দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনে গত ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হলেও আশাহত দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো ট্রেনে করে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া–আসা করবে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো স্টপিজ না রাখায় শুরুতেই স্বপ্নের ট্রেনে চড়তে পারছে না দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। এমনকি লোকাল ট্রেনও চালু করা হয়নি এই লাইনে। অথচ বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হওয়ার খবরে শত শত মানুষ প্রতিদিন দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনে আসছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু যেতে না পেরে মনে দুঃখ নিয়েই ফিরে যাচ্ছে। ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপিজ প্রদানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইতিমধ্যে দোহাজারী পৌরসভার মেয়র মো. লোকমান হাকিম রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন।
জানা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত এবং আশান্বিত ছিলো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষই। কারণ দোহাজারী থেকে কঙবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পর তাদের স্বপ্ন যে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ স্বল্প খরচে নিরাপদে পর্যটন নগরী কঙবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আসা করতে পারবে। কিন্তু শুরুতেই আশাহত হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরুর ৩ দিন অতিবাহিত হলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ স্বপ্নের ট্রেনে করে কক্সবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারেনি। কবে যেতে পারবে তাও জানে না তারা। বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে ট্রেনে করে কক্সবাজার অথবা ঢাকা যেতে হলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকেই উঠতে হচ্ছে ট্রেনে।
দোহাজারী পৌরসভার মেয়র মো. লোকমান হাকিম জানান, আখেরি স্টেশন দোহাজারী থেকে পর্যটন নগরী বান্দরবানের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার, চন্দনাইশ সদরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার, সাতকানিয়ার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার, আনোয়ারার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাতকানিয়ার বাইতুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবি ট্রেনিং সেন্টারের দূরত্বও মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এ সকল স্থান থেকে দোহাজারী মধ্যবর্তী হওয়ায় যাতায়াতও অত্যন্ত সহজ ও সাশ্রয়ী। এছাড়া দোহাজারী ও আশপাশে রয়েছে সরকারি বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনে মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারবেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরু বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা ছিল বাণিজ্যিক রেল চলাচলের শুরু থেকেই দোহাজারী স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপিজ থাকবে। এখান থেকে সাধারণ মানুষ পর্যটন নগরী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া–আসা করবে। কিন্তু শুরুতেই আমরা দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ হতাশ। তিনি জানান, রেললাইন সম্প্রসারণের আগে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত যে কমিউটার ট্রেন চলাচল করতো অন্তত সেগুলো হলেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারতো রেলপথ মন্ত্রণালয়। সুবর্ণ ট্রেন যেমন কুমিল্লা, ভৈরব বিভিন্ন স্টেশনে স্টপিজ করে যাত্রী উঠা–নামা করে, ঠিক একইভাবে দোহাজারী পুরোনো রেলস্টেশন হিসেবে সুনাম ধরে রাখতে দোহাজারীতে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপিজ দিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
কঙবাজারে কর্মরত সাতকানিয়ার উত্তর কালিয়াইশ গ্রামের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই কঙবাজার যাচ্ছে স্বপ্নের ট্রেন। অথচ আমি যাওয়া–আসা করতে পারছি না কর্মস্থল কঙবাজারে। বিষয়টি ভীষণ বেদনাদায়ক।