বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ধীরে ধীরে বিশ্বের কাছে ফুটে উঠছে একে একে সরকারের নেয়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে। এতে করে একদিকে বাড়ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অন্যদিকে সক্ষমতার জানান দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তথা আওয়ামীলীগ। সেই সক্ষমতার অনন্য নজির স্থাপন হলো বীর চট্টগ্রামের মাটিতে। গত ২৮ অক্টোবর পতেঙ্গায় উদ্বোধন করা হলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। যে টানেল ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ফর্মূলায় যুক্ত করেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা অংশকে। যেখানটায় রয়েছে বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা। ফলে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগেই দেশের ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে এই টানেলকে কেন্দ্র করে।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এক সময়ের সমৃদ্ধ এই নগরী যেন হারাতে বসেছিল তার বাণিজ্যিক তকমা, ম্লান হচ্ছিল তার আভিজাত্য। সেই ম্লান হওয়া আভিজাত্য ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রামকে ঘিরে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার সফল বাস্তবায়ন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল। টানেলটির উপকারভোগী শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত হবে এটি।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামকে ঘিরে নানামুখী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন চট্টগ্রামকে পিছিয়ে রেখে সমগ্র দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবেনা। তাইতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ফ্লাইওভার, বে–টার্মিনাল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও টানেল নির্মাণসহ বেশ কিছু বৃহৎ প্রকল্প তুলে ধরেছিলেন। টানা তিনবার বিপুল ভোটে জয়লাভ করে শেখ হাসিনা সরকার ধাপে ধাপে সেইসব প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায় আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছে। যদিও এই পথ পাড়ি দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য খুব বেশি সহজ ছিলনা। বিএনপি–জামাতের ষড়যন্ত্রে বারবার হোঁচট খেয়েও ইস্পাত দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে। তাইতো তাঁকে এক পলক দেখতে ও তাঁর বক্তব্য শুনতে অপেক্ষায় ছিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার জনতা। তিনিও নিরাশ করেননি। ২৮ অক্টোবর (শনিবার) টানেল উদ্বোধনের পরেই সেই টানেল দিয়ে পৌঁছান অপরপ্রান্তের আনোয়ারার জনসভায়। যেখানে হাজার হাজার মানুষের সামনে তিনি চট্টগ্রামকে নিয়ে তাঁর আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তুলে ধরেন বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপরেখা। ভোট চান দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায়।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নযজ্ঞে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পের পরেই টানেলকে ঘিরে ছিল ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। আমরা পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছি, চড়েছি মেট্রোরেলে এখন সময় নদীর তলদেশ পাড়ি দেবার। সত্যি বলতে আজ থেকে ১০–১৫ বছর আগেও এই বাংলাদেশের মানুষ কল্পনা করতে পারেনি নদীর তলদেশ দিয়ে সড়কপথ হবে। এক সময় যা আমাদের স্বপ্ন ছিল তা এখন বাস্তব। আর এই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাঁর স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই ভেবে যে, টানেলটির নামকরণ করা হয়েছে সেই স্বপ্নপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এখন হাজারও সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে টানেলটিকে ঘিরে। বন্দর সমপ্রসারণ, নতুন শিল্প কারখানা, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মাতারবাড়ী পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও টেকনাফ স্থল বন্দরকে যুক্ত করে বিশাল একটি অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়তে চলছে নানান তোরজোর। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেলের পাশাপাশি কঙবাজার পর্যন্ত শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার আরও একটি মেগা প্রকল্প। নিঃসন্দেহে এই প্রকল্পের উপকারভোগী হবে আমার কক্সবাজারের বাসিন্দাসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম।
লেখক : শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়