স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন কাল

সব প্রস্তুতি শেষ, দুই পাড়ে সাজ সাজ রব

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৪ জুন, ২০২২ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত মঙ্গলবার প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সেতুর সব কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে টেকিং ওভার সার্টিফিকেট দেয়। এরপর বুধবার ঠিকাদারের কাছ থেকে সেতুর দায়িত্ব বুঝে নেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, সেতুর সব কাজ শেষ, কিছু কিছু জায়গায় রঙ করা, সৌন্দর্যবর্ধনের মত কিছু কাজ শুধু বাকি রয়েছে, সেটা বৃহস্পতি-শুক্রবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। শনিবার বহু প্রত্যাশার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জের উজানি গ্রামের মাছ চাষী খলিলুর রহমান সোহেল আশায় আছেন পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকায় মাছ পাঠাবেন; প্রতি কেজি মাছে ১০ টাকা করে বেশি পাবেন। তার মতো দক্ষিণের জনপদের অগণিত মানুষ উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের বৃহত্তম এ সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন; যে সেতু বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ খুলছে।

প্রমত্তা পদ্মাকে জোড়া দেওয়া এ সেতু সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দূরত্বও ঘোচাবে। ফেরি পারাপার আর ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার দুর্ভোগের অবসান করবে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলের যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আনবে; ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে যা এ অঞ্চলের দিনবদলের যুগের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির বাঁক বদলেও ভূমিকা রাখবে দেশের বড় অংশের জনপদের এ উন্নয়ন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে পদ্মায় দাঁড়িয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেতু। ইতোমধ্যে সড়কে ১৩টি বাসের রুট ঠিক করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো দক্ষিণের জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে আগেই। বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সাড়ে তিন ঘণ্টায় বরিশালে যাওয়া যাবে, যেখানে লঞ্চে যেতে সারা রাত লাগে। সময় বাঁচবে বলে অনেকেই জরুরি কাজে নৌপথের বদলে সড়কপথে যেতে চাইবেন।

হানিফ পরিবহনের ঢাকা বরিশাল রুটের বাস চালক সালাহউদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে বরিশাল যেতে এখন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এরমধ্যে পাটুরিয়া পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ফেরি পার হতে এক ঘণ্টা এবং নদীর ওপর থেকে বরিশাল যেতে লাগে আরও সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। কোনো কারণে ফেরি পেতে দেরি হলে যাত্রার সময়ও বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল পর্যন্ত যেতে সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টার মত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কঙবাজার-সিলেট-রংপুর রুটে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বলে চিন্তায় আছেন বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা। এখন তারা দিন গুনছেন পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন রুটগুলোকে ঘিরে। পরিস্থিতি বুঝে নতুন বাস নামানোর অপেক্ষা করছেন। বিলাসবহুল বাস সার্ভিস গ্রিন লাইন ইতিমধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া জানিয়ে প্রচার শুরু করেছে। চট্টগ্রাম থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত দুটি বাস ১৬ জুন থেকে নামানো হয়েছে জানিয়ে ইউনিক কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হক বলেন, আরও দুটি বাস এই রুটে নামানো হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর সিলেট থেকে কুয়াকাটা দুটি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। আর ঢাকা থেকে বরিশাল রুট নিয়েও ভাবছেন তারা।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক তালুকদার সোহেল জানান, খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে সোহাগের ৫০টি বাস চলে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতের জন্য ১০টি বাস নির্ধারণ করেছেন তারা, যেগুলো খুলনা পর্যন্ত যাবে। সেতু চালু হওয়ার পর আমরা দেখব যাত্রীদের চাহিদা কেমন। চাহিদা বেশি হলে তখন বাসের সংখ্যাও হয়ত বাড়বে, যোগ করেন তিনি।

শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, খুলনা ও বরিশাল রুটে প্রায় একশটি গাড়ির চাহিদা থাকলেও শুরুতে সায়েদাবাদ থেকে ১০-১২টি বাস চালাবেন। ড্রিমলাইন পরিবহনের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি রুট হয়েছে। এই রুটে অনেক মানুষ যাতায়ত করবে বলে মনে হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিব। তাদের মতই একইরকম ভাবনার কথা জানালেন অন্য কোম্পানির বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিকায় ঢাকা পড়েছে এ এফ রহমান হলের নাম
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরার নির্দেশ