স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কখনো ধূসর হতে দেবেন না

রাউজান আর.আর.এ.সি ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের মিলনমেলায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, একসময় এদেশের সন্তানরা বেড়ে উঠতো ভয়ে ভয়ে। তাদের ঘুম পাড়ানো হতো ভয় দেখিয়ে। ছোট করে দেখা হতো তাদের সম্ভাবনাকে। সেসব দিন এখন অতীত। এখনকার ছেলেমেয়েদের বেড়ে উঠতে হবে জয় করার প্রত্যয় নিয়ে। তাদের ঘুমাতে যেতে হবে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন নিয়ে। এর জন্য মানসিকতাচিন্তাধারা একটু পাল্টাতে হবে। মনে রাখবেন, যারা বরেণ্যতারা আমার আপনার মতই মানুষ। তাদের সামর্থ্যও আমার, আপনার মতই। পার্থক্যটা হচ্ছে তাদের ফোকাসিং টা। তারা অন্যভাবে চিন্তা করতে পেরেছে। সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য পরিশ্রম করেছে। সফল হয়েছে। আমাদেরও তাই করতে হবে। সে জন্য কখনোই স্বপ্নও সম্ভাবনাকে ধূসর হতে দেবেন না। গতকাল বুধবার রাউজান আর.আর. .সি ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক এসব কথা বলেন। গতকাল রাতে নগরের নাসিরাবাদ কনভেনশন সেন্টারে এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাউজানের প্রাচীন এ স্কুলের প্রায় এক হাজার সাবেক শিক্ষার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। রাউজান স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মিলনমেলায় প্রত্যেকে একত্রিত হয়েছেন। প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশে বিদেশে নানা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। মিলনমেলায় অংশ নিতে অনেকে বিদেশ থেকে ছুটে আসেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত সাবেক শিক্ষার্থী। পুরনো মানুষদের পেয়ে গল্প জমিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককে। আলোচনা সভায় বক্তব্যে সবাই স্মৃতিচারণ করেন। প্রাচীন এই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের সরকারিবেসরকারি নানা জায়গায় যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন অনেকেই।

অনেকেই কর্মজীবন শেষ করে অবসরে গেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন আয়োজকরা। এরপর আলোচনায় স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীসহ রাউজান উপজেলার নানা গুণী ব্যক্তিত্ব বক্তব্য রাখেন। মিলনমেলায় অংশ নিতে আমেরিকা থেকে ছুটে আসেন সাবেক শিক্ষার্থী ফারুক। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আবেগে আপ্লুত হন তিনি। এছাড়া পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে পুরো সময়টা উপভোগ করেন অংশগ্রহণকারীরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আর.আর..সি. ইনস্টিটিউশন নিয়ে আমি সব সময়ই গর্ববোধ করি। এ প্রতিষ্ঠান রাউজানে। আমার বাড়ির পাশেই। তাই একে নিয়ে আমার অন্যরকম ভালোবাসা আছে, আলাদা আবেগ আছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রয়াসে এ প্রতিষ্ঠান আজ এ অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ। তিনি বলেন, এই আনন্দযজ্ঞে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে আরও একটি কারণে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমার বাবা মো. আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এ স্কুলের ছাত্র। গোল্ড মেডেল পেয়ে তিনি স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার তিনি। এ বছর বাবার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার ১০১ বছর পূর্তি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, এ স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী আজ সারাদেশে সুনাম ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সব পেশায় রয়েছে এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। মনে রাখতে হবে নিজের জন্য জীবন নয়, সমাজের জন্য জীবন। আমাদেরকে নিজেদের জন্য না বেঁচে সমাজের জন্য বাঁচতে হবে। এছাড়া মূলের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। বর্তমান প্রজন্মকে এটা খেয়াল রাখতে হবে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আ..ম ইয়াছির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সাবেক কৃতি শিক্ষকশিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া সফল সংগঠক এবং গর্বিত পিতা মাতাদের সম্মাননা জানানো হয়। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, চবির সাবেক শিক্ষক রনজিত কুমার চৌধুরী, চবির শিক্ষক প্রফেসর সুলতান আহমেদ, সাবেক শিক্ষার্থী

আবদুস সালাম এফসিএ ও চবির সাবেক শিক্ষক প্রফেসর রনজিত কুমার দে। স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র পালকে সম্মাননা জানানো হয়। পরে তিনি বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা পর্র্বের পরে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসালমান-আনিসুলদের রক্ষার চেষ্টাকারী পুলিশকে আইনের আওতায় আনা হবে : উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা