স্বর্ণের বারের তথ্য জানতেই বন্ধুকে খুন

কার চালক হত্যায় গ্রেপ্তার ২

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

প্রাইভেট কার চালক শাহ আলমের গাড়িতে বিভিন্ন সময় স্বর্ণের বার পাচার হতো। তা জানতেন তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শহিদুল ইসলাম কায়সার প্রকাশ বেলাল ও নুরুল আমিন প্রকাশ রনি। তারা বারবার জানতে চাইছিলেন স্বর্ণের বার কখন আসবে, কোথায় যাবে। শাহ আলম কিছু জানাননি। এ ক্ষোভ থেকে শাহ আলমকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অচেতন করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। এরপর বস্তাবন্দি লাশ ফেলে আসেন বাঁশখালীর সড়কে। গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন চৌমুহনী চাড়িয়া পাড়ার নিজ বাসা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলার অভিযান টিম তাদের গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুরো ঘটনা খুলে বলে। তাদের দেখানো মতে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও শাহ আলমের ব্যবহৃত কার।
২৬ অক্টোবর শাহ আলম বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি। শুক্রবার তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। বাঁশখালীর পুকুরিয়ার পুরাতনঘাট জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে শুক্রবার বস্তাবন্দি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে শাহ আলম (৫০) হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান আজাদীকে জানান, এরা তিনজনই আগ্রাবাদ বেপারি পাড়া এলাকার বাসিন্দা। শাহ আলম বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করতেন। এসব যাত্রীর মধ্যে যারা বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতেন, তাদের বিষয়ে তিনি ওই দুজনের সঙ্গে গল্প করেছিলেন। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ওই যাত্রীদের তথ্য পাওয়ার জন্য তারা শাহ আলমকে চাপ দিচ্ছিলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা তাকে হত্যা করার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
ঘটনার দিন শাহ আলম গাড়ির মালিক মো. বদরুজ্জামানকে কোর্ট বিল্ডিংয়ে নামিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ মীমাংসা করতে কর্ণফুলী থানার আহসানিয়া পাড়ায় বেলালের মালিকানাধীন রড, সিমেন্ট বিক্রয়ের অফিসে গেলে তাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নেশা জাতীয় ওষুধ মেশানো জুস খাইয়ে অচেতন করেন। পরে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে শাহ আলমকে খুন করেন। এরপর সহযোগী নুরুল আমিনের সহায়তায় তার লাশ বস্তাবন্দি করে বাঁশখালীর তৈলারদ্বীপ সড়কে ফেলে দেন। বেলাল ও নুরুল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর তৈলারদ্বীপের ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করা হয় এবং প্রিমিও এফ কারটি মুহুরিগঞ্জ হাইওয়ে থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে শাহ আলমের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার বর্ণনা দিতে গিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসআই শাহাদাত হোসেন বলেন, যেহেতু শাহ আলম গাড়িসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন সেহেতু শহর থেকে বের হওয়ার মুখে নতুন ব্রিজ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করি আমরা। দেখা যায় শাহ আলম যে গাড়ি চালাতেন, সেই গাড়িটি ২৬ ও ২৭ অক্টোবর মোট ৫ বার আসা-যাওয়া করেছে। এর মধ্যে ২৬ অক্টোবর গাড়িটির নম্বর প্লেট থাকলেও ২৭ অক্টোবর নম্বর প্লেট ছিল না। এতে সন্দেহ হয় আমাদের। ২৭ অক্টোবর ৫টা ২৮ মিনিটে গাড়িটি শহর থেকে বের হয়। আবার ওই দিন ৮টা ২৬ মিনিটে তৈলারদ্বীপ ব্রিজ পার হয়। ৮টা ৩৮ মিনিটে তৈলারদ্বীপ ব্রিজ দিয়ে শহরের দিকে আসে।
তিনি বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও কললিস্টের মাধ্যমে জানতে পারি, ২৭ অক্টোবর শাহ আলম গাড়িটি চালাননি। চালিয়েছেন শহিদুল ইসলাম কায়সার প্রকাশ বেলাল। ৩০ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে ডবলমুরিং থানা এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে বেলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। তার তথ্য মতে গ্রেপ্তার করা হয় নুরুল আমিনকে। পরে বেলালকে নিয়ে মরদেহ উদ্ধারের স্থানে গিয়ে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হাতুড়িটি উদ্ধার করা হয়। বেলালের রড, সিমেন্ট বিক্রয়ের দোকান থেকে শাহ আলমের স্যান্ডেল, রক্তাক্ত একটি বস্তা, ঘুমের ওষুধসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মহত্যাই করেন সালমান শাহ : আদালত
পরবর্তী নিবন্ধসজীব হত্যার তিন দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন