়।
ভাটিয়ারী পূর্ব হাসনাবাদ এলাকার মহিলা কৃষক ইয়াসমিন আক্তার ও বিউটি বেগম জানান, তাদের প্রচুর কষ্ট করতে হচ্ছে এই পুদিনা চাষে। বাজারে বিক্রির উপযুক্ত করতে সুস্থ কচি পাতার জন্য তিন–চার দিন পরপর ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হয়। তবে ক্ষেতে যদি পানি জমে তাহলে পুদিনা পাতা পচে যায়।
উত্তর সলিমপুরের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি পাঁচ একর জমিতে পুদিনা চাষ করেছেন। পুদিনা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসে না। প্রথমে কৃষক স্থানীয় কোনো খরিদ্দারের কাছে পুরো ক্ষেতের পাতা বিক্রি করে দেন। পরে ওই খরিদ্দার বেশি দামে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। পরে তা ছোট ছোট গোছা আকারে বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এ গোছায় এক থেকে পাঁচটি পাতাপূর্ণ কাণ্ড থাকে, যা তিন–চার টাকায় বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ (মামুন) বলেন, সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে সীতাকুণ্ডে কৃষি উৎপাদনের প্রসার হয়েছে ব্যাপক। এ এলাকায় পুদিনা পাতার পাশাপাশি শিম, টমেটো, শাক, ঝিঙে, করলা, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন শাক–সবজির উৎপাদনও বেড়েছে কয়েকগুণ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারিবুল্লাহ জানান, সরকারিভাবে পুদিনা চাষের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। তবে এ চাষে আগ্রহীদের পরামর্শ দেওয়া হয়। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, পরিবারের নারীরা পুদিনা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সীতাকুণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দেড়শ চাষি এখন পুদিনা চাষের সঙ্গে যুক্ত।