বিশ্বকাপ থেকে আরো একটি নক্ষত্রের পতন ঘটল। নেইমারের পর এবার বিদায় নিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। জার্মানি, স্পেন, উরুগুয়ে, ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপকে বিদায় বলতে হলো পর্তুগালকে। আর আফ্রিকার দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়ল মরক্কো। বিশ্বকাপে কখনোই কোনো আফ্রিকান দেশ কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পার হতে পারেনি। ১৯৯০ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পেরেছিল ক্যামেরুন একবার। এর আগে বা পরে কেউই নক আউটের বেশি যেতে পারেনি। কিন্তু এবারে ইতিহাস রচনা করল মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে তারা জায়গা করে নিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। তাও
পর্তুগালের মত ইউরোপিয়ান পরাশক্তিকে বিদায় করে। অবশ্য তার আগে নক আউট পর্বে আরেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিদায় করেছিল মরক্কো। আফ্রিকান ফুটবলের কাছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের হারের নজির খুব বেশি নেই। মাঝে মধ্যে দু একটি অঘটন হয়তো ঘটেছে। কিন্তু এবারে মরক্কো ইউরোপের সেরা সব শক্তিকে পরাজিত করে একেবারে যোগ্য দল হিসেবে জায়গা করে নিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
মরক্কোর এমন সাফল্যে একজনের কথা উল্লেখ্য করতেই হয়– কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র তিন মাস আগে দায়িত্ব পান তিনি। আগের কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেওয়া জিয়াশকে ফিরিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি। ৪৭ বছর বয়সী কোচের হাত ধরেই একের পর এক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করে চলেছে মরক্কো। রেগরাগির কোচিংয়ে এখনও পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে হারেনি দলটি। এই আট ম্যাচে মরক্কোর গোলরক্ষক বোনো গোল হজম করেছে স্রেফ একটি, সেটিও বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে আত্মঘাতী। এটিই বলে দিচ্ছে, কতটা দুর্বার গতিতে ছুটছে তারা!
আগের পাঁচবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণে মরক্কোর সেরা সাফল্য ছিল সেই ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত। কিন্তু ষষ্টবারে এসে ইতিহাস মরক্কোর। গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১–০ গোলে পরাজিত করে শেষ চার নিশ্চিত করে মরক্কো। খেলার ৪২ মিনিটে দেওয়া গোল ধরে রেখেছিল শেষ পর্যন্ত। রোনালদো ছাড়া পর্তুগালের প্রথম একাদশ ছিল অনেকটাই আকর্যকর। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা গঞ্জালো রামোস ছিলেন ফ্লপ। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেও কাজের কাজ কিছু করতে পারেনি রোনালদো। বলা যায়, মরক্কোর রক্ষণ দুর্গ ভেদ করতে পারেনি তারা। ফলে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ থেকে আরো একবার হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হলো রোনালদোকে। অপূর্ণ থেকে গেল বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন।
ম্যাচের শুরুটা আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ দিয়ে। পর্তুগাল এবং মরক্কো দু’দলই সমান তালে লড়াই করার চেষ্টা করে। যদিও আক্রমণে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল। রোনালদোকে ছাড়া প্রথম একাদশ নিয়ে প্রথমার্ধে বেশ ভালই খেলছিল পর্তুগাল। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে এগিয়ে ছিল মরক্কো। প্রথমার্ধে প্রায় শতকার ৬৫ ভাগ বল দখলে ছিল পর্তুগালের। আর ৩৫ ভাগ দখলে ছিল মরক্কোর। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে মরক্কো বেশ ভালভাবেই।
খেলার ৪২ মিনিটের ঘটনা। মাঝ বৃত্তের সামনে থেকে বল দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যান আতিয়াত আল্লাহ। বাম প্রান্ত থেকে দারুণ এক ক্রস করেন আর সে ক্রসে লাফিয়ে হেড করেন এন নেসিরি। বল জড়ায় পর্তুগালের জালে। গোল খেয়ে হতবিহবল হয়ে পড়া পর্তুগাল সমতা ফেরাতে পারতো পরের মিনিটেই। কিন্তু তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলবার। দালতের ফ্লিক থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। মরক্কো গোলরক্ষক পরাস্থ হলেও বল ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক পর্তুগাল। এ অর্ধে মাঠে নামান রোদালদোকে। কিন্তু ভাগ্য বদলাচ্ছিল না। স্ট্রাইকাররা যেন পথ হারিয়ে বসেছিল। ৯০ মিনিটে সবচাইতে সহজ সুযোগটি নষ্ট করেন রোনালদো। ডি বঙের ভেতর থেকে তার শট রুখে দেন মরক্কো গোলরক্ষক। ৯২ মিনিটে দুই হলুদ কার্ডে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মরক্কোর চেদ্দিরা। তারপরও আক্রমণ থামেনি পর্তুগালের। পর্তুগাল শেষ সুযোগটা পেয়েছিল ৯৬ মিনিটে। কিন্তু পেপের হেড চলে যায় সাইডবার ঘেঁষে। আর তাতেই পর্তুগালের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। মরক্কো সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস রচনা করে।