স্বপ্নে শুরু, মৃত্যুতে শেষ

বেনাপোলে দুর্ঘটনা, অক্সিজেন এলাকার চার বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু ।। আরেকজন গুরুতর আহত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনায় চার বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। শখের গরু ব্যবসাই তাদের জন্য কাল হলো। যশোরের বেনাপোলে প্রাইভেট কার ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই এলাকার পাঁচ বন্ধুর হতাহতের ঘটনায় বাক্‌রুদ্ধ এলাকাবাসী। এ ঘটনায় শোকের
ছায়া নেমে এসেছে নগরীর অঙিজেনের ওয়াজেদিয়া ও সন্নিহিত এলাকায়।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাছাম চৌধুরী সাদমান ও একাধিক টেইলারিং শপের শো-রুমের মালিক নঈম উদ্দীনের পরিবারে চলছে আহাজারি। অপর দুই বন্ধু সৈয়দ ও আলী নেওয়াজের পরিবারেও শুধু কান্না। মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীনের পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পার করছে প্রতিটা ক্ষণ। কত আশা, কত স্বপ্ন একেকজনকে ঘিরে। চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল সব।
পুলিশ, স্থানীয় সংবাদকর্মী ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অঙিজেনের ওয়াজেদিয়া এবং বটতলী এলাকার পাঁচ বন্ধু শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোহাম্মদ রাছাম চৌধুরী সাদমান, টেইলারিং শো-রুমের মালিক নঈম উদ্দীন, ব্যবসায়ী সৈয়দ, আলী নেওয়াজ ও সাহাবুদ্দীন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে তারা গরুর ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। আলোচনা করে ঠিক করেন যশোরের বেনাপোল থেকে গরু এনে অঙিজেন এলাকায় বিক্রি করা হবে। ঢাকার চেয়ে সরাসরি যশোর থেকে গরু আনতে পারলে ব্যবসা ভালো হবে।
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ আলী নেওয়াজের ভাগ্নে ও তাদের সবার বন্ধু রনির ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার নিয়ে পাঁচ বন্ধু যাত্রা করেন যশোর। রনির মামা আলী নেওয়াজ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গতকাল রোববার দুপুরে তারা যশোর থেকে বেনাপোলের দিকে যাচ্ছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ যশোর সদর উপজেলার যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নিমতলা ধোপাখোলা এলাকায় প্রাইভেট কারটির সাথে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেট কারটি পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে নিহত হন চালক আলী নেওয়াজ, তিন আরোহী সাদমান, নঈম ও সৈয়দ। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাছাম চৌধুরী সাদমান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল চৌধুরীর বড় ছেলে। সাদমান ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ভায়রার ছেলে। অঙিজেনের বটতলী এলাকায় তাদের বাড়ি। নানার বাড়ি ফটিকছড়িতে। তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স পাস করে চট্টগ্রাম আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছিলেন। নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও স্বপ্ন দেখতেন।
পিতা-মাতাকে নিয়ে দুই ভাই, এক বোনের গোছানো সংসার। পরিবারের বড় সন্তান সাদমানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কমতি ছিল না। বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। সাদমান পেশাদার ব্যবসায়ী নন। ব্যবসায়ী পিতার সন্তান। শখের গরু ব্যবসায় নামাটাই যেন কাল হলো তার। সাদমানের পিতা ইকবাল চৌধুরী গতকাল যশোর যাত্রা করেছেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাশ আনা হবে চট্টগ্রামে।
সাদমানকে ঘিরে দেখা একটি পরিবারের স্বপ্ন চোখের পলকে শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মানতে পারছেন না কেউ। ঘটনার পর থেকে সাদমানের মায়ের হুঁশ নেই। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন ভাই-বোন। আত্মীয় স্বজনও হাহাকার করছেন।
ওয়াজেদিয়া এলাকার জনপ্রিয় ব্যবসায়ী নঈম উদ্দীন। একাধিক টেইলারিং শো-রুম এবং কাপড়ের ব্যবসা করেন। রোজগার ভালোই। এক বছর বয়সী একমাত্র পুত্র রাফসান এবং স্ত্রী লুৎফা। সুন্দর, গোছানো সংসার। শখের বশে বন্ধুদের সাথে নেমেছিলেন গরুর ব্যবসায়। গতকাল লাশ হয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার কথা শোনার পর থেকে দুই বছর আগে নঈমের ঘরে বউ হয়ে আসা লুৎফা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
মোহাম্মদ আলী নেওয়াজ ভালো গাড়ি চালাতেন। গাড়ি চালানো পছন্দও করতেন। কিন্তু গতকাল বৃষ্টির মাঝে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাক তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে।
সৈয়দের জন্য কান্না থামছে না তার পরিবারে। সাহাবুদ্দীনকে নিয়েও চলছে মাতম। গুরুতর আহত সাহাবুদ্দীনকে নিয়ে চিকিৎসকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
যশোর পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করেছে। আটক করা হয়েছে ট্রাকের চালককে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাশগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হলে আজ সোমবার চট্টগ্রাম আনা হবে।
সাদমানের মৃত্যুতে বিএনপির শোক : মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল চৌধুরীর বড় ছেলে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক রাছাম চৌধুরী সাদমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেগম রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, বায়েজিদ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হরুন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মার্ট সিটি গড়তে ৩০ প্রকল্প
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে ঝরল ৫ প্রাণ