প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র জোয়ার ভাটার নদী হালদায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মা মাছ স্বল্প পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীতে ডিম সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে তীরে উঠে মৎস্যজীবীরা বলেছেন, কেউ কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে রাতে বৃষ্টি হলে নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে, এখন সেই আশায় আছেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীর মদুনাঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকা মইশকরম, রামদাশ হাট, আমতুয়া, নাপিতেরঘাট, আজিমের ঘাট পর্যন্ত শতাধিক নৌকায় ডিম সংগ্রহকারীদের নদীতে জাল পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। অধিকাংশ সংগ্রহকারীদের মতে জালে আটকে পড়া ডিমকে তারা নমুনা ডিম হিসেবে দেখছেন। তবে কেউ কেউ দাবি করেছেন তারা দুই থেকে তিন বালতি পর্যন্ত ডিম জালে উঠিয়েছেন। মইশকরম এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে নৌকা ভাসিয়ে ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আশু বড়ুয়া ও বালি রাম জলদাসের জালে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন বালতি ডিম আটকাতে দেখেছেন। দুপুরের দিকে আজিমের ঘাট এলাকায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩০টি নৌকায় ডিম সংগ্রহের আশায় জাল পেতে বসে আছেন সংগ্রহকারীরা। তাদের মধ্যে একজন সাধন জলদাস জানিয়েছেন, তিনি দেড় বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। এখানে অবস্থানকারী কেউ এর চেয়ে বেশি ডিম উঠাতে পারেননি।
নদীর পাড়ে মৎস্যজীবীদের সহায়তা দিতে অবস্থান করা পশ্চিম গুজরার চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেছেন, অন্যান্য বছর নিচের দিকে অর্থাৎ আমতুয়া, নাপিতের ঘাট থেকে শুরু করে আজিমের ঘাট, কাগতিয়া, গড়দুয়া পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ উৎসব দেখা যেত। এবার ব্যতিক্রম। এবার দেখা গেছে আজিমের ঘাট থেকে উপরের মদুনাঘাট পর্যন্ত ডিম সংগ্রহকারীদের তৎপরতা। কাগতিয়া, গড়দুয়া পয়েন্টে ডিম সংগ্রহের কোনো নৌকা এবার দেখা যাচ্ছে না।
হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে অবস্থান করে ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। তিনি আজাদীকে বলেন, সারাদিনে যেই মাত্রায় ডিম সংগ্রহ করা গেছে, সেই হিসেবে সেটিকে পূর্ণমাত্রায় ডিম দেয়া বলা যাবে না। বলা যায় নমুনা ডিমের চাইতে সামান্য কিছু বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাতে হয়ত পূর্ণমাত্রায় ডিম দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
বিডিনিউজ জানায়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নমুনা ডিমের পরিমাণ বেশ ভালো। ডিমও নিষিক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। তাই মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি হলে হয়ত পুরোদমে ডিম ছেড়ে দিতে পারে হালদার কার্প জাতীয় মা মাছ।
প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে হালদা নদীতে রুই–কাতল–মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মা মাছের আনাগোনা শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে। বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন মানুষ। পরে হ্যাচারিতে তা থেকে রেনু তৈরি হয়।
মঙ্গলবারের পরিস্থিতি জানিয়ে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, আমরা এখন আছি রামদাস মুন্সির হাট এলাকায়। জাল ও নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা সবাই প্রস্তুত। নদীতে পাহাড়ি ঢল আছে। নদীর নয়াহাট থেকে রামদাস মুন্সির হাট হয়ে মদুনাঘাট পর্যন্ত দেখেছি। সব পয়েন্টে ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছে। নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেশ ভালোভাবেই আছে।
শ্রীবাস চন্দ্র বলেন, যে নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তা নিষিক্ত ডিম। এই ডিম থেকে রেণু হবার ভালো সম্ভাবনা আছে। তাই অনেকে ডিম সংগ্রহের পর তা হ্যাচারিতে নিয়ে যাচ্ছেন। রাতভর আমরা নদীতে থাকব ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে। আজ রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে।