অবশেষে নগরীতে শুরু হচ্ছে ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট’ কার্যক্রম। প্রকল্পটির আওতায় স্বল্প ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন নগরবাসী। আজ বুধবার বিকালে রাজধানীতে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে গত ৩১ মে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসঙ্গে সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের একটি ড্রাফট জমা দিতে বলা হয়। চসিক ইতোমধ্যে তা জমাও দেয়। আজ চুক্তি স্বাক্ষর হলে অক্টোবর মাস থেকেই নগরে প্রকল্পটির আওতায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারবে চসিক। সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে আরবান হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামোগতভাবে নগরীতে পাঁচটি মাতৃসদন ও ৪৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে এসব স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে চসিকের অধীনে ছিল ২টি মাতৃসদন ও ৩৬টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দুই মেয়াদে এ প্রকল্প শেষ হয় ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তৃতীয় মেয়াদে ওই প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় চসিক। তবে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নতুন করে ওই প্রকল্পের আওতায় নগরীতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে প্রকল্পের চতুর্থ মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে চসিক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় সিটি কর্পোরেশনের তিনটি মাতৃসদন হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি চার্জ নেয়া হবে এক হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকা। এবং সিজারে খরচ (ওষুধসহ সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় মিলিয়ে) সেবাগ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে বর্তমানে নরমাল ডেলিভারিতে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা এবং সিজারে ৩০ হাজার টাকার বেশি নেয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় ১৫টি ওয়ার্ডে চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ১৬ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করতে পারবে নগরবাসী। পাশাপাশি মোট সেবাগ্রহীতার ৩০ শতাংশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে মাত্র পাঁচ টাকায় পরিবার পরিকল্পনা উপকরণ এবং বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সেবা দেয়া হবে। মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকায় মিলবে গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন সেবা, প্রসব–পরবর্তী সেবা, শিশুস্বাস্থ্য সেবা, কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সেব, পুষ্টি সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা। এছাড়া স্বল্পমূল্যে ৩৮ ধরনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকায় টাইফয়েড, ৪০ থেকে ৮০ টাকা ব্লাড সুগার নির্ণয়, ৬০ থেকে ৮০ টাকায় জন্ডিস, ৩০ থেকে ৪০ টাকায় প্রস্রাব এবং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় ইসিজি করা হবে। অথচ এসব পরীক্ষায় বেসরকারি ল্যাবে করতে হলে দ্বিগুণ–তিন গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজ (১ ও ৩) চসিক এবং বাকি একটি প্যাকেজ (২) এনজিওর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতি প্যাকেজে পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একটি মাতৃসদন হাসপতাল অন্তর্ভুক্ত। ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।
চসিকের প্যাকেজ দুটির আওতায় দুটি মাতৃসদন হচ্ছে মোহরা ওয়ার্ডের ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল ও দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল। প্যাকেজ–১ এর আওতাধীন ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে চান্দগাঁও, পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম ষোলশহর, শুলকবহর ও পূর্ব বাকলিয়া। প্যাকেজ–৩ এর আওতায় রয়েছে গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা। প্যাকেজ–২ এর আওতায় রয়েছে উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, পাহাড়তলী ও উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড।
আজ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর জন্য অনেক উপকার হবে। বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবায় এ প্রকল্পের সুফল মিলবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাও স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে।
চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, গরিব লোকজন এর সুফল পাবেন। একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বর্তমানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা কাজ করছেন। এখন তাদেরকে প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে তাদের বেতন–ভাতা বেড়ে যাবে। পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় তাদের বেতন হলে সিটি কর্পোরেশনের খরচ কমে যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট’ প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (সরকার ও এনজিও সমন্বয়ে বাস্তবায়িত) প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণচুক্তি, অনুদানচুক্তি ও প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। চসিক এ প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী এডিবি বাংলাদেশকে ১১২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে। এর মধ্যে ১১০ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে, বাকি দুই মিলিয়ন ডলার হচ্ছে অনুদান।